অজিত আগারকারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটি শুভমান গিলকে ওয়ানডে দলের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতীয় ক্রিকেটে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলো রোহিত শর্মার অধিনায়কত্ব।
২০২৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পরই এই ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছিলেন তিনি, এখন শুধু মাত্র ৫০ ওভারের ক্রিকেটেই খেলবেন।
জয়ের হার
রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ভারত ৫৬টি ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে ৪২টিতেই জয় পেয়েছে, যেখানে একটি টাই এবং একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। তার অধীনে ভারতের জয়ের হার ৭৫ শতাংশ। ওয়ানডেতে কমপক্ষে ৫০টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করা ক্রিকেটারদের মধ্যে শুধুমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েডের (৭৬.২ শতাংশ) জয়ের হার তার চেয়ে বেশি। জয়ের হারের দিক থেকে রোহিত বিরাট কোহলি (৬৮.৪ শতাংশ) এবং এমএস ধোনির (৫৫ শতাংশ) থেকে অনেকটাই এগিয়ে, যা তাকে ভারতের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক বানিয়েছে।
বহুজাতিক টুর্নামেন্টে সাফল্যের হার
বড় টুর্নামেন্টে (৫ বা তার বেশি দল) রোহিতের সাফল্যের হার প্রায় ঈর্ষণীয়। তার নেতৃত্বে ভারত ২০১৮ এবং ২০২৩ সালে এশিয়া কাপ এবং ২০২৫ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে। শুধুমাত্র ২০২৩ বিশ্বকাপে শেষ মুহূর্তে এসে স্বপ্নভঙ্গ হয়। এই ধরনের টুর্নামেন্টে তিনি ২৭টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ২৪টিতেই জিতেছেন। তার জয়ের হার ৮৮.৮ শতাংশ, যা কমপক্ষে ২০টি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়কদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বিরল ডাবল অর্জনকারী ক্রিকেটার
ওয়ানডেতে অধিনায়ক হিসেবে কমপক্ষে ৫০টি ইনিংসে ব্যাট করা ক্রিকেটারদের মধ্যে মাত্র দুজন খেলোয়াড়ের গড় ৫০-এর বেশি এবং স্ট্রাইক রেট ১০০-এর উপরে। এই বিরল ডাবলের অধিকারী দুজন হলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স (গড় ৬৩.৯৪, স্ট্রাইক রেট ১১০.৪৮) এবং রোহিত শর্মা (গড় ৫২.২০, স্ট্রাইক রেট ১১১.৯৭)।
অধিনায়ক হিসেবে বিধ্বংসী রোহিত
খেলোয়াড় হিসেবে রোহিতের গড় ৪৭.৮৫ এবং স্ট্রাইক রেট ৮৮.৪২। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে তার পারফরম্যান্স আরও উন্নত হয়েছে। অধিনায়ক হিসেবে তার স্ট্রাইক রেট ২৩.৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ব্রেন্ডন ম্যাককালামের (১২০.১১) পরেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
রেকর্ডের পাতায় রোহিত
৫৯৭ রান: ২০২৩ বিশ্বকাপে রোহিতের করা ৫৯৭ রান কোনো একটি ওয়ানডে সিরিজ বা টুর্নামেন্টে অধিনায়কদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ ৬৮৬ রান করেছিলেন অজি গ্রেট গ্রেগ চ্যাপেল (১৯৮০/৮১ মৌসুমে)। তবে সেটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজ।
১২৮৮ রান: বহুজাতিক টুর্নামেন্টে অধিনায়ক হিসেবে রোহিতের মোট রান ১২৮৮, যা ষষ্ঠ সর্বোচ্চ। এই টুর্নামেন্টগুলোতে তার ব্যাটিং গড় (৫৬) সৌরভ গাঙ্গুলীর (৬১.৪২) পরেই দ্বিতীয় এবং স্ট্রাইক রেট (১০৯.৮০) সবার সেরা।
ডাবল সেঞ্চুরি: অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি করা মাত্র দুজন খেলোয়াড়ের একজন রোহিত। ২০১৭ সালে মোহালিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার অপরাজিত ২০৮ রানের ইনিংসটি এসেছিল অধিনায়ক হিসেবে মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচেই। অন্যজন বীরেন্দর শেবাগ। ২০১১ সালে ইন্দোরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৯ রান করেছিলেন ‘বীরু’।টানা ১০ জয়: ২০২৩ বিশ্বকাপে রোহিতের নেতৃত্বে ভারত টানা ১০টি ম্যাচ জিতেছিল। বিশ্বকাপে এর চেয়ে দীর্ঘ জয়ের রেকর্ড আছে শুধু রিকি পন্টিং (২৪) এবং এমএস ধোনির (১১)।
এশিয়া কাপের রাজা: ওয়ানডে এশিয়া কাপে রোহিত ভারতের সফলতম অধিনায়ক। তিনি ১১ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ৯টিতেই জিতেছেন, যা এমএস ধোনি (১৪ ম্যাচে ৯ জয়) এবং অর্জুনা রানাতুঙ্গার (১৩ ম্যাচে ৯ জয়) সমান। তার নেতৃত্বে ভারত ২০১৮ এবং ২০২৩, দুটি এশিয়া কাপেই চ্যাম্পিয়ন হয়।
এমএইচএম