ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

দেশ ভাগ হলেও ভাগ হয়নি ভাষা

উপজেলা করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৯
দেশ ভাগ হলেও ভাগ হয়নি ভাষা

ঈশ্বরদী (পাবনা): একই আকাশ, একই বাতাস, দু’বাংলার মানুষের ভাষাও এক। আমরা বাংলায় কথা বলি, তাই প্রাণের টানে বাংলায় ছুটে আসি। বাংলা ভাষার আকর্ষণ যে কতোটা আত্মিক ও প্রীতিময় হতে পারে তা বুঝিয়ে দিলো চরনিকেতন সাহিত্য সম্মেলন। দু’বাংলার কবিদের মিলনমেলা প্রমাণ করে দিলো দেশ ভাগ হলেও ভাগ হয়নি ভাষা। দু’দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি অটুট থাকবে।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) পাবনার ঈশ্বরদীর চরগড়গড়িতে তিন দিনব্যাপী ‘চরনিকেতন বৈশাখী উৎসব-১৪২৬’ ও বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে কথাগুলো বলছিলেন ওপার বাংলার আবৃত্তিকার অল ইন্ডিয়া রেডিও’র সংবাদ পাঠিকা স্বপ্না দে।   

ভৌগোলিক সীমারেখা ভুলে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির কথা ভেবেই কেবল ভাষার টানে দু’বাংলার কবি-সাহিত্যিকরা জড়ো হয়েছিলেন।

 

তার আগে শেষ দিনের শুরুতেই সাম্প্রতিক বাংলা কবিতা নিয়ে আলোচনা, ফাঁকে ফাঁকে দু’বাংলার কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠ চলতে থাকে। এ যেন বাঁধন হারা আবেগের কাছে একাকার হয়ে গিয়েছিলো এপার আর ওপার বাংলার কবিরা। পুরো চরনিকেতন কাব্যমঞ্চ ঘিরে থোকায় থোকায় জড়ো হয়েছিলো কবিরা।  

বিকেলে সম্মাননা পুরস্কার প্রদান শেষে কবি মজিদ মাহমুদের ৫৪তম জন্মদিনের কেক কাটেন অতিথিরা। হঠাৎ করেই যেন কবিতার মতো কবিদের ছন্দপতন ঘটে। শেষ হয় তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি। তার আগে ১৪-১৫ এপ্রিল (রোববার-সোমবার) চরনিকেতন কাব্যমঞ্চে নানা আয়োজন আর আড্ডায় মুখরিত ছিলো বাংলা সাহিত্য সম্মেলন কেন্দ্র।           
       
বিদায় লগ্নে কলকাতার কবি ড. সোমা ভদ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, কলকাতায় অধ্যাপনার সূত্রে বহু সেমিনার ও কর্মশালা করেছি। কিন্তু দু’বাংলার এমন মিলন আমি দেখিনি। আনন্দ ভাগ করলে বাড়ে- তাই সব আনন্দ আমি বিদায় বেলায় সবার সঙ্গে ভাগ করে দিয়ে গেলাম। দু’বাংলার মধ্যে কাঁটাতার থাকলেও মন পড়ে থাকবে বাংলাদেশে। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে যাচ্ছি। শেষ বেলায় বলে যাই, ‌‘যা কিছু শেখার, যাকে প্রণয়ে বিচ্ছেদে বেদনায় তাই শেখো, ভালো থেকো। ’

কলকাতার কবি গার্গী সেনগুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, শহর থেকে দূরে পদ্মারপাড়ের চরে সবুজের সমারোহে থেকে আমি মুগ্ধ। এই তিন দিন কবিতার সঙ্গে, গাছের সঙ্গে আমার যে সূচনা হলো, আমি আপ্লুত। বিদায় বেলায় বলছি, ‘ভালো থেকো, যে আছ যেখানে দূরে কাছে, ভালো থেকো। ’   

ওপার বাংলার কবি দীপক লাহিড়ী বিদায় লগ্নে বাংলানিউজকে বলেন, একটি আদর্শ আনন্দভবন হলো কবি মজিদ মাহমুদ। কবি শুধু প্রাবন্ধিক নন, তিনি মানব আদর্শের এক নিবির সত্তা। যার কর্মজীবনের সমগ্রতা ছড়িয়েছে মানব কল্যাণে। যাবার সময় এটুকু নিয়ে যাচ্ছি।            

বাংলাদেশের কবি কথা হাসনাত বাংলানিউজকে বলেন, এখানে না এলে ব-দ্বীপের কবি মজিদ মাহমুদ সম্পর্কে অনেক কিছু অজানা থাকতো। চলে যাচ্ছি, জয় হোক ব-দ্বীপের।  

এপার বাংলার কবি সেঁজুতি জাহান তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বাংলানিউজকে বলেন, কবি লেখক আর সংগঠকদের যে মিলনমেলা জুড়েছিলো। চরনিকেতনে আসতে পেরে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। গ্রামের বোরকাপড়া মেয়ে থেকে শুরু করে টিপ, শাড়ি পড়ে বসা কলকাতার দিদিদের বসে থাকতে দেখাটা দারুন লেগেছে।   

প্রযোজক ও পরিচালক আলী ইমাম তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বাংলানিউজকে বলেন, এটা একটি মেলবন্ধন। জীবনে জীবন যোগ করার। এখানে দু’বাংলার লেখকদের মধ্যে সম্প্রীতি ও ভাব বিনিময়ের যে সুযোগ হয়েছে, এটি খুব বড় প্রাপ্তি। যাবার বেলায় বলবো, ‘অমঙ্গলের বিরুদ্ধে শুভকর বোধ জাগ্রত হয়েছে। ’           

বাংলা ভাষার টানে বাঙালির বাধন হারা আবেগের কাছে মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল দু’বাংলার মানুষ। দু’বাংলার মানুষের এই মিলনমেলা দু’দেশের বন্ধুত্ব আরো সূদৃঢ় হবে। অন্তরের টানে বারবার ছুটে আসবে ওপার বাংলার কবি ও সাহিত্যিকরা, এমনই প্রত্যাশা করেন আয়োজকরা।  

বাংলাদেশ সময়: ০৫৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৯
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।