ঢাকা, সোমবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিল্প-সাহিত্য

বিলুপ্ত হতে বসেছে হাতে বইবাঁধাই শিল্প

নাজমুল হাসান, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৫৮, জানুয়ারি ১৫, ২০১৫
বিলুপ্ত হতে বসেছে হাতে বইবাঁধাই শিল্প

বইয়ের সঙ্গে বইবাঁধাই শিল্প অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। পুরান ঢাকার বাংলাবাজারে পা রাখলেই এ সত্যের প্রমাণ পাওয়া যায়।

১৯৪৭ থেকে ১৯৫০-এর মধ্যে বাংলাবাজারকে ঘিরে বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গড়ে ওঠে অনেক বই বাইন্ডিং অথবা বইবাঁধাই কারখানাও।

পুরান ঢাকায় হাতে বইবাঁধাই শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে হাজার মানুষ। কিন্তু কালের বিবর্তনে প্রযুক্তির ছোঁয়া এসেছে এ মাধ্যমেও। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে হাতে বইবাঁধাই শিল্পটি।

একতা বুক বাইডিংয়ের সত্ত্বাধিকারী রাজ্জাক মিয়া বলেন, ‘হাতে বই বাঁধাইয়ের সঙ্গে প্রায় আট থেকে দশ বছর ধরে জড়িত আমি। আগে বই বাঁধাইয়ের অনেক অর্ডার আসত, কিন্তু এখন আর তেমন আসে না। কারণ অনেক কারখানা বর্তমানে আধুনিক মেশিন ব্যবহার করে বই বাঁধাই করছে। তাই আমরা যারা এখনও হাতে বই বাঁধাই করি, আমাদের কাছে তেমন কাজের অর্ডার আসে না। ’

তিনি বলেন, ‘আগে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হতো, কিন্তু এখন প্রতি মাসে অন্তত  ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার লোকসান থাকি। কর্মচারীদের বেতন দিয়ে নিজের আর তেমন কিছুই থাকে না। ’

বলা বাহুল্য, হাতে বই বাঁধাইয়ের গ্রহণযোগ্যতা এখনই পুরোপুরি ফুরিয়ে যায় নি। আর তাই ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে যায় নি এই পেশা। তবে আধুনিক মেশিনের অটোমেটিক বাইন্ডিং ব্যবস্থার উত্তরোত্তর উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কতদিন টিকে থাকবে এই হাত বাঁধাই—তা সময়ই বলে দেবে।

হাতে বইবাঁধাই প্রসঙ্গে রাজ্জাক মিয়া আরও বলেন, ‘মেশিন বইয়ের মলাটগুলো আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেয় কিন্তু সেলাই করতে পারে না। যে কোনও সময় এ ধরনের মলাটের উঠে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু আমরা যারা হাতে বই বাঁধাই করি—মলাট লাগানোর আগে বইটিকে সেলাই করি। এরপর উপরে আঠা দিয়ে মলাট লাগাই। তাই সহজেই পৃষ্ঠা খুলে যাওয়ার বা মলাট উঠে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। ’

হাতে বই বাঁধাইয়ের আরেক কারখানা মনি বুক বাইন্ডিংয়ের সত্ত্বাধিকারী হাফিজ খান বলেন, ‘সারা বছর অল্প কিছু কাজ আসে আমাদের। হাতে বই বাঁধাইয়ের তেমন আর মার্কেট নাই। ফেব্রুয়ারি আসলে কিছু কাজ পাই, কিন্তু আগের মত তেমন মজুরিও দেয় না। আগে ২ থেকে ৫ ফর্মার বইয়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা পেতাম, এখন পাই ১০ থেকে ১৩ টাকা। ৬ থেকে ১০ ফর্মার কাজ করলে সাড়ে চৌদ্দ টাকা করে পাই। ’

তিনি বলেন, ‘এখন যাদের কাছে বই বাঁধাইয়ের মেশিন আছে তাদের ব্যবসা অনেক ভালো। কিন্তু ১০-১৫ লাখ টাকা খরচ করে এসব মেশিন কেনা তো আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তাই হয়ত আগামী ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে আমাদের এই হাতে বই বাঁধাই শিল্পের কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। ’

হাতে বইবাঁধাই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা যায় কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে, মেরু প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী সামিম আহমেদ বললেন, ‘নতুনকে মেনে নেওয়াই ভালো। আগে বই বাঁধাইয়ে আমাদের দু’তিন সপ্তাহ থেকে একমাসও সময় লেগে যেত। কিন্তু এখন আধুনিক মেশিন থাকার কারণে একই কাজ সর্বোচ্চ ৭ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। তাই আমরা কাজের অর্ডারও বেশি নিতে পারছি। ’



বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।