মিশরের শারম আল-শেখে অনুষ্ঠিত গাজা শান্তি সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের ভিড়ে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর উপস্থিতি অনেককেই অবাক করেছে। সোমবার লোহিত সাগরের এই রিসোর্ট শহরে মূলত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরই আশা করা হচ্ছিল।
ইনফান্তিনো জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে তাকে এই শান্তি সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই শান্তি প্রক্রিয়া যেন সফল হয় এবং সম্ভাব্য সর্বোত্তম পরিণতি লাভ করে, তা নিশ্চিত করতে ফিফা এখানে সাহায্য করতে, পাশে থাকতে এবং সম্ভাব্য সবকিছু করতে প্রস্তুত। ’
সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল-গাজা সংঘাত নিয়ে ফিফা সভাপতির সরব হওয়ার পরই এই আমন্ত্রণ এলো। গত সপ্তাহে তিনি নরওয়ে এবং ইতালিতে ইসরায়েলের দুটি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচের আগে স্টেডিয়ামে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের পরিকল্পনার পর, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির প্রচেষ্টায় ফুটবলকে সমর্থন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন।
গত শুক্রবার মার্কিন-মধ্যস্থতায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর, ইনফান্তিনো এই পরিকল্পনার প্রশংসা করেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার প্রচেষ্টার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকা ছিল একেবারে মৌলিক এবং অপরিহার্য। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ছাড়া এই শান্তি আসত না। ’
শারম আল-শেখে ফিফা সভাপতি মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে নতুন আশা তৈরিতে ফুটবলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উপর জোর দেন। সোমবারের শান্তি সম্মেলনের পর, যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গাজায় ফুটবল অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে ফিফার সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ইনফান্তিনো ঘোষণা করেন, ‘ফুটবলের ভূমিকা হলো সমর্থন করা, ঐক্যবদ্ধ করা এবং এই অঞ্চলে আশা জাগানো। গাজায়, ফিলিস্তিনে, আমরা অবশ্যই সমস্ত ফুটবল স্থাপনা পুনর্নির্মাণে সহায়তা করব। আমরা ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাথে মিলে দেশের প্রতিটি কোণায় ফুটবল ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করব। আমরা ফুটবল নিয়ে আসব, আমরা পিচ তৈরি করব, প্রশিক্ষক আনব, প্রতিযোগিতা আয়োজনে সাহায্য করব এবং ফিলিস্তিনে ফুটবল অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে সহায়তা করার জন্য একটি তহবিল চালু করব। ’
তিনি আরও যোগ করেন যে, ফিফা মিনি-পিচ এবং ‘ফিফা এরিনা’ দিয়ে অবদান রাখবে এবং এই প্রচেষ্টায় অন্যান্য অংশীদারদেরও যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানাবে। তার মতে, ‘ফুটবল শিশুদের মনে আশা জাগায়, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ’
২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচিত হওয়ার পর, ২০১৮ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে হোয়াইট হাউসে দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ হয়। এর আগেও তারা বিভিন্ন সম্মেলনে একসাথে যোগ দিয়েছেন; ২০২০ সালে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে তারা একই মঞ্চে ছিলেন। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, সেই সম্মেলনেই ইনফান্তিনো প্রথম ট্রাম্পকে ‘আমার মহান বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেন।
২০২১ সালের শুরুতে ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পরেও দুজনের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। তবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হওয়ার পর থেকে, বিশেষ করে এই বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের সময় থেকে, ইনফান্তিনোকে বারবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা গেছে। অতি সম্প্রতি, গত ২২শে আগস্ট, ইনফান্তিনোকে ওভাল অফিসে দেখা যায়, যেখানে তিনি ট্রাম্পকে বিশ্বকাপ ট্রফির একটি স্বর্ণের রেপ্লিকা উপহার দেন।
২০২৪ সালের শেষের দিকে, ইনফান্তিনো উত্তর আমেরিকা-ভিত্তিক বিশ্বকাপের কাজের জন্য ট্রাম্পের নিজ শহর মায়ামিতে চলে আসেন, যা ভবিষ্যতে দুই বন্ধুর যেকোনো যৌথ জনসমক্ষে উপস্থিতিকে আরও সহজ করে তুলেছে।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা
এমএইচএম