নারীদের ফুটবলের প্রসার ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ফিফা ঘোষণা করেছে যে, ২০৩১ সাল থেকে নারীদের বিশ্বকাপ ৩২ দলের পরিবর্তে ৪৮ দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে। এই সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে ফিফা কাউন্সিলের সভায়।
এই পরিবর্তনের ফলে ২০৩১ সালের আসর (যা সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে) থেকে নতুন ফরম্যাটে প্রতিযোগিতা আয়োজিত হবে। ১২টি গ্রুপ নিয়ে হবে প্রতিযোগিতা, এবং ম্যাচের সংখ্যা বাড়বে ৬৪ থেকে ১০৪-এ, যার ফলে টুর্নামেন্ট এক সপ্তাহ দীর্ঘ হবে।
ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো এই সিদ্ধান্তকে নারীদের ফুটবলের জন্য বড় পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমরা আরও অনেক দেশকে সুযোগ দিচ্ছি নারীদের ফুটবলের কাঠামো গড়ে তোলার জন্য। এটি বিশ্বব্যাপী নারীদের ফুটবলের বিকাশে গতি বজায় রাখবে। ”
সর্বশেষ ২০২৩ সালের নারীদের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে, যেখানে ইংল্যান্ড ফাইনালে হেরে গিয়েছিল স্পেনের কাছে।
১৯৯১ সালে নারীদের বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো হোম নেশন ট্রফি জিততে পারেনি।
‘বৈষম্য দূর না করলে টিকে থাকা সম্ভব নয়’ — ফিফপ্রো
বিশ্বকাপে দল সংখ্যা বাড়ানোর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ফুটবল খেলোয়াড়দের সংগঠন ফিফপ্রো (Fifpro), তবে তারা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
তারা বলেছে, “এটি নারীদের ফুটবলের বৈশ্বিক বিকাশকে প্রতিফলিত করে। তবে খেলোয়াড়দের সমর্থন তখনই আসবে, যখন সব অংশীজনকে যুক্ত করে পরিকল্পনা করা হবে। ”
ফিফপ্রো আরও জোর দিয়ে বলেছে, খেলোয়াড়দের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, এবং ফুটবলের নিচের স্তরগুলোর উন্নয়ন না হলে এই সম্প্রসারণ টেকসই হবে না।
আফগান নারীদের জন্য ‘শরণার্থী ফুটবল দল’ গঠনের অনুমোদন
আরেকটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তে ফিফা অনুমোদন দিয়েছে আফগান নারীদের একটি শরণার্থী ফুটবল দল গঠনের। এই দলে থাকবে বিদেশে আশ্রয় নেওয়া আফগান নারী ফুটবলাররা, যারা বর্তমানে তালেবান শাসনের কারণে নিজ দেশে খেলতে অক্ষম। ফিফা এই উদ্যোগকে আখ্যায়িত করেছে “একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ” হিসেবে।
এই দল প্রাথমিকভাবে এক বছরের পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নেবে, এরপর স্থায়ীভাবে চালু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে ২০১৮ সালের পর থেকে নারীদের কোনো আনুষ্ঠানিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি, এবং তালেবান শাসনে নারীদের খেলাধুলা কার্যত নিষিদ্ধ।
বর্ণবাদবিরোধী কঠোর ব্যবস্থা
ফিফা আরও ঘোষণা করেছে, বর্ণবাদ প্রতিরোধে শাস্তিমূলক বিধিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে বর্ণবাদমূলক আচরণের জন্য সর্বোচ্চ জরিমানা দাঁড়াবে ৪.৫১ মিলিয়ন পাউন্ড।
এছাড়া একটি তিন ধাপবিশিষ্ট নতুন বৈষম্যবিরোধী পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, যা সব কনফেডারেশনকে বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ করতে হবে।
এমএইচএম