ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

‘রাতে নির্বাচন হয় না, ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয়’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২২
‘রাতে নির্বাচন হয় না, ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয়’

ঢাকা: ‘রাতে তো নির্বাচন হয় না। নির্বাচন দিনের বেলায় হয়।

কিন্তু ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয় রাতের বেলায়। ’

সোমবার (১৮ এপ্রিল) নির্বাচন ভবনের সভা কক্ষে আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ. ই মামুন এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই এমন একটি নির্বাচন হোক, যেখানে বিএনপি ও আওয়ামীলীগ অংশ নেবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন আনা কমিশনের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে কিনা আমি জানি না। সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপ করার বিষয়টি আরপিও’তে নেই। আমরা জানি আপনাদের উদ্দেশ্য মহৎ এবং ভালো। আপনারা চান একটি ভালো নির্বাচন হোক। আপনারা চেষ্টা করবেন বিএনপি যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। সে রকম একটি আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ’

জ.ই. মামুন বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো নির্বাচন কমিশনই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। সবাই বলেছেন যারা পরাজিত হোন তারা নির্বাচনের সমালোচনা করেন। কিন্তু আপনারা অনেকেই বলেছেন রাতে নির্বাচন হয় না। আসলে রাতে নির্বাচন হয় না। রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয় ব্যালট পেপার দিয়ে। রাতের ভোটের বাক্স ভরে রাখা হয়েছিল। ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে পরের দিন। এগুলোই ঘটেছে বাংলাদেশে। আমরা এই কথাগুলো জেনেশুনেও বলি না, কারণ আমরা বলতে ভয় পাই, লিখতে ভয় পাই। ’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কতখানি তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এখন আমার স্বাধীনতা আর নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা যদি এক রকম হয় তাহলে আমাদেরকে এখানে ডাকার কোন মানে হয় না। আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশন আমার চাইতে স্বাধীন। নির্বাচন কমিশন যদি স্বাধীনভাবে কথা বলতে চায়, স্বাধীনভাবে কাজ করতে চায় তাহলে তাদের পক্ষে অনেক কিছু করা সম্ভব। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ যথেষ্ট। নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড শক্ত থাকলে সরকারের খুব বেশি কিছু করার ক্ষমতা থাকে না। আপনারা চাইলেই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবেন। বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের গণমাধ্যম আপনাদেরকে সহায়তা করবে। ’ 

এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক বলেন, ‘আজকে সংলাপে আমার সহকর্মী, বন্ধু, ভাইদের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছিল, আমি কোন পলিটিক্যাল প্রোগ্রামে আসলাম নাকি। এখানে বিএনপির বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামীলীগের বক্তব্য হচ্ছে। গণমাধ্যমেও এই ধরনের বিভক্তি আছে। আপনারা নিশ্চিয় সেটি আগের থেকে জানেন। এখন আরও ভালোভাবে জানতে পারবেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে বিভক্তি থাকবে, তবে আপনাদের মধ্যে যেন বিভক্তি না থাকে। ’ 

জ.ই. মামুন বলেন, ‘বিগত অনেকগুলো কমিশন আমরা দেখেছি নির্বাচন কমিশন আসলে এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক হয়ে উঠে। প্রধান নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রিক। সেটি কিন্তু নয়, সাংবিধানিকভাবে আপনারা পাঁচজনই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অথবা যেকোনো একজন কথা বলতে পারবেন। কিন্তু এটি যেন প্রধান নির্বাচন কমিশনের কমিশন না হয়। ’ 

বেলা সোয়া ১১টা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী সংলাপে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এতে অন্য চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংলাপে সাংবাদিকদের মধ্যে অংশ নেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজী খালিদী, এনটিভির বার্তা প্রধান জহিরুল আলম, জাগোনিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কে এম জিয়াউল হক, চ্যানেল আইয়ের প্রধান বার্তা সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান, আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিক রহমান, একুশে টিভির হেড অব নিউজ রাশেদ চৌধুরী, বাংলাভিশনের হেড অব নিউজ আব্দুল হাই সিদ্দিক, মাইটিভির হেড অব নিউজ শেখ নাজমুল হক সৈকত, সময় টিভির হেড অব নিউজ মুজতবা দানিশ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির চিফ নিউজ এডিটর আশিস সৈকত, মাছরাঙ্গা টিভির হেড অব নিউজ রেজোয়ানুল হক রাজা, একাত্তর টিভি প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন, দেশ টিভির চিফ নিউজ এডিটর বোরহানুল হক সম্রাট, নিউজ২৪-এর এক্সিকিউটিভ এডিটর রাহুল রাহা, বাংলা ট্রিবিউনের বার্তা প্রধান মাসুদ কামাল, ডিবিসি নিউজের সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম, গ্লোবাল টিভির এডিটর সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ, নাগরিক টিভির হেড অব নিউজ দীপ আজাদ, যমুনা টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ, স্পাইস টিভির এডিটরিয়াল হেড তুষার আব্দুল্লাহ।  

প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে ৬ এপ্রিল সংলাপে বসছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে তারা ইসিকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে ওঠে দলগুলোর আস্থা অর্জনের পরামর্শ দেন। এছাড়া নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের পরিবর্তে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ এবং বিভাগভিত্তিক একাধিক দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুপারিশও করেন তারা।  

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নিয়েই সংলাপে আয়োজন করে।

এর আগে, শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে দু’দফায় সংলাপ করেছে ইসি।

আমন্ত্রিতরা ইসির সঙ্গে বৈঠকে বসে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের সীমিত ব্যবহার, নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেদের অধীন আনা, দলগুলোর আস্থা অর্জনসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব দেন।  

নির্বাচন কমিশন এরপর নারী নেত্রীদের সঙ্গে বসতে পারে। সবশেষে বসবে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২২
ইইউডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।