ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

বৃহত্তর ময়মনসিংহে দুই জোটেই মনোনয়ন নিশ্চিত হেভিওয়েটদের

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৮
বৃহত্তর ময়মনসিংহে দুই জোটেই মনোনয়ন নিশ্চিত হেভিওয়েটদের বৃহত্তর ময়মনসিংহে দুই জোটেই মনোনয়ন নিশ্চিত হেভিওয়েটদের

ময়মনসিংহ: ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র জোটে তারা পরিচিত হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে। মনোনয়ন নিয়ে কমবেশি সবার মাঝে উৎকন্ঠা থাকলেও তাদের মাঝে মনোনয়ন হারানোর শঙ্কা নেই বললেই চলে! সব হিসাব-নিকাশেই বৃহত্তর ময়মনসিংহে নিজ নিজ জোটে তাদের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। ফলে বেশ নির্ভার তাদের অনুসারী দলীয় নেতা-কর্মী বা সমর্থকরা। 

সফল নারী নেতৃত্বের উদাহরণ মতিয়া চৌধুরী। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার পরীক্ষিত সৈনিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে।

‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবেই তিনি পরিচিত। ১৯৯৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব মেয়াদেই কৃষি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মতিয়া চৌধুরী।  

মতিয়া শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ি) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। শেরপুরের তিনটি আসনের মধ্যে শুধুমাত্র এই আসনটিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীতা নিশ্চিত।  

ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতায় সংসদ সদস্য হন জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ। আওয়ামী লীগের জাতীয় পার্টির জোট বহাল থাকায় এবারো রওশনই আসনটিতে জোটের প্রার্থী হচ্ছেন এমনটি প্রায় নিশ্চিত। স্থানীয় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও ভেতরে ভেতরে বিষয়টি মেনেই নিয়েছেন।  

মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ উপাজেলা নিয়ে গঠিত জামালপুর-২ আসনে দলের ভেতর অপ্রতিদ্বন্দ্বী বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। নিজের উদ্যোগে এই প্রতিমন্ত্রী প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প উপহার দিয়েছেন জামালপুরে। ফলে ভোটারদের ‘গুডবুকে’ রয়েছেন তিনি। এই আসনে তার বিপরীতে দলে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। ফলে তার মনোনয়ন শুধু ঘোষণার অপেক্ষায় বলেই মনে করেন দলটির নেতা-কর্মীরা।  

তারানা হালিম ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী এবং বর্তমানে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।  

জনপ্রিয় এই তারকা এবার টাঙ্গাইল-৬ (দেলদুয়ার-নাগরপুর) থেকে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আসনটিতে তিনিই দলের প্রার্থী হবেন এমনটি নিশ্চিত ধরা যায়।  

মধুপুর-ধনবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-১ আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসনটিকে আওয়ামী লীগের দুর্গে পরিণত করেছেন দলটির সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক।  

আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়াদে খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে এই দুই উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেন আব্দুর রাজ্জাক। টাঙ্গাইলে এখন তাকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির ‘অভিভাবক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।  

দিন কয়েক আগে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য হয়েছেন ড.রাজ্জাক। আবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সভাপতির দায়িত্বও দেয়া হয়েছে তাকে। সব বিষয়াদি বিবেচনা করে এই আসনটিতে তিনি বিকল্পহীন। ফলে তার মনোনয়ন নিশ্চিত বলেই মনে করা হয়।  

টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) ও টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসন থেকে দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। তিনি আবার ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’। ঐক্যফ্রন্ট জোটগতভাবে নির্বাচন করায় টাঙ্গাইল-৮ আসনে তাকে ছাড় দিলে কপাল পুড়তে পারে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খানের।  

এবারো জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের কাছে ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনটি দাবি করেছে। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম। সরকারি দলকে এবারো আসনটি ছাড়তে রাজি নয় জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা।  

ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসন থেকে বিএনপি’র সাবেক জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সভাপতি এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেনের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। তবে তাকে ঠেকাতে নানা কৌশল প্রয়োগ করছেন তার ছোট ভাই জাকির হোসেন ওরফে ক্লাসিক বাবলু।  

ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) থেকে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা: মাহাবুবুর রহমান লিটনের কোন বিকল্প না থাকায় তার মনোনয়নও প্রায় নিশ্চিত।  

টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসন এবং টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসন থেকে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু।  

টাঙ্গাইল-২ আসনে তার বড় ভাই একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী আব্দুস সালাম পিন্টু দলীয় মনোনয়ন পেলে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোটে দেখা যাবে তাকে।  

কিশোরগঞ্জ-১ (সদর) আসনে জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় তার রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এমনটি হলে আসনটিতে অভিজ্ঞতার বিচারে তার ছোট ভাই মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম মনোনয়ন পেতে পারেন। ৯৬’র আওয়ামী লীগ সরকারে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব ছিলেন সাফায়েতুল।  

বাবা দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও বড় ভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নির্বাচন পরিচালনা করারও অভিজ্ঞতা রয়েছে সাফায়েতুলের। এই হিসেবে পরিবারের অন্য সদস্যদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন তিনিই। যদিও সাফায়েতুল বলেছেন, নেত্রী ইচ্ছা প্রকাশ করলে তিনি নির্বাচন করবেন।  

হাওর বেষ্টিত অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৪ আসন। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির জ্যেষ্ঠ ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। আসনটি থেকে ৭ বার ভোটযুদ্ধে জয়ী হয়ে ইতিহাস গড়েছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।  

রাষ্ট্রপতির ছেড়ে দেওয়া আসনে প্রথমে উপ-নির্বাচন এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রেজওয়ান আহাম্মদ। এই সরকারের সময়ে হাওরে তিনি রেকর্ড উন্নয়ন উপহার দিয়েছেন।  

ভোটারদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলা এই রাজনীতিক গত দুই বছরে প্রায় ৫ শতাধিক জনসভা ও কর্মীসভায় যোগ দিয়ে নজির স্থাপন করেছেন। ২০১৬ সালের বন্যার পর ফসলহারা মানুষকে তিনি নানাভাবে সহায়তা করেন। রাষ্ট্রপতি বাবার সুনাম ও নিজের জনপ্রিয়তা এই দুই মাপকাঠিতেই শেষ পর্যন্ত তিনিই হবেন নৌকার মাঝি।  

কিশোরগঞ্জ-৬  (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসন থেকে বিসিবি’র সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দলীয় প্রার্থী এটা নিশ্চিত। তার বিপরীতে বিএনপিতেও একক প্রার্থী দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য শরীফুল আলম। নবম জাতীয় সংসদে জিল্লুর রহমানের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৪২০ ঘন্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৮ 
এমএএএম/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।