দীর্ঘ ৩৫ বছর পর উৎসবের আমেজে শুরু হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকেই ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ভোট দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
সকালে রাবির জুবেরি, ডিনস কমপ্লেক্স, রবীন্দ্র ভবন কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বহু বছর পর রাকসু নির্বাচন হচ্ছে। এই নির্বাচন আমাদের কাছে ঈদের মতো। এটা শুধু ভোট উৎসবের বিষয় নয়, এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবে, বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে রাকসু'র জন্য আমরা সেসব ছাত্রপ্রতিনিধি বেছে নেবো।
সকালে জুবেরি ভবনকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগে থেকেই সেখানে শিক্ষার্থীরা লাইনে দাঁড়িয়েছেন। এই কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হল ও শাহমখদুম হলের শিক্ষার্থীরা ভোট প্রদান করবেন। সকাল পৌনে ৯টায় ভোট কেন্দ্রের ভেতরে খালি স্বচ্ছ ব্যালট বক্সগুলো তালা মেরে সিলগালা করা হয়।
তখন সৈয়দ আমীর আলী হলের প্রোভোস্ট ও প্রিসাইডিং অফিসার মো. হারুনুর রশিদ বলেন বলেন, আমরা সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু করবো। তার আগে আমরা ব্যালট বাক্স সিলগালা, ব্যালট পেপার আনাসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। আমরা শিক্ষার্থীদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের ব্যালট দেবো এবং অমোছনীয় কালি দিয়ে আঙুলে রং করে দেবো। আমাদের এখানে ৪৪টি বুথ রয়েছে। আমাদের এই হলে ভোটার আছে এক হাজার ২৩৩ জন।
ডিনস কমপ্লেক্স কেন্দ্রে ভোট দেবেন মুন্নুজান হলের শিক্ষার্থীরা। সেখানে নারী শিক্ষার্থীদের দীর্ঘলাইন দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা যাতে মোবাইলফোন বা অন্য কোনো সরঞ্জাম সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য তাদের তল্লাশি করে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।
ওই কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়ানো ফার্মাসি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহরিন আক্তার মৌ বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন হচ্ছে। আমি খুবই ভাগ্যবান এই নির্বাচন আমি পেয়েছি। এটা আমার প্রথম ভোট। খবুই উৎসবের আমেজের মতো ভোটগ্রহণ চলছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের কাজলা ও বিনোদপুর গেইটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি রোভার স্কাউটের সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। তারা বৈধ আইডিকার্ড ছাড়া কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না।
এই নির্বাচনে ফলাফলে আগামী এক বছরের জন্য গঠিত হতে যাচ্ছে ২৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় সংসদ, ১৫ সদস্য করে ১৭টি হলের সংসদ। আর সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত করা হবে পাঁচজনকে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৭২ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে মাত্র ১৬ বার। তার মধ্যে ১০ বারই হয়েছে পাকিস্তান আমলে। স্বাধীন বাংলাদেশে ৫৫ বছরে সপ্তম বারের মতো রাকসু নির্বাচন হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। প্রথম দুইবার ভোট হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন (রাসু) নামে; বাকি ১৪ বার হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নামে।
এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫। আর পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন। রাকসুতে মোট পদ ২৩টি; মোট প্রার্থী ২৪৭। এর মধ্যে পুরুষ ২২২ জন এবং নারী প্রার্থী ২৫ জন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট হল ১৭টি। প্রত্যেক হল ছাত্র সংসদে ১৫টি করে মোট ২৫৫টি পদের বিপরীতে নির্বাচন করছেন ৬০১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ছেলেদের ১১টি হলের ৪৬০ জন প্রার্থী এবং ছয়টি নারী হলের প্রার্থী সংখ্যা ১৪১।
ওমএমআরে ফর্মের ব্যালটে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। ১৭টি কেন্দ্রে ১০২টি মেশিনে গণনা হবে ভোট। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা কামাল আকন্দ জানান, নয়টি ভবনে ভোট গ্রহণ শেষে সব ব্যালট বাক্স নেওয়া হবে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে। ফল জানাতে আনুমানিক ১৭ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতিটি ধাপে ফুলপ্রুফ নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নিয়েছি। নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতিটি কার্যক্রম সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার করা হবে। নির্বাচনের ফলাফল প্রস্তুত করার জন্য একটি অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ সদস্য নিয়ে গণনা ও ফলাফল প্রস্তুত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ওই সংবাদ সম্মেলনে ভোটে কারচুপির শঙ্কা রয়েছে কি না জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, ভোট কারচুপি রোধে আমরা শুধু অমোছনীয় কালির ওপর নির্ভর করছি না। আমরা একটি থ্রি-ডি লেভেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমরা শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ডের সত্যতা যাচাই করবো। শুধু আইডি কার্ড হলেই হবে না, শিক্ষার্থীদের ভোটার আইডির জন্য একটি ইউনিক আইডি দেওয়া হয়েছে, সেটি যাচাই করবো। তারপর তার ছবিযুক্ত ভোটার আইডির ছবির সঙ্গে মিলিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত হবো। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার বিষয়ে কোনো ধরনের সন্দেহ তৈরি হলে আমাদের এটি বিশেষ গোপনীয় কিউআর কোড আছে। সেটি যাচাই করবো। এটিকে আমরা নাম দিয়েছি থ্রি-ডাইমেনশনাল সিকিউরিটি। এটিকে অগ্রাহ্য করে কোনো অবস্থাতেই ভোট জালিয়াতির কোনো সুযোগ নেই।
এমইউএম/এসসি/এএটি