সংকটে থাকা পাঁচ ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে দেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন প্রণীত ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫’-এর আওতায় এ পদক্ষেপকে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পুনর্গঠন উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মূলধন ঘাটতি ও সরকারি সহায়তা : একীভূত ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় প্রাথমিকভাবে প্রয়োজন হবে প্রায় ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা মূলধন। এর মধ্যে ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা সরবরাহ করবে সরকার, আর বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা আসবে প্রাতিষ্ঠানিক তহবিল ও আমানত রূপান্তরের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি ও খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। সরকার চাইছে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে একীভূতকরণের কার্যক্রম শেষ করতে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ভিত্তিক কর্মকৌশল চূড়ান্ত করে ডেপুটি গভর্নর মো. কবির আহম্মদের নেতৃত্বে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটিতে অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে। নতুন ব্যাংকের সম্ভাব্য নাম হতে পারে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, একীভূত ব্যাংকটি লাভজনক হওয়ার পর সরকারের শেয়ার ধাপে ধাপে বেসরকারি খাতে ছাড়বে। বড় অঙ্কের আমানতকারীদের শেয়ার কেনার প্রস্তাব দেওয়া হবে, তবে ছোট আমানতকারীরা চাইলে তাদের টাকা তুলতে পারবেন। একীভূত হওয়ার তালিকায় রয়েছে- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) ও এক্সিম ব্যাংক।
এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মতি দিয়েছে। তবে এক্সিম ব্যাংক ও এসআইবিএল ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আরও সময় চাইছে। এ বিষয়ে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন জানিয়েছেন, দুই বছর সময় পেলে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব। ইতোমধ্যে খেলাপি ঋণ আদায়ে কার্যক্রম শুরু করেছি। অন্যদিকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) উদ্যোক্তা শেয়ারধারীরা ব্যাংকটিকে অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না করার দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, এসআইবিএলের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার দায়িত্ব উদ্যোক্তা শেয়ারধারীদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসআইবিএলের উদ্যোক্তা শেয়ারধারী, সাধারণ বিনিয়োগকারী ও গ্রাহকরা এই দাবি জানান। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এসআইবিএলের প্রতিষ্ঠাকালীন উদ্যোক্তা পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হক। তিনি বলেন, এসআইবিএল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। কিন্তু ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ জোরপূর্বক ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ব্যাংকটি আর্থিক সংকটে পড়ে। গত রবিবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক এবং এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। ডেপুটি গভর্নর কবির আহম্মদ বলেন, একীভূতকরণই একমাত্র কার্যকর পথ। পাশাপাশি ব্যাংক কর্মীদের চাকরিও নিরাপদ থাকবে। গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও বিভিন্ন সভায় জোরালোভাবে বলেছেন, ব্যাংক একীভূত হবেই, এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। আমানতকারীদের অর্থ নিরাপদ থাকবে, সরকার এর দায়িত্ব নেবে।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন
এনডি