ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

করোনা ভাইরাস: তিন কারণে মৃত্যু কমছে চট্টগ্রামে

মিজানুর রহমান ও মিনার মিজান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২০
করোনা ভাইরাস: তিন কারণে মৃত্যু কমছে চট্টগ্রামে প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম: দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় প্রতিদিন প্রাণহানির খবর এলেও তা কমতে শুরু করেছে। অক্টোবর মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন মাত্র ৮ জন।

সর্বশেষ গত ১৩ দিনে কোনো মৃত্যু নেই।  

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন- রোগীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নতি এবং চিকিৎসার অধিক সুযোগ সৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমে এসেছে।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে ২১ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া আগস্ট মাসে ৩৭ জন, জুলাই মাসে ৫৮ জন, জুন মাসে ৯৮ জন, মে মাসে ৬৮ জন এবং এপ্রিল মাসে মৃত্যুবরণ করেন ৮ জন।  

গত ৯ এপ্রিল চট্টগ্রামে প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাতকানিয়ার এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এরপর চিকিৎসক, সরকারি কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ এখন পর্যন্ত মোট ৩০২ জন করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন।

করোনায় মৃত্যু কমে যাওয়ার বিষয়ে জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট এইচ এম হমিদুল্লাহ মেহেদি বাংলানিউজকে বলেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, চিকিৎসা পদ্ধতিতে চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধির কারণে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে।  

তিনি বলেন, প্রথমদিকে কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পেতো না। এখন হাসপাতালে আসন খালি থাকছে। করোনা চিকিৎসার সমস্যাগুলোর সমাধান হচ্ছে। এসব কারণেও মৃত্যুরে সংখ্যা কমে থাকতে পারে।  

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুশান্ত বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিলেন তারা প্রথম দিকে আক্রান্ত হয়েছেন। মানুষের মধ্যে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এসেছে। সচেতনতাও বেড়েছে। ফলে বর্তমানে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তার সহজেই সুস্থ হয়ে উঠছেন।  

‘এছাড়া করোনা চিকিৎসায় মেডিক্যাল সায়েন্সের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিভাবে চিকিৎসা দিতে হবে এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা বাড়ার কারণে মৃত্যু ঝুঁকি কমছে। ’

তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় পর্যায় শুরুর কথা বলছেন অনেকে। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায় বলতে গেলে প্রথম পর্যায়ের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। তাহলেই দ্বিতীয় পর্যায় বলা যাবে। আমাদের এখানে তো এখনও প্রতিদিনই নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।  

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) এর মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. মামুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, করোনা শুরুর প্রথম দিকে চিকিৎসা ব্যবস্থা কিছুটা অগোছালো ছিল। বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা এসেছে। সব হাসপাতালেই করোনার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ফলে কেউ করোনা আক্রান্ত হলেই চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে।  

তিনি বলেন, এখন যারা করোনা নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তারা রোগীর সমস্যাগুলো ভালোভাবে জেনে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। বর্তমানে করোনায় যারা মারা যাচ্ছেন তারা করোনার সঙ্গে অন্য কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত। করোনা শনাক্তের পর যদি রোগীরা তাড়াতাড়ি হাসপাতালের শরণাপন্ন হন তাহলে প্রাণহানির হাত থেকে রোগীকে বাঁচানো যায়। এসব কারণেই মৃত্যু সংখ্যা কমছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ মার্চ থেকে করোনা পরীক্ষা শুরু হয় চট্টগ্রামে। গত ৪ এপ্রিল চট্টগ্রামে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ৭৬৪ জন। এরমধ্যে নগরে ১৫ হাজার ১৮৩ জন। জেলায় ৫ হাজার ৫৮১ জন।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২০
এমএম/এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।