ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

৬ হাজারের বেশি নিলামযোগ্য কনটেইনার বন্দরে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৯
৬ হাজারের বেশি নিলামযোগ্য কনটেইনার বন্দরে! চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের স্তূপ জমছে। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম: বন্দরে আমদানি পণ্য বা কনটেইনার নামার ৪৫ দিনের মধ্যে নিলামে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাস্তবে এ প্রক্রিয়াটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে নিলামযোগ্য ৬ হাজারের বেশি কনটেইনারের জট তৈরি হয়েছে।

বিষয়টি দুদকের গণশুনানিতে তুলেছেন বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএএ) পরিচালক শাহেদ সরওয়ার। তিনি বন্দরের গেট পাসে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিষয়টি বাতিল বা সহজীকরণের দাবি জানান।

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বন্দরের শহীদ মুন্সী ফজলুর রহমান হলে দুদকের গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুদক কমিশনার (তদন্ত) এএফএম আমিনুল ইসলাম।

শাহেদ সরওয়ার বলেন, আমদানিকারক ৩০ দিনে ডেলিভারি না দিলে বন্দর কর্তৃপক্ষ কাস্টম হাউসকে হস্তান্তর করবে।

১৫ দিনের মধ্যে কাস্টম হাউস যদি আমদানিকারকের খোঁজ না পায় তবে নিলাম করে দেবে। নিলাম না হওয়ায় শিপিং সেক্টরে ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে বছরের পর বছর কনটেইনার পড়ে আছে। ৩-৪ বছর পর যখন কাস্টম নিলাম করে তখন কনটেইনারের ভেতর যে পণ্য থাকে তার মেয়াদ থাকে না। দুই মাসেও যদি কমার্শিয়ালি অকশন করা হয় তবে বন্দরের জন্যও ভালো। ২-৪ হাজার রেফার কনটেইনারে প্রচুর ফল, হিমায়িত খাবার ইত্যাদি আমদানি হয়। এ ধরনের কনটেইনারে বন্দর ইলেকট্রিক সংযোগ দিয়ে দেয়। আমি বৈদেশিক মুদ্রা, কমার্শিয়াল ভ্যালু হারালাম। ৩ বছরের বিদ্যুৎ বিল চাওয়া হয় ৩০ লাখ টাকা। আমি না পেয়েছি ভাড়া, বিদেশি প্রিন্সিপালের কাছে আমার ইমেজ নষ্ট হলো, কমার্শিয়াল ভ্যালু পেলাম না। আমার মনে হয়, কাস্টম ও বন্দরের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা রয়েছে।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, অকশনের ব্যাপারে আমি বলতে চাই, বন্দরে ৩০ হাজার কনটেইনার কেন? আমি তো চাই না বন্দরে এত কনটেইনার থাক। ১০ হাজার কনটেইনারের বয়স ১০ দিনেরও কম। বাকি কনটেইনারের বয়স ১১ দিন থেকে ১১০০ দিনেরও বেশি। এসব কনটেইনারে আনা পণ্যের জন্য আমরা কি পেমেন্ট করিনি? কোটি কোটি টাকা। হিসাব নেই। আমদানি পণ্যের কনটেইনার নিয়ে যাচ্ছে না আমদানিকারক। তিনি আমদানি করলেন কেন? নিয়ে যাচ্ছেন না কেন? ৩০-৪৫ দিনের অকশন নীতি অনুযায়ী ৬ হাজারের বেশি কনটেইনার কাস্টম হাউসকে হ্যান্ডওভার করে দিয়েছি। তারা নিলাম করছে। কিছু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এলসির পয়সা আমদানিকারক দেননি বলে তার গরজ কম। এলসির পয়সা দিয়েছে ব্যাংক। আমদানিকারক একটি মার্জিন দিয়েছেন ১০-১৫ শতাংশ। বন্দর কী পরিমাণ আয় হারাচ্ছে তার কোনো সীমা নেই। তিন-চার ডিজিট পেরিয়ে যাবে। নিলাম চলমান প্রক্রিয়া। বিদেশকে ফলো করা যায়। বিদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অকশনকে বেসরকারি উদ্যোগে দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এটি বন্দর বা কাস্টমসের অধীনে রাখার দরকার নেই।

রেফার কনটেইনারে বন্দর প্লাগ ইন করে রেখেছে বিল দেবে কে? আমি সব প্রিপেইড মিটার করে দেবো। বিদ্যুৎ বিল দিলে চলবে, নয়তো বন্ধ। তাহলে আমদানিকারকের ওপর চাপ তৈরি হবে।

বার্থিং মডিউল তৈরি হচ্ছে

বন্দর চেয়ারম্যান জানান, এটি হলে কোন জাহাজের পর কোন জাহাজ আসবে মোবাইল অ্যাপে জেনে যাবেন। যুগ যুগ ধরে যে সিস্টেম চলে আসছে তা থেকে বের করে আনতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। আপনারা সহজে বের হয়ে আসতে চাইছেন না। ট্রায়াল চলছে।

পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রসঙ্গে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সব করছি নিজেদের সুরক্ষার জন্য। নিজেদের ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বে উজ্জ্বল করার জন্য। ভোটার আইডি, পাসপোর্ট কপি দিয়ে অস্থায়ী গেট পাস নেওয়া যাবে। কিন্তু স্থায়ী পাসের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান থাকবে। আমি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বে উজ্জ্বল করতে চাই।

স্থায়ী গেট পাসে পুলিশ ভেরিফিকেশন 

বন্দরের পরিচালক (নিরাপত্তা) মেজর মো. রেজাউল হক জানান, এ পর্যন্ত ২০ হাজার লোকের পুলিশ ভেরিফিকেশন চেয়েছি, এর মধ্যে ১৯ হাজার রিপোর্ট চলে এসেছে। এর মধ্যে ৪৭৫ জন নন ভেরিফিকেটেড হয়েছে। পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট পেলে এসএমএস দিয়ে থাকি। স্থায়ী পাসে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক আইনে।

দুদকের ১৩৭তম গণশুনানিতে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. নুরুল আলম নিজামী সভাপতিত্ব করেন।

>> বন্দরে ঘুষ, অনিয়মসহ ৫২ অভিযোগ দুদকের শুনানিতে
>> দুর্নীতি প্রতিরোধে কঠোর হতে হবে: দুদক কমিশনার

বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৯
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।