বিজিসি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে রিট করে রাখার কারণে কলেজটির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তও নিতে পারছে না বিএমডিসি। ২০ অক্টোবর (রোববার) এ বিষয়ে হাইকোর্টে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
২০১৮ সালের অক্টোবরে বিএমডিসির রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত ১৮ পৃষ্ঠার একটি নথি বিজিসি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের কাছে পাঠানো হয়।
বিএমডিসির রেজিস্ট্রার ডা. মো. আরমান হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, ভর্তিতে জালিয়াতির বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিলে হাইকোর্টে রিট করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ফলে আমরা কলেজটির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি। ২০ অক্টোবর এ বিষয়ে কোর্টে শুনানি রয়েছে। কোর্টের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে কলেজটির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিজিসি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। কলেজটির দুর্নীতির বিষয়ে বিএমডিসি চিঠি দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনিয়মের তদন্ত করতে একটি কমিটিও গঠন করে। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু হাইকোর্টে রিট করার কারণে তদন্ত আর এগোয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে বলেন, বিজিসি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজের দুর্নীতির বিষয়টি বিএমডিসি দেখছে। এ ব্যাপারে তারাই সিদ্ধান্ত নেবে।
বিজিসি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. এসএম তারেকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
কলেজটির একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, ৬০ জন শিক্ষার্থীর বিষয়ে আমরা বিএমডিসিকে তথ্য দিয়েছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো কিছু অসম্ভব নয়। যে ৬০ জন শিক্ষার্থীর ভর্তির বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ এসেছে, তারা ডাক্তার হতে পারবেন।
বিএমডিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিজিসি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজে ২০১৩-১৪ সেশনে তৌহিদুল ইসলাম, সাফরিন আলম, মোহাম্মদ শায়ন সরোয়ার ভূঁইয়া, তানজিলা সুলতানা, মোহাম্মদ জাহেদুল আলম, তামান্না ফারহা লোহা, চৈতি চৌধুরী, আরাফাত আহমদ, মো. শাকিরুল ইসলাম সাজিব, সারফরাজ হাবিব, অমিত ধর, কানিজ ফাতেমা কেয়া নামে ১২ জন শিক্ষার্থীকে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি করানো হয়েছে।
২০১৪-১৫ সেশনে ভর্তি করা হয়েছে- সাইফুল ইসলাম আজিজ, তাইরিন সুলতানা, নাফিসা মাহজাবিন, নিপা চৌধুরী, মো. আতিকুর রহমান, মুসলিমা জান্নাত রিমা, মো. শাকিল চৌধুরী, দেবদ্যুতি ভট্টাচার্য, প্রজ্ঞা প্রিয়তা বড়ুয়া, নওশিন তাবাসসুম, মো. ইমরুল আলম, মুন্না চৌধুরী, সাহাব উদ্দিন আজাদ, সৌরভ দাশ, তানজিন জাহান, মো. আবু সালেহ, তিশা দত্ত, এইচ এম আহসান উদ্দিন চৌধুরী, মহিনুর বেগম, দেবশ্রী দত্ত অনি, সায়েদা সাদিয়া নিজামী, সারমিন আকতার রুপা, মো. নওশাদুল ইসলাম, মেহেরাজ আল আনিয়ান, শুভ দেবনাথ, নিশাত সুলতানা, জান্নাতুল নাঈম, নাদিয়া আফরিন, মো. হাসিবুর রহমান ভূঁইয়া, মারজান ইসলাম, মাইকেল বড়ুয়া, সুদিপ্ত নাথ প্রীতম, মো. জাবেদ হোসেন ভূঁইয়া, খন্দকার নুসরাত জাহান, মো. শরিফুল ইসলাম, রাজিয়া সুলতানা, ধ্রুব দে, শহীদ আরশিল আজিম ও রাহাত নিজাম খান নামে ৩৯ জন শিক্ষার্থীকে। ওই ৫১ শিক্ষার্থীর নাম ও আনুষঙ্গিক তথ্যে গরমিল আছে। এছাড়া ১৪-১৫ সেশনে ৯ জন শিক্ষার্থীকে নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি এমবিবিএস চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে আটকে যায় পাঁচ বছর আগে বিজিসি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হওয়া ও বিএমডিসির নিবন্ধন না থাকা পাঁচজনের ফল। তারা হলেন- তৌহিদুল ইসলাম, সাফরিন আলম, মোহাম্মদ শায়ন সরোয়ার ভূঁইয়া, তামান্না ফারহা লোপা ও আরাফাত আহমদ। এসব শিক্ষার্থীদের একেকজন ২০ লাখ থেকে ২২ লাখ টাকা দিয়ে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হয়েছিল।
আরও খবর>>
** জালিয়াতি করে ডাক্তার হওয়ার চেষ্টা!
** বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজের দুর্নীতি তদন্তে কমিটি
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৯
জেইউ/এসি/টিসি