রোগীর রক্ত লেগে থাকা স্যালাইন সেট, সিরিঞ্জ কুড়িয়ে নিচ্ছিলেন আজমল হোসেন। তিনি জানান, ৫-১২ টাকা কেজি দরে এসব জিনিস বিক্রি করেন।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার প্রতীক হিসেবে এ হাসপাতালের দু’টি ইনসিনারেটর মেশিন অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে। ময়লা-আবর্জনায় ভরা মেশিনঘরটির বন্ধ তালায়ও মরিচা পড়ে গেছে।
চমেক হাসপাতালের দায়িত্বশীলরা বাংলানিউজকে জানান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সেবা সংস্থাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেডিকেল বর্জ্য অপসারণে মাসে ৮০ হাজার টাকা দিলেও কাজের কাজ খুব বেশি হচ্ছে না। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় ৫-৬ ড্রাম বর্জ্য কাভার্ডভ্যানে তুলে নিয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। বাকি বর্জ্য অপসারণ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পরিচ্ছন্ন বিভাগ।
এক হাজার ৩১৩ শয্যার হাসপাতালটিতে প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি রোগী, ৬ হাজারের বেশি রোগীর স্বজন ও চিকিৎসক-সেবিকা-কর্মকর্তা-কর্মী মিলে ২০ হাজারের বেশি মানুষের ৭ টন বর্জ্য আসে খোলা ডাস্টবিনে। এর মধ্যে সংক্রামক, রাসায়নিক, তেজষ্ক্রিয়, প্যাথলজিক্যাল বর্জ্য, সিরিঞ্জ, ধারালো সরঞ্জাম ইত্যাদি ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্যও মিশে থাকে। এগুলো পানি, খাবার, মাটি, বাতাস, পশু-পাখির মাধ্যমে মানুষ ও পরিবেশের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক বি. জেনারেল মো. জালাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা মেডিকেল বর্জ্য নিরাপদে অপসারণে চট্টগ্রাম সেবা সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছি। তারা প্রতিদিন মেডিকেল বর্জ্যের ড্রাম নিয়ে যায়। তার পরও কিছু মেডিকেল বর্জ্য সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে- এটি অস্বীকারের উপায় নেই। এটি বিপুল সংখ্যক রোগী ও স্বজনদের অবহেলা বা গাফিলতির কারণেই ঘটছে। আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে সাধারণ বর্জ্যের জন্য কালো বিন, সংক্রামক বর্জ্যের জন্য হলুদ, ধারালো বর্জ্যের জন্য লাল বিন রেখেছি। তরল বর্জ্যের জন্য গামলা-বালতি এসব রয়েছে। কিন্তু রোগী ও স্বজনেরা এসব বিষয় আমলে না নিয়ে সাধারণ বর্জ্যের বিনে হলুদ বা লাল বিনের বর্জ্য ফেলে দেন। জনবল সংকটে যা আলাদা করা কঠিন’।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, চমেক হাসপাতালে দু’টি ইনসিনারেটর আছে। সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট যেমন নয়, তেমনি লাগসই প্রযুক্তিরও নয়। এগুলো চসিককে দিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। মন্ত্রণালয়কে আমরা ইনসিনারেটর দু’টি কনডেম করতে লিখেছি। সাধারণ বর্জ্য অপসারণে সহযোগিতা করছে চসিক’।
‘মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি রয়েছে। এখন আমরা যদি ইনসিনারেটরের পেছনে কয়েক কোটি টাকা খরচ করি, বড় জায়গা বরাদ্দ করি তবে আমাদের মূল যে কাজ চিকিৎসা সেবা সেখানে ঘাটতি পড়বে। ওই টাকায় আমরা নতুন নতুন যন্ত্রপাতি কিনতে পারবো, আইসিইউ’র জন্য ভবন তৈরি করতে পারবো’।
চমেক পরিচালক রোগী-স্বজনদের ওপর দায় চাপালেও হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, মূলত জনবল সংকটে মেডিকেল বর্জ্য নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের চাপও আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন আছে। কিন্তু চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীর সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। কাগজে-কলমে ৩৬৯ জন এ শ্রেণীর কর্মী থাকলেও তাদের অনেকেই বিভিন্ন টিকিট কাউন্টারে এমনকি তৃতীয় শ্রেণীর কর্মীর দায়িত্বও পালন করছেন।
চট্টগ্রাম সেবা সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জমির উদ্দিন বলেন, ‘সকাল-সন্ধ্যা দুই দফা চমেক হাসপাতাল থেকে মেডিকেল বর্জ্য ভর্তি ড্রাম আমরা কাভার্ডভ্যানে হালিশহরে সিটি কর্পোরেশনের টিজির নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাচ্ছি। এর বাইরে চমেক কর্তৃপক্ষের অনুরোধে অনেক সময় আমরা সাধারণ বর্জ্যও অপসারণ করে থাকি। আমাদের নতুন কিছু কাভার্ডভ্যান কেনা এবং জনবল বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে’।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০০, ২০১৭
এআর/টিসি/এএসআর