ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামে কাটছেনা গ্যাস সংকট

আবদুল্লাহ আল মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৪
চট্টগ্রামে কাটছেনা গ্যাস সংকট ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: বৃহস্পতিবার বেলা এগারটা। পরিবারের সদস্যদের জন্য রান্না করতে যান নগরীর নালাপাড়া এলাকার গৃহিণী রেখা চৌধুরী।

দেখেন চুলায় আগুন জ্বলছে না। পরে হোটেল থেকে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
একই অবস্থা চলছে বন্দরনগরীর বিভিন্ন এলাকায়।

গত নভেম্বরে মাঝামাঝিতে শুরু হওয়া গ্যাস সংকট হরতাল অবরোধে কিছুটা স্বাভাবিক ছিল। রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিকের পর আবারো চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। জ্বলছেনা রান্নার চুলা। বন্ধ চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সংকটে কয়েক’শ শিল্প কারখানা।

সরকারি-বেসরকারি দুটি সার কারখানা চালু ও সাংগু গ্যাস ক্ষেত্রে উৎপাদন বন্ধ থাকায় এ সংকট দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৬ আগস্ট বেসরকারি সার কারখানা কাফকোতে ও ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানায় (সিইউএফএল) গ্যাস সরবরাহ দেওয়া শুরু হলে চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট শুরু হয়। গত ২৪ নভেম্বর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সিউএফএলের ইউরিয়া প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে যায়। ২৬ নভেম্বরে একই কারণে কাফকো’র ইউরিয়া প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে যায়। একদিন পর আবার চালু হয় প্ল্যান্টটি। এসময় সারকারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় আবাসিক সংযোগে গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক ছিল।  

ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে সিইউএফএল’র ইউরিয়া প্ল্যান্ট পুনরায় চালু হয়। এসময় গ্যাস সংকট থাকলেও তেমন একটা প্রভাব পড়েনি নগর জীবনে। কারণ বিএনপি-জামায়াতের হরতাল অবরোধে সিএনজি স্টেশনগুলো প্রায় বন্ধ ছিল। নির্বাচনের পর থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা কিছুটা স্বাভাবিক হলে গ্যাস সংকট আবারো তীব্র আকার ধারণ করে।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক(রক্ষণাবেক্ষণ) প্রকৌশলী রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘সিইউএফএল ও কাফকোতে গ্যাস সরবরাহের কারণে আবাসিক ও শিল্প কারখানার সংযোগে গ্যাসের চাপ কমে গেছে। সিইউএফএলের ইউরিয়া প্ল্যান্ট আবার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত শুক্রবার থেকে আবাসিক সংযোগে গ্যাস সরবরাহের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘সেমুতাং গ্যাস ক্ষেত্র থেকে ৬ মিলিয়ন ঘনফুট মতো গ্যাস পায় কেজিডিসিএল। এছাড়া চট্টগ্রামে চাহিদার বিপরীতে বাকি গ্যাস জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা হয়। আশুগঞ্জে কম্প্রেসার স্থাপনের কাজ চলছে। এটির কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট কিছুটা হলেও কমবে। ’

কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি’র (কেজিডিসিএল) হিসাব মতে, চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪০০-৪২০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ২২০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত। গত ১৫ জানুয়ারী সকাল আটটা থেকে ১৬ জানুয়ারী সকাল আটটা পর্যন্ত চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ হয়েছে ২০৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘনফুট। এ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা ছিল ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। সরবরাহ করা হয় মাত্র ২ দশমিক ২ মিলিয়ন ঘনফুট।

গ্যাসের অভাবে বন্ধ রয়েছে- রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দু’টি ইউনিট, শিকলবাহা ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বাড়বকুন্ড রিজেন্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের পরিবর্তে সরবরাহ করা হয় ২ দশমিক ২ মিলিয়ন ঘনফুট।

নগরীর শিল্পকারখানার মালিকদের নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র ছোট ছোট ১৬৩ টি ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট, ৬২টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন, ৪ লাখ ১২ হাজার ৯২১ আবাসিক গ্রাহক, বাণিজ্যিক গ্রাহক ২ হাজার ৫৩০ ও শিল্প কারখানার ৯১৯টি সংযোগে ১২৫ দশমিক ৩ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হয়েছে।

এছাড়া সরকারি বেসরকারি দুটি সার কারখানার চাহিদা ১১৫ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ৮২ দশমিক ৪ মিলিয়ন ঘনফুট। এরমধ্যে চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার’র(সিইউএফএল) ৫২ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ৪৪ দশমিক ৩ মিলিয়ন ঘনফুট। কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি’র(কাফকো) ৬৩ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ১ মিলিয়ন ঘনফুট। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরবরাহ বন্ধ, আবাসিক ও শিল্প কারখানায় সরবরাহ কমিয়ে এ দু’টি সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারী ১৮, ২০১৩
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।