ঢাকা, সোমবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩২, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে পর্যটন স্পট চাক্তাই-কালুরঘাট রিং রোড

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:৪২, অক্টোবর ৬, ২০২৫
কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে পর্যটন স্পট চাক্তাই-কালুরঘাট রিং রোড ...

চট্টগ্রাম: চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পে কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠছে নতুন বিনোদন কেন্দ্র ‘কর্ণফুলী রিভারভিউ পার্ক’। দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে স্থানটি।

বিকেল হলেই নদীর পাড়ে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও প্রিয়জনকে নিয়ে আসছেন সৌন্দর্য পিপাসু মানুষেরা।

নগরীর যান চলাচলে গতি আনা, পিছিয়ে থাকা এলাকার জীবনমান উন্নয়ন, পর্যটন এবং আবাসনসহ সার্বিক ক্ষেত্রে শহর রক্ষা বাঁধের কথা মাথায় রেখে চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্প-২ বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)।

প্রকল্পটি পুরোপুরি শেষ হলে পিছিয়ে থাকা এলাকা যেমন উন্নত হবে, তেমনি দর্শনার্থীদের জন্য হবে বিনোদনের ব্যবস্থা।

সরেজমিন দেখা যায়, বর্তমানে চরের মধ্য দিয়ে নির্মিত হচ্ছে সাড়ে আট কিলোমিটার দীর্ঘ ও চার লেনের সড়ক। এক সময় বিশাল চর ছিল এই অংশে। এখন একরাশ স্নিগ্ধতায় ঘেরা অপার সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে কল্পলোক আবাসিকের পেছনের অংশ কর্ণফুলী নদীর পাড়ে।  

নগরবাসীর জন্য পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ছাড়া আর কোনো উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় কদর বাড়ছে এ স্থানটির। বাকলিয়া এলাকায় কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে নতুন এই পর্যটন স্পট এতদঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের বিনোদনের অভাব পূরণ হবে বলে মনে করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।

সম্ভাবনাময় দর্শনীয় এ স্থানটি নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বাংলানিউজকে বলেন, নগরে বিনোদন কেন্দ্রের বেশ অভাব রয়েছে। নগরবাসী যাতে ওই এলাকায় নির্মল বাতাসে সময় কাটাতে পারে সেজন্য আমরা অনেক পরিকল্পনা নিয়েছি। ওই এলাকায় ভালো মানের রেস্তোরাঁ, দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি পুরো প্রকল্প এলাকায় রাস্তার দুইপাশে বৃক্ষরোপণ করা হবে। বিশেষ করে ফুল জাতীয় কোনো বৃক্ষ।  

তিনি আরও জানান, প্রকল্প এলাকায় ইতোমধ্যে দর্শনার্থীর ভিড় বাড়ছে। কিন্তু ওই এলাকায় দর্শনার্থীদের জানমালের কোন নিরাপত্তা নেই। ইতোমধ্যে অনেক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এলাকা ঘিরে পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে।  

এদিকে, মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র ৮ মাস বাকি থাকলেও এখনও প্রকল্পটির ১৫ শতাংশ কাজ বাকি। যদিও কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের অক্টোবরে। প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২ হাজার ২৭৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। পরে প্রথম ও দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর পর সর্বশেষ ব্যয় দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৭৯ কোটি ৩৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।  

সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, নগরের কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার বিস্তৃত সড়কটির প্রায় ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আর আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৯ শতাংশ। সাড়ে ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তা ও বাঁধের মধ্যে ৭ কিলোমিটারের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বাকি দেড় কিলোমিটার সড়কের ভূমি ক্রয় প্রক্রিয়া চলমান আছে। এরইমধ্যে রাস্তার কার্পেটিং শুরু হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ ফুট উচ্চতার ৪ লেনের সড়ক কাম শহর রক্ষা বাঁধে বর্ষায় নগরের পানি নিষ্কাশনের জন্য ১২টি স্লুইসগেট রয়েছে। এসব স্লুইসগেটের ১০টির নির্মাণকাজ শেষ। এখন চলছে মাটি ভরাটের কাজ। এছাড়া প্রতিটি স্লুইসগেটের জন্য বসানো হচ্ছে পাম্প। ৮টি পাম্প বসানো হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক রাজিব দাশ বাংলানিউজকে জানান, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কর্ণফুলী নদীর আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠবে আবাসন, বাণিজ্য ও পর্যটনশিল্প। পাল্টে যাবে বাকলিয়া, চান্দগাঁও ও মোহরা এলাকার দৃশ্যপট। অল্প সময়ের মধ্যে কালুরঘাট থেকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ নগরের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করা যাবে। সময়ের প্রয়োজনে ও বাস্তবতার নিরিখে প্রকল্পে বারবার পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ খাতে টাকা ছাড় জটিলতায় প্রকল্পের কাজ সময়মত শেষ করা যায়নি। তাই সময় বাড়ানো হয়েছিল। বর্তমানে যে কাজ বাকি রয়েছে তা পরবর্তীতে সময়ের মধ্যে শেষ করা যাবে।

এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।