ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

বারী-৮ উফশী জাতের মসুর বীজ চাষিদের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৪ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২২
বারী-৮ উফশী জাতের মসুর বীজ চাষিদের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে

মেহেরপুর: একজন সফল কৃষক ও বীজ উদ্যোক্তা গাংনীর হাড়াভাঙ্গা গ্রামের মো. হানিফ উদ্দীন। তিনি নিবীড় পরশে উৎপাদন করছেন বারী-৮ উফশী জাতের মসুর বীজ।

হানিফ উদ্দীনের উৎপাদিত বারী-৮ উফশী জাতের মসুর বীজ এলাকার চাষিদের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছে।

মো. হানিফ উদ্দীন এলাকার একজন সফল কৃষক। তিনি কলা, গম, ভুট্টা, ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষ করেন। এরপর তিনি শুরু করেছেন বীজ উৎপাদন ও বিপণন।

এখন তিনি মসুর বীজ উৎপাদন ও প্যাকেটজাত করে তা বাজারজাত করছেন। তাঁর উৎপাদিত এ বীজ গাংনী উপজেলার গন্ডি ছাড়িয়ে পাশের জেলা ও উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। এখন প্রতিবছর শুধু ২২ মেট্রিক টন মসুর বীজই উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন হানিফ।

বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় হানিফ উদ্দীনের। তিনি বলেন, আমি কৃষকের সন্তান। ছোটবেলা থেকেই কৃষি কাজকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। প্রথম থেকেই আমি ধান, গম, ভুট্টা, কলাসহ অন্যান্য চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়ি। চাষ করতে গিয়ে ভালো বীজের সংকট দেখতে পাই। বাজারে ভালো বীজের সংকট দেখে মনে প্রশ্ন জাগে, সরকার ও বিভিন্ন কোম্পানি যে বীজ বিক্রি করে, তা কোথা থেকে আসে।

প্রায় ১৫ বছর আগে কৃষি অফিসের আইপিএম প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বীজ উৎপাদনের আইডিয়া পাই। এরপর ১০ বছর ধরে বিভিন্ন বীজের উৎপাদন শুরু করি, ২০১৭ সাল থেকে প্রফেশনালী বীজ উৎপাদনের কথা চিন্তা করি। যেই চিন্তা, সেই কাজ। শুরু করি মসুরি বীজ উৎপাদন। প্রথমবারই ভালো বীজ উৎপাদন করি। দেখি বাজারে বীজের চাহিদা ও দাম দুটোই ভালো। প্রথমবারেই লাভ হয়।

এরপর গাংনী উপজেলা কৃষি অফিস ও স্থানীয় উপসহকারী কৃষি অফিসারের কাছে জানতে পারি কীভাবে মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করা যায়, কীভাবে বীজ উৎপাদনের লাইসেন্স পাওয়া যায় সেসব বিষয়। এরপর নিজের অভিজ্ঞতা ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে শুরু করি বীজ উৎপাদন।

হানিফ উদ্দীন বলেন, বীজ উৎপাদনের পর তা আমার নিজের বাড়িতে রেখে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বিক্রি শুরু করি। কৃষকও তাঁর বীজ ব্যবহার করে ভালো ফলন পেতে শুরু করেন।

গাংনী উপজেলার করমদী গ্রামের ফরিদ হোসেন হানিফ উদ্দীনের প্যাকেটজাত বীজ কিনে প্রথম মসুর চাষ করেন। তিনি বলেন এই বীজ গুণগত মানে অতুলনীয়। শতকরা ৮০ ভাগের বেশি বীজ অঙ্কুরিত হয়। এছাড়া ফলনও ভালো।  

তিনি আরও বলেন, এখন এই এলাকার কৃষক মতিয়ার রহমান, ডালিম হোসেনসহ ৭/৮ জন কৃষক হানিফ উদ্দীনের বীজ কিনে জমিতে বুনছেন।

হানিফ উদ্দীনের নিজ গ্রামের কৃষক আবু সালেহ বলেন, তার কাছ থেকে বীজ নিয়ে কখনো ঠকিনি। তিনি বলেন, আমরা তাকে সব সময় কাছে পাই। বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে তিনি আমাদের সহায়তা করেন। কিছু বাকিতেও বীজ-কীটনাশক কেনা যায়।

জোড়পুকুরিয়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ জানান, হানিফ উদ্দীনের বীজের গুনগত মান অত্যন্ত ভালো। এখন এলাকার মানুষের কাছে তার বীজের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই তার বীজ খুঁজছেন।

বামন্দীর বীজ ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম জানান, আমি বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন ফসলের বীজ বিক্রি করে থাকি। কয়েক বছর ধরে হানিফ উদ্দীনের মসুর বীজ বিক্রি করছি। এই বীজটির মান ভালো হওয়ায় মসুরি চাষিদের মাঝে এখন চাহিদা বাড়ছে। কৃষকদের সঙ্গে মসুর বীজের সুনাম এখন ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের এলাকায়ও।

বর্তমানে হানিফ উদ্দীন নিজেই গড়ে তুলেছেন বীজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র। সরকারিভাবে দেওয়া  প্যাকেটজাত বীজ বিক্রি করেন তিনি। তাই এখন আর তাঁর উৎপাদিত বীজ অন্য কোনো প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে নিতে হচ্ছে না। চলতি মৌসুমে বারী ২৮ উফশী জাতের মসুর বীজ ২২ মন ভিত্তি বীজ তিনি বিপণন করেছেন।

হাড়াভাঙ্গা ব্লকের উপসহকারী কমিউনিটি কৃষি অফিসার মফিউল ইসলাম ডিকেন বলেন, কৃষক হানিফ উদ্দীন খুব ভাল মানের চাষি ও বীজ উদ্যোক্তা। যেকোনো বিষয়েই তিনি কৃষি অফিসের স্মরণাপন্ন হন তিনি।

গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. লাভলী খাতুন বলেন, মো. হানিফ উদ্দিন এ উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নের হাড়াভাঙ্গা ব্লকের গ্রামের একজন পরিশ্রমী ও সফল এসএমই কৃষক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হাড়াভাঙ্গা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তিনি সবসময় নতুন জাত চাষে ও প্রযুক্তি গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় প্রাপ্ত বারি মসুর- ১৭ একটি প্রদর্শনী স্থাপন করেন। বর্তমানে হানিফ উদ্দীন একজন সফল কৃষকের পাশাপাশি সফল উদ্যোক্তাও। ব্যক্তি উদ্যোগে কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের বীজ উৎপাদনের তেমন নজির এখানেনেই। অথচ হানিফ উদ্দীন বীজ উৎপাদনের পাশাপাশি নিজের উদ্যোগে বীজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রও তৈরি করেছেন। কৃষক থেকে বীজ উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার এ নজির সত্যিই অনন্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪১ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।