ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

জাতীয় পানীয় হিসেবে ‘চা’ অগ্রগণ্য হতে পারে

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২২
জাতীয় পানীয় হিসেবে ‘চা’ অগ্রগণ্য হতে পারে সূর্যরেখায় মাথা তুলেছে দুটি পাতা একটি কুঁড়ি। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: অনেক বিষয়কেই ‘জাতীয়’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা হয়েছে। এর ফলে সেই বিষয়টির গুরুত্ব ও তাৎপর্য বেড়েছে বহুগুণ।

দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে এর প্রতিনিধিত্বমূলক পরিচয় বাঙালির আত্মগৌরবের অংশ হয়ে উঠেছে। যেমন- জাতীয় পতাকা, জাতীয় প্রতীক, জাতীয় মাছ, প্রাণীপশু, জাতীয় পাখি, জাতীয় ফুল, জাতীয় ফল, জাতীয় বৃক্ষ, জাতীয় খেলা প্রভৃতিকে সরকারিভাবে জাতীয় ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশের সংস্কৃতি হিসেবে পৃথিবীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে।  

‘জাতীয় পানীয়’ হিসেবে অদ্যাবধি কোনো কিছুকে অন্তর্ভুক্ত না হওয়া ‘চা’ কে এই তালিকায় গেজেটভুক্ত করা দাবি তুলেছেন চা বিশেষজ্ঞ।  

চা এমন এক পানীয় যার ব্যবহার সর্বত্র। বাড়িতে অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, হাট-বাজারে পরিচিতজনের সঙ্গে হঠাৎ দেখায় এক কাপ চায়ে চুমুকের অনুরোধ সহজেই চলে আসে। এমন সব ব্যাপারগুলো থেকেই চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে।  

বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্র জানা যায়, ২০২১ সালে দেশের ১৬৭টি চা বাগান এবং ক্ষুদ্রায়ন চা বাগান থেকে ৯৬ দশমিক ৫০৬ মিলিয়ন (৯ কোটি ৬৫ লাখ) কেজি চা বার্ষিক উৎপাদন হয়েছে। বাংলাদেশে ১৬৭ বছরের ‘চা’ ইতিহাসে এটিই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রেকর্ড। ২০২০ সালে দেশে ৮৬ দশমিক ৩৯৪ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। যা ২০২১ সালের উৎপাদন থেকে ১ কোটি ১ লাখ ১১ হাজার কেজি বেশি।  

২০১৯ সালে ৯৬ দশমিক ০৬৯ মিলিয়ন কেজি (৯ কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার) কেজি চায়ের উৎপাদনই ছিল সেসময় পর্যন্ত চা শিল্পের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ।  

বাংলাদেশ চা বোর্ডের সাবেক মহা-ব্যবস্থাপক (চা ব্যবস্থাপনা কোষ) মো. শাহজাহান আকন্দ বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় পানীয় হিসেবে ‘চা’ কে তালিকাভুক্ত করা যেতে পারে। বাংলাদেশ বিশ্বের বর্তমানে নবম চা উৎপাদনকারী দেশ। দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জি ডি পি কর্মসংস্থান ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে বিশেষ অবদান রাখছে।

‘বর্তমানে চা প্রদর্শনী ও চা সংস্কৃতির উৎসব প্রায় বছরজুড়েই বিদ্যমান এবং দিন দিন বাংলাদেশের চা আধুনিকতার ছোঁয়ায় সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ’

বঙ্গবন্ধুর উজ্জ্বল অধ্যায়ের প্রসঙ্গ টেনে শাহজাহান বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের পর যুদ্ধবিদ্ধস্ত চা বাগানগুলো পুনরুজ্জীবিত করা জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে চা বাগান রক্ষার্থে বিশেষ পদক্ষেপ না নিলে আজ এই চা বাগানগুলির অস্তিত্ব টিকে থাকাই কঠিন হত।

উদ্ধৃতিনির্ভর ‘চা’র গুরুত্ব টেনে তিনি বলেন, ‘চা হলো An unique universal cheapest natural drinks next to water (পানির পাশাপাশি এটি একটি অনন্য সর্বজনীন সস্তা প্রাকৃতিক পানীয়)। এর উপকারিতা অপরিসীম।  

তিনি আরো বলেন, কয়েক বছর আগে প্রকাশিত ভারতের চা বিষয়ক লেখক মৃদুল হাজারিকা প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, বিশ্বের কিছু দেশে ‘চা জাতীয় পানীয়’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যেমন- ইংল্যান্ডে চা, চীনে চা, ভারতে চা। এছাড়াও পাকিস্তানে আখের রস, স্কটল্যান্ডে হুইস্কিকে জাতীয় পানীয় হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।  

বাংলাদেশে দেড়শ’ বছরের বেশি চায়ের সংস্কৃতি, সমৃদ্ধি, প্রসার, চা উৎপাদনকারী ও ভোক্তাদের মাঝে আলোড়ন বা চমক সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘চা’ কে জাতীয় পানীয় হিসেবে প্রস্তাব বা স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে বলে জানান অভিজ্ঞ টি-প্লান্টার শাহজাহান আকন্দ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২২
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।