ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

বগুড়ায় ‘রাজাবাবু’র দাম হাঁকা হয়েছে ১০ লাখ!

কাওছার উল্লাহ আরিফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২০
বগুড়ায় ‘রাজাবাবু’র দাম হাঁকা হয়েছে ১০ লাখ! ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়ের নাম রাজাবাবু। ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: বিশাল দেহাকৃতির ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টির নাম ‘রাজাবাবু’। প্রায় ২৭ মণ ওজনের ষাঁড়টির দাম হাঁকা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। রাজাবাবুর পুরো শরীর কুচকুচে কালো, পায়ের নিচের দিকটা কিছুটা সাদা, শিং দু’টিতে রয়েছে সাদা-কালোর মিশ্রণ।

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার উঞ্চুরকি পূর্বপাড়া (সোনাহাটা বাজার সংলগ্ন) গ্রামের শহীদুল ইসলাম ষাঁড়টির জন্মের পর থেকে ৩ বছর ৩ মাস ধরে তার নিজ বাড়িতেই লালন-পালন করে আসছেন। পরিবারের সদস্যরা আদর করে ষাঁড়টির নাম রেখেছেন ‘রাজাবাবু’।

অনেক সময় শুধু রাজা কবলেও ডাকা হয় ষাঁড়টিকে। ষাঁড়টির দাম হাঁকা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। বাড়িতেই সাড়ে ৪ লাখ টাকা দাম করেছেন এক ক্রেতা। কিন্তু মালিক শহীদুল ইসলাম ষাঁড়টি এ দামে ছাড়তে নারাজ।

তার দাবি, এ দামে বিক্রি করলে লাভ তো দূরের কথা, উল্টো লোকসান গুনতে হবে। কোরবানির ঈদ আসতে এখনো কিছুদিন বাকি রয়েছে। তাই ষাঁড়টিকে দেখে-শুনে বিক্রি করতে চান তিনি।

সোমবার (১২ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোয়াল থেকে বাড়ির উঠোনে কিছু সময়ের জন্য বের করা হয়েছে বিশাল দেহাকৃতির ফ্রিজিয়ান জাতের (রাজাবাবু) ষাঁড়টিকে। বিশাল দেহী হয়েও বেশ শান্তশিষ্ট রাজাবাবু। গরুটিকে দেখার জন্য প্রায় প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ভিড় জমায় শহীদুল ইসলামের বাড়িতে।

শহীদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, তিনি পেশায় একজন কৃষক। জমিতে ফসল চাষাবাদের পাশাপাশি তিনি এ ষাঁড়টিকে জন্মে পর থেকে বাড়িতেই প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে লালন-পালন করে আসছেন। পরিবারের সদস্যের মতো তিনি আদর ও যত্নে বড় করেছেন রাজাবাবুকে। সময় মতো তিনবেলা খাবার (ভূসি, ভূট্টার আটা, ধানের গুঁড়া, নেপিয়ার ঘাস) সঠিক সময়ে খাওয়াচ্ছেন। তিনি নিজেই ২১ শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছেন রাজাবাবুকে খাওয়ানোর জন্য। এরপরেও গরুটির খাদ্য চাহিদা মেটাতে বাজার থেকে কিনতে হয় নেপিয়ার ঘাস। তার রাজাবাবু একদম গরম সইতে পারে না। রাজাবাবুর মাথার ওপর ২৪ ঘণ্টাই ফ্যান চালানো থাকে। আর দিনে দুইবার গোসল করানো হয় রাজাবাবুকে। ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়ের নাম রাজাবাবু।  ছবি: বাংলানিউজতিনি বলেন, সবমিলিয়ে গরুটির পেছনে তার এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। তাই ষাঁড়টির দাম হাঁকা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম করেছেন।

তিনি আরও বলেন, বিশাল দেহী ষাঁড়গুলো হাটে তোলা বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত বাজারদর অনুসারেই বিক্রি করতে চান তার রাজাবাবুকে। তবে বাজার যাচাই করেই বিক্রি করবেন তিনি। এতে লাভ-লোকসান যাই হোক না কেন, মেনে নেবেন। কারণ শখের বশে পাললেও তিনি অনেক টাকা ব্যয় করেছেন বাজাবাবুর পেছনে।

স্থানীয় বাসিন্দা হান্নান মিয়া, ইসমাইল হোসেন, সুমনসহ একাধিক ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, আশ-পাশের উপজেলা দূরের কথা বগুড়ায় সর্বোচ্চ বড় গরু থাকে সেগুলোর মধ্যে রাজাবাবু হবে অন্যতম।

এদিকে গরুটিকে নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন শহীদুল ইসলাম। কেননা করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। বড় গরু কেনার মতো সচরাচর ক্রেতা ও পাইকার মিলছে না। অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই না থাকায় বিশাল আকারের গরুটি নিয়ে স্থানীয় হাটেও যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বগুড়ায় গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার রোধে বিভিন্ন পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। খামারি ও পশু পালনকারী ব্যক্তিদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র। পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জেলার মোট ১২টি উপজেলার ৪০ হাজার ৮শ’ ৯ জন খামারি মোট ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫শ’ ৭৭টি গবাদিপশু কোরবানিযোগ্য করে তুলেছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪০ হাজার ৫০৩টি, গাবতলীতে ৩১ হাজার ৪৪৫টি, সারিয়াকান্দিতে ৩৪ হাজার ৫৫৭টি, সোনাতলায় ২৫ হাজার ৭৪৭টি, শিবগঞ্জে ৪১ হাজার ৪৩টি, কাহালুতে ২৬ হাজার ৫৭৮টি, দুপচাঁচিয়ায় ৩০ হাজার ১৬৪টি, আদমদীঘিতে ২৫ হাজার ৮১২টি, নন্দীগ্রামে ২২ হাজার ২৭২টি, শেরপুরে ৩৯ হাজার ৯৫০টি, ধুনটে ৩২ হাজার ৫৮৮টি এবং শাজাহানপুর উপজেলায় ২৫ হাজার ৯১৮টি গবাদিপশু রয়েছে। এ পশুগুলোর মধ্যে গরু (ষাঁড়, বদল ও গাভী) ২ লাখ ৫০ হাজার ৮শ’ ৫২টি, মহিষ ২ হাজার ৮শ ১৩টি, ছাগল ১ লাখ ৩ হাজার ২শ’ ৫২টি এবং ভেড়া ১৯ হাজার ৬শ’ ৬০টি।

ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়ের নাম রাজাবাবু।  ছবি: বাংলানিউজজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার বাংলানিউজকে জানান, এবছর করোনা পরিস্থিতিতে কোরবানির বাজার নিয়ে চিন্তিত খামারিরা। জেলায় স্থায়ী হাট রয়েছে ৩৮টির মতো। ঈদকে সামনে রেখে স্থায়ী হাটগুলোতে কোরবানিযোগ্য পশুগুলো বিক্রির জন্য তোলা শুরু হয়েছে। নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব মেনে পশুর হাট পরিচালনার জন্য হাট ইজারাদারদের সচেতন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বগুড়ায় অনলাইনে পশু বিক্রির জন্য ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে। সোমবার রাত থেকে এটির কার্যক্রম শুরু করা হবে। ফেসবুকের পেজটি ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টালের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। এর মাধ্যমে খামারিদের সঙ্গে পশু বিক্রেতা ও ক্রেতাদের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার কার্যক্রম চলবে। পশু খামারিদের সঙ্গে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের মাধ্যমে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছি।

তিনি আরও বলেন, এখন করোনা পরিস্থিতিতে রাজাবাবুর মতো বড় ধরনের গরু নিয়ে কোনো খামারি যদি সমস্যায় পড়েন তাহলে তারা আমাদের জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ে আসতে পারেন বা যোগাযোগ করলে আমাদের লোক তাদের কাছে পৌঁছে যাবে। এক্ষেত্রে ওই গরুর ছবি, ভিডিও ক্লিপ, গরুর বয়স, ওজন ও খামারির ঠিকানা দিয়ে আমরা অনলাইন মার্কেটে আপলোড দেবো। এতে খুব সহজেই তার গরুটি বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।

বগুড়ায় কোরবানিযোগ্য ছোট-বড় গবাদিপশু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাবে। আবার বিভিন্ন জেলার পশুও এ জেলায় আসবে এমন মন্তব্যও করেন এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২০
কেইউএ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।