ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

দর না পেয়ে লোকসানের শঙ্কায় তরমুজচাষিরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০২ ঘণ্টা, মে ২, ২০২০
দর না পেয়ে লোকসানের শঙ্কায় তরমুজচাষিরা তরমুজ। ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: রসালো ফল তরমুজের মৌসুম চলছে। দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো বরিশাল অঞ্চলেও এবারে ফলন ভালো হয়েছে তরমুজের। তবে নানান কারণে ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের হিসেব মেলাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে চাষিদের। আর তাই লোকসানের শঙ্কায় হাসি নেই চাষির মুখে।

তরমুজ চাষিদের মতে, এবারে দক্ষিণাঞ্চলের তরমুজ চাষে খ্যাত ভোলা, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় বাম্পার ফলন হলেও, করোনার কারণে বাজার অনেকটাই মন্দা যাচ্ছে তরমুজের। ক্রেতা সংকেট দাম যেমন উঠছে না, তেমনি বিগত সময়ের থেকে পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে অনেকটা।

সবমিলিয়ে খরচ ওঠাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে অনেক চাষিদের। এর ওপর গেলো কয়েকদিনের বৃষ্টি নতুন করে শঙ্কায় ফেলেছে চাষিদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে পটুয়াখালী জেলায়। এ জেলায় চলতি বছরে তরমুজ আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে। এরপর সর্বোচ্চ ভোলা জেলায় আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৭২২ হেক্টর জমিতে। এরপরের স্থানে থাকা বরগুনা জেলায় আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৭৩২ হেক্টর হেক্টর জমিতে। এছাড়া বরিশাল জেলায় ৩৫১ হেক্টর, পিরোজপুর জেলায় ৪৬ হেক্টর ও ঝালকাঠি জেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে।

সূত্র বলছে, বিগত বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে তরমুজের আবাদ বেশি হলেও এবারে উৎপাদন ভালো হয়েছে।

চাষিরা জানান, এবারে তরমুজগুলো ওজন ও আকারের দিক থেকেও বিগত সময়ের থেকে বেশ ভালো। তবে সম্প্রতি সময়ে করোনার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ক্ষেতে যেমন পাইকারদের তেমন একটা দেখা মেলেনি, তেমটি আড়তে এনেও ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না। আবার আড়ত পর্যন্ত আনতে যে পরিবহন ব্যয় হচ্ছে তাও হিসাব ছাড়া অনেক বেশি। এক্ষেত্রে উৎপাদন থেকে বিক্রি পর্যন্ত হিসাব কষে শেষ অব্দি লোকসানের শঙ্কা করছেন তারা। ক্ষেতজুড়ে তরমুজ।  ছবি: বাংলানিউজপটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার তরমুজ চাষি জাহিদ হাসান জানান, তিনি ৬ কানি জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। তবে খরচের অর্ধেক দামেও তরমুজ বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। আগে যেখানে নৌ-পথে ট্রলার ভাড়া ছিলো ৩-৪ হাজার টাকা সেই পথের খরচ এখন প্রায় দ্বিগুণ। সড়কপথেও ট্রাকের ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

এবারে তরমুজের তুলনামূলক চাহিদা কম জানিয়ে তিনি বলেন, যারা আগাম বিক্রি করেছেন তারা ভালো দাম পেলেও এখন বাজারে ভালো দাম পাচ্ছে না। তার মতে ভাড়ার জমিতে এবং ঋণ নিয়ে যারা চাষাবাদ করেন তারা এবারে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

আবার গেলো কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ক্ষেতে থাকা তরমুজের জন্য নতুন শঙ্কার সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন কৃষক নাছির।

আর আড়তদার ও পাইকাররা বলছেন, আবহওয়া অনুকূলে থাকায় এবারে উৎপাদন বেড়েছে, তবে ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা বিগত বছরগুলোর থেকে কিছুটা কম। সেসঙ্গে করোনার কারণে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায় বাহন সংকটসহ নানান প্রতিকূলতার কারণে ওই সেক্টরে ব্যয় বেড়ে গেছে। পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কমে গেছে আড়তদারদের সংখ্যা, তাই বাজারও চলছে অনেকটাই মন্থর গতিতে। তাই সবমিলিয়ে তরমুজের দর সময় অনুযায়ী ওপরের দিকে উঠছে না।

আড়তদার নজরুল ইসলাম জানান, ভোক্তার চাহিদা ও পরিবহন খরচের হিসাব মাথায় রেখেই তরমুজ কিনতে হচ্ছে, এক্ষেত্রে কোনো সিন্ডিকেট নেই। যিনি হিসাব মিলিয়ে কিনতে পারছেন তিনি কিনছেন আর যিনি পারছেন না তিনি কিনছেনও না।

তবে কৃষকদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারদের সংযোগ করিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক তাওফিকুল আলম।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, মে ০২, ২০২০
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।