ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

নরসিংদীতে প্রস্তুত ২৫ হাজার পশু, দেশি গরুর কদর বেশি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০১৯
নরসিংদীতে প্রস্তুত ২৫ হাজার পশু, দেশি গরুর কদর বেশি

নরসিংদী: আসন্ন কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরের মতো এবারও নরসিংদীর খামারিরা সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজা করছেন। শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার খামারিরা। কোনো ধরনের রাসায়নিক ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগ ছাড়াই সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে পশু মোটাতাজা করা হচ্ছে। আর তাই এবার কোরবানির হাটকে ঘিরে ভালো দাম নিয়ে বেশ আশাবাদী খামারিরা।

খামারগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী এক লাখ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে বিদেশি গরু আমদানি না হলে, এবছর পশু বিক্রি করে লাভবান হওয়ার আশা করছেন খামার মালিকরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঈদকে সামনে রেখে নরসিংদীর ছয়টি উপজেলায় ছোট-বড় পাঁচ হাজার ২৭১ জন খামারি দেশীয় পদ্ধতিতে ২৪ হাজার ৩৬২টি পশু মোটাতাজা করছেন। মোটাতাজাকরণ পশুর মধ্যে রয়েছে ষাড়, বলদ, গাভী, ছাগল ও ভেড়া। এরমধ্যে নরসিংদী সদরে তিন হাজার ৬০৭টি, রায়পুরায় দুই হাজার ৬৩৮টি, বেলাবতে পাঁচ হাজার ১৬০টি, পলাশে চার হাজার ৩৮২টি, শিবপুরে তিন হাজার ১৬৮টি ও মনোহরদীতে পাঁচ হাজার ৩৭১টি সম্ভাব্য পশু রয়েছে।  

দেশের বিভিন্ন হাট থেকে গরু কিনে ছয় মাস ও এক বছর আগে থেকে গবাদি পশু লালন-পালন শুরু করেন নরসিংদীর খামারিরা। কোরবানির ঈদকে ঘিরে অসাধু গরু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ করলেও এখানকার খামারগুলোতে পশুকে দেশীয় খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করা হয়েছে। দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজাকরণ করায় এ অঞ্চলের গরু ও মহিষের চাহিদাও অনেক বেশি। এসব খামারের গরু ও মহিষ আশপাশের জেলাসহ বিভিন্ন হাটগুলোতে সরবরাহ করবেন বলে জানিয়েছেন খামারিরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, অসাধু গরু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ করলেও দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন নরসিংদীর খামারিরা। প্রতি বছরই ঈদ এলে গরু বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন এ জেলার খামারিরা। ছোট-বড় খামারের পাশাপাশি প্রতিটি খামারি ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজা করে থাকেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত ক্ষতিকর ইনজেকশন ও ট্যাবলেট পরিহার করে কাঁচা ঘাস ও খড়ের পাশাপাশি খৈল, চিটা গুড়, ভুসি খাদ্য হিসেবে খাওয়ানোর মাধ্যমে মোটাতাজা করা হয়েছে এসব গরু।  

বাজারে দেশীয় গরুর বেশি চাহিদা থাকায় এবারের ঈদে লাভজনক হবেন বলে আশাবাদী তারা।

রায়পুরার চরাঞ্চলের চরমধুয়া গ্রামের গ্রিন অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক মুজিবর শিকদার বাংলানিউজকে বলেন, খামারে ৫০টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রত্যেকটি গরু সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে কাঁচা ঘাস, খড়, তিলের খৈল, ছোলার খৈল, মটরসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করা হয়েছে। দেশীয় গরুর চাহিদা থাকায় এরমধ্যে খামার পরিদর্শনে আসছেন ক্রেতারা। অনেকে খামার থেকেই গরু কিনে নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। যার কারণে প্রায় অর্ধেক খামারের গরুই বিক্রি হয়ে গেছে।

শিবপুর উপজেলার মুন্সেফের চরের গরু খামারি কিবরিয়া গাজী বাংলানিউজকে বলেন, দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজাকরণ করায় এ অঞ্চলের গরুর চাহিদা অনেক বেশি। আর তাই ঈদের বেশি দিন সময় না থাকায় গরুর যত্নে এখন ব্যস্ত সময় পার করছি খামারিরা। খামারগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী এক লাখ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের গরু প্রস্তুত করা হয়েছে।

নরসিংদী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, নরসিংদীতে খামারিরা মেডিসিন ব্যবহার না করে দেশীয় প্রযুক্তিতে প্রাকৃতিক ঘাস, খড়, ভুসি ও দানাদার খাবারের মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করছেন। যার কারণে এখানকার পশুর চাহিদা রয়েছে সারাদেশে। এবার জেলার উৎপাদিত পশু নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় রফতানি সম্ভব হবে। এছাড়া গরু মোটাতাজাকরণে কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার রোধে সার্বক্ষণিক মনিটিরিং করছেন আমাদের লোকজন। এছাড়াও প্রতিটি হাটে গরু পরীক্ষা করার জন্য মনিটরিং সেল বসানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৯
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।