ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

রাজশাহীতে দেশি গরু দিয়েই কোরবানির পশু বিক্রি শুরু

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৯
রাজশাহীতে দেশি গরু দিয়েই কোরবানির পশু বিক্রি শুরু রাজশাহীতে কোরবানির পশু বেচাকেনা শুরু। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: সীমান্তবর্তী এলাকা হলেও গত প্রায় সাত মাস থেকে রাজশাহীতে নদীপথে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ। এরই মধ্যে ঘনিয়ে এসেছে কোরবানির মৌসুম। তবে শঙ্কা নেই, এবারও দেশি গরু দিয়েই কোরবানির বেচাকেনা শুরু হয়েছে।

ওপাড় থেকে গরু না এলেও দেশি গরুতেই কোরবানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে দাবি করছেন রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।  ‘সিটি হাট’ রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের সর্বচেয়ে বড় পশুর হাট এটি।

রোববার (২১ জুলাই) হাটে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে ক্রেতা কম থাকায় বিক্রেতাদেরও হাঁকডাকও কম।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কেবলই কেনাবেচা শুরু হয়েছে। বিক্রি কম থাকলেও আগামী সপ্তাহে হাটে জনসমাগম বাড়বে। একইসঙ্গে ব্যবসাও জমবে।

বাজার বুঝতে এখন হাটে আসা ক্রেতাদের মধ্যে থেকে দু’চারজনের অভিযোগ পশুর দাম অনেক বেশি। যা দাম তার থেকে একটু বেশিই হাঁকা হচ্ছে। তাই এখনকারের মতো দরদামেই আটকে আছে কেনাবেচা। হাটে পর্যাপ্ত পশুর আমদানি হলে আর সময় গড়ালে দামও কমবে ধারণা করছেন ক্রেতারা। তাই এখন দর কষাকষিরই মৌসুম চলছে। বাইরের পাইকাররা এখনও আসেননি। পুরোদমে হাট জমেতে শুক্রবার (২৬ জুলাই) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে ব্যবসায়ীদের।  রাজশাহীতে কোরবানির পশু বেচাকেনা শুরু।  ছবি: বাংলানিউজসিটি হাটে এরই মধ্যে রাজশাহীর বিভিন্ন জেলা থেকে গরু আসতে শুরু হয়েছে। রোববার একটু বেশিই এসেছে। গরু বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীরা হাটের মধ্যে বাঁশ ও কঞ্চি দিয়ে তৈরি লাইনে সারিবদ্ধভাবে পশু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সেভাবে পশু বিক্রি শুরু না হওয়ায় মুখে পান গুঁজে দিয়ে খোশগল্পেই বেশি সময় কাটাচ্ছেন। বাকি সময়টা ব্যয় করছেন কোরবানির প্রিয় পশুটির যত্ন আর পরিচর্যায়। হাটে ক্রেতা না পাওয়ায় মোটেও হতাশ নন তারা। বরং এখনকারের জন্য বিষয়টিকে তারা যৌক্তিক বলেই মনে করছেন।

তাদের ভাষ্য, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা সমাগম বাড়বে।

হাটে কথা হয় ছোটবনগ্রাম এলাকা থেকে আসা শহীদুল আলমের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গরু কেনার সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে বাজারদর যাচাই করতে এসেছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তিন মণ ওজনের একটি গরুর দাম হাঁকছেন ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। বড় গরুর দাম আরও বেশি। তাই কেনাবেচা জমেনি। তার মতো অনেকেই দাম করেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

তবে পবার পারিলা থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী মাসুদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মাংসের বাজার হিসাবে কোরবানির গরুর দাম কমই রয়েছে।

তিনি বলেন, ছোট আকৃতির গরু এখন ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় মিলছে, মাঝারি আকৃতির গরুর দাম ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যেই। এছাড়া বড় গরু ৯০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী।

রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় সাত মাস হলো ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ রয়েছে। এজন্য গরুর মাংসের দামও চড়া। বর্তমানে রাজশাহীসহ আশপাশের জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন খামার থেকে কোরবানির গরু আসতে শুরু করেছে। দেশের বন্যাকবলিত এলাকার খামার বা বাড়িতে গরু-ছাগল রাখা যাচ্ছে না। তাই রাজশাহী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা জেলার পশুগুলো হাত ঘুরে হাটে উঠেছে। তবে এখনও দাঁতালো (কোরবানির উপযোগী) গরুর সংখ্যা কম। এতে বেচাকেনা শুরু হলেও জমে ওঠেনি। বেশিরভাগ ক্রেতা হাটে এসে দরদাম হাঁকিয়ে কোরবানির বাজার বোঝার চেষ্টা করছেন। যাদের বাসায় গরু রাখার জায়গা আছে কেবল তারাই এখন দামে সুবিধা হলে গরু কিনে নিয়ে চলে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে আতিকুর রহমান কালু বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও সিটি হাটে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের নিরাপাত্তায় বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হাটে একজন পশু চিকিৎসক রয়েছেন। কোরবানির পশুর সংখ্যা নিরূপণ, হাটে স্বাস্থ্যসম্মত পশুর ক্রয়-বিক্রির ব্যাপারে তিনি তদারকি করছেন। এছাড়া হাটে জাল টাকা শনাক্তের জন্যও মেশিনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

চাঁদ দেখা সাপক্ষে ১২ আগস্ট ঈদুল আজহার সম্ভাব্য দিন ধার্য রয়েছে। তাই এখনও দু’ সপ্তাহেরও বেশি সময় হাতে রয়েছে। সবমিলিয়ে আগামী সপ্তাহ থেকে হাটে কোরবানির পশু কেনাবেচা জমজমাট হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান।  

এদিকে রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী কোরবানির মৌসুমে এখানে ৪ লাখ ৪ হাজার ৫০০টি পশুর চাহিদা রয়েছে। গতবার কোরবানির ঈদে রাজশাহীতে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫১৯টি পশু জবাই করা হয়েছিল। এর মধ্যে ষাঁড় ৭১ হাজার ২৫৬টি, বকন ছিল ২ হাজার ৯৮১, মহিষ ৭৪৫ট, ছাগল ৩ লাখ ১৭ হাজার ৬৯৪ ও ভেড়া ৩ হাজার ৮৪৩টি।  

রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অন্তিম কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, জেলার ৯ উপজেলায় ১৭ হাজার ৭শ খামার রয়েছে। যেখানে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫৭৪ কোরবানির পশু লালন-পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ষাঁড় ৭১ হাজার ৮৩১, বকন ৬ হাজার ১৮, মহিষ দুই হাজার ৬৭৫, ছাগল ২ লাখ ৭৪ হাজার ৭৫ ও ভেড়া ১৩ হাজার ৬৭৫ এবং অন্যান্য পশু রয়েছে ১ হাজার ১৩৬। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সাধারণত ২ শতাংশ বৃদ্ধি ধরে চাহিদা নিরুপণ করে থাকে। তবে এটি সম্ভাব্য হিসাব।

সেই হিসাবে ঈদে ৩৪ হাজার ৮৭৫টি পশুর ঘাটতি রয়েছে। তবে এখনও সময় বাকি আছে। এর মধ্যে অনেকে পশু কোরবানির উপযুক্ত হবে। এতে দেশি গরুতেই চাহিদা পূরণ হবে বলেও মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।

রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) কল্যাণ কুমার ফৌজদার বাংলানিউজকে বলেন, গতবার ঈদে রাজশাহীসহ গোটা দেশের ১০ লাখ পশু খামারিরা বিক্রি করতে পারেনি। এই থেকে বোঝা যায় আমাদের দেশ এখন প্রাণিসম্পদে সমৃদ্ধ। এখানে চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকে। এবার ঈদেও দেশি গরুতেই কোরবানির চাহিদা পূরণ হবে। হিসাবে কিছুটা কমতি থাকলেও শেষ পর্যন্ত কোনো সমস্যা হবে না। কারণ কোরবানির পশুর চাহিদা হিসাবটি বরাবরই সম্ভব্য। আমাদের দেশি খামারিরা এবারও পর্যাপ্ত পরিমাণে গরুসহ কোরবানির বিভিন্ন পশু লালন-পালন করেছেন। তাই চাহিদা পূরণ সম্ভব।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিডি কল্যাণ কুমার ফৌজদার বলেন, এরই মধ্যে ভেটেরিনারি সার্জনদের নিয়ে মেডিক্যাল টিম গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে টিম পশু হাটগুলোর মনিটরিং এবং প্রয়োজনীয় সেবা দেবে। কোনোভাবেই যেন, অসুস্থ পশু হাটে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে নজর রাখা হবে। তবে এবার গবাদি পশুর মারাত্মক সংক্রামক রোগ অ্যানথ্রাক্স বা অন্য কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব নেই বলেও উল্লেখ করেন রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিডি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৯
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।