ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

২ বছরের কাছেরের দেখাশোনা করে ৩ বছরের লালা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
২ বছরের কাছেরের দেখাশোনা করে ৩ বছরের লালা ২ বছরের কাছেরের দেখাশোনা করে ৩ বছরের লালা। ছবি: সোহেল সরওয়ার-বাংলানিউজ

রাইখ্যং ক্যাম্প, হোয়াইটক্যং থেকে: রাইখ্যং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জরুরি চিকিৎসা কেন্দ্রের পাশের পিচ্ছিল বাশের সাঁকো ধরে হাটছে ২ বছরের কাছের। গায়ে নেই কোনো কাপড়। হঠাৎই হাত ফসকে বসে পরে। তারপর কান্না। দূর থেকে ছুটে আসে লালা। কাছেরকে তুলে নিয়ে হেটে যায় রাইখ্যং ক্যাম্পে থাকা নিজেদের ঘরের দিকে। চোখ মুছিয়ে দেয় লালা। কাছেরের হাতে মুড়ি দিয়ে কান্না থামায় লালা, কাঁদে না ভাই। 

লালা আর কাছের দুই ভাই। মিয়ানমারের কেরিপ্রাং গ্রামে ছিল তাদের বাড়ি।

মা আমিনার আদরের দুই দুলাল ছিল লালা আর কাছের। দুই জনের বয়সের ফারাক মাত্র এক বছর। মায়ের হাত ছাড়া ভাত খেতো না দুই ভাই। কিন্তু এক রাতেই যেন সব শেষ। কেরিপ্রাং গ্রামের বাড়ি গুলোতে ধরিয়ে দেয়া হলো আগুন। মিয়ানমার সেনাবাহিনী আর কালো মুখোশ পড়ালোকজন এসে হত্যা করা শুরু করল গ্রামের মানুষদের।
 
লালা, কাছেরের বাবা মোহাম্মদ আবুল আর মা আমিনা সন্তানদের নিয়ে পালানোর জন্য দৌড়ানো শুরু করলো। লালা বাবার কোলে আর কাছের মায়ের কোলে। হঠাৎ একটি গুলি ভেদ করে যায় আমিনার পিঠ। পড়ে যায় আমিনা। কোল থেকে ছিটকে পড়ে কাছের। কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করে আমিনা। মাতৃহারা হয়ে পরে লালা আর কাছের।
 
লালা খানিকটা বুঝতে পারে বৈকি। কিন্তু কাছের! এখনো কাছের বুঝতে পারে না, মা ডাকলেই আর ভাতের বাটি নিয়ে আমিনা আসবে না। কেউ যদি জানতে চায় তোমার মা কোথায়, সোজা সাপ্টা জবাব দেয় মা মরে গেছে। কিন্তু মায়ের কথা মনে পরলে, মার কাছে যাবো বলেই কাঁদতে শুরু করে কাছের। আর তখন মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়ার একটাই মানুষ, সে হলো লালা।
 
মায়ের মৃত্যুর পর যেনো বয়স খানিকটা বেড়েই গেছে লালার। দুই বছরের ভাইকে মাঝে মধ্যে কোলেও নেয়ার চেষ্টা করে বলে জানান রাইখ্যং ক্যাম্পে থাকা লালাদের প্রতিবেশি রোহিঙ্গারা। কারণ বাবা আবুল সারাদিন ছোটেন টিকে থাকার জন্য। কখনো ছোটেন ত্রাণ সংগ্রহের জন্য কখনো বা ছোটেন ঘর বনানোর প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহে।
 
কাছেরের একটু কান্না শুনলেই ছুটে আসে লালা। বুকে জড়িয়ে ধরে। আদর করে। লালা আর কাছেরকে দেখে মাঝে মধ্যে চোখেপানি আসে প্রতিবেশী রোহিঙ্গাদের। মিয়ানমারের বটতলি থেকে আসা জরিনা বলেন, এই টুকুন ছেলে লালা কি যে ভালোবাসে ছোট ভাইটারে। খাবার দেয়া থেকে সব কিছু করে। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবে না কেউ। চোখে পানি চলে আসে বাচ্চা দুইটারে দেখে। মা টারে চোখের সামনে গুলি করে মারছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
 
লালা কতোটা আদর করে জানতে চাইলে আধো আধো স্বরে কাছের বলে, ভাই খুব আদর করে। আজ লালার সঙ্গী কাছের আর কাছেরের সঙ্গী লালা।
 
মিয়ানমারের সহিংসতায় নিহত হয়েছেন অসংখ্য নারী পুরুষ। মাতৃহারা হয়েছে লালা আর কাছেরের মতো অসংখ্য শিশু। মাতৃহারা এসব শিশুর জীবনে আর কখনো মিলবে না মায়ের ভালোবাসা।
 
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী মিয়ানমারের চলমান সহিংসতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ১৭ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু কক্সবাজারের স্থানীয়দের মতে ১৫ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে ৬০শতাংশই শিশু।

** কাদায় মাখা শরণার্থী জীবন
** ‘পুরুষদের করা হয়েছে জবাই, নারীদের ধর্ষণ’
** কাঁটাতারের সাথেই বসত!
** ছয়মাসের খুরশীদার দায়িত্ব নেবেন কি কেউ!
** পেটে ভাত নেই, কাপড় দিয়ে কী হবে!
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
এসও/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।