ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পেটে ভাত নেই, কাপড় দিয়ে কী হবে!

উর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
পেটে ভাত নেই, কাপড় দিয়ে কী হবে! শিশু-নারী নির্বিশেষে সবার চোখে-মুখে খাবারের জন্য নীরব হাহাকার। ছবি: সোহেল সারোয়ার

উখিয়া থেকে: ‘বাবা কাপড় দিয়া কী করবো। কতো দিন ভাত খেতে পাই না জানি না। পেটে ভাত না থাকলে কাপড় দিয়া কী করবো! তারপর যে ঘরে আছি তার কোনো বেড়া নাই। বৃষ্টি এলে আমরাই ভিজে যাই। কাপড় রাখবো কী করে! কাপড় না দিয়ে একটু যদি খাবার বা চাল দেন তাহলে খেয়ে বেঁচে থাকতে পারি।’ 

কথাগুলো বলছিলেন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বর্গিয়ার বিল গ্রাম থেকে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশে আসা ষাটোর্ধ্ব অকর উদ্দিন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ‍অভিযানের মুখে পালিয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া এমন হাজারো মানুষের মুখে এখন কেবল দু’বেলা পেট পুরে খাবার আকুতি।

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় প্রবেশপথেই চোখে পড়বে হাজারো রোহিঙ্গা শরণার্থী। কুতুপালং ও বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, পলিথিন দিয়ে বানানো ছাউনির ওপর রাখা হয়েছে অসংখ্য ত্রাণের কাপড়। ঘরের সামনে ও রাস্তায়ও ফেলে রাখা হয়েছে সে কাপড়। রাস্তার দুই পাশেও দেখা যায় কাপড়ের স্তূপ।

ত্রাণের গাড়ি এলেই শিশু কোলে নিয়ে ছোটেন মায়েরা। এক মুঠো খাবারের আশায় ছোটার পর কেউ যদি কাপড় ছুড়ে দেন, তাহলে মুখে নেমে আসে হতাশা।

শিশু-নারী নির্বিশেষে সবার চোখে-মুখে খাবারের জন্য নীরব হাহাকার।  ছবি: সোহেল সারোয়ার
খাবারের আশায় বারবার ছোটাছুটি করা এমনই একজন বেগম। এক বছরের মেয়ে হাজরাকে কোলে নিয়ে ছুটেছেন একটি সাদা গাড়ির দিকে। বেগমের সঙ্গে বাচ্চা কোলে নিয়ে ছুটেছেন আরও অনেকেই। কিন্তু গাড়ির কাচ খুলে যখন কাপড় ছুড়ে দেওয়া হলো। বেগমের চোখ দিয়ে রীতিমতো পানি ঝরলো।

তিনি সেখানেই বাংলানিউজকে বলেন, আর কিছু না দিন, একটু পানিতো দিতে পারতেন। কোলের বাচ্চাকে রাস্তার পানি খাওয়াচ্ছি কখনো কখনো। কাপড় দিয়ে কী করবো।  

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ত্রাণ হিসেবে আনা পুরানো কাপড় ট্রাক থেকে ছুড়ে দেওয়া হয় শরণার্থীদের ভিড়ের মধ্যে। এর বেশিরভাগই কাঁদায় মাখামাখি হয়। আর যা কিছু ভালো থাকে তার বেশিরভাগই প্যান্ট শার্ট বা অন্যান্য কাপড়। কিন্তু এখন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যেহেতু মাথা গোঁজার ঠাই নেই, তাই তারা কাপড় নিতে চান না। কারণ সেই কাপড় রাখার যে জায়গা প্রয়োজন তা-ও তাদের নেই।  

মংডু থেকে আসা বয়স্ক সাফুরা বলেন, গত দুই দিনে শুধু একটা কলা খেয়েছি। আমি বুড়া মানুষ অন্যদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে খাবার নিতে পারি না। দুপুরে একটা গাড়ি এসে থামলো। ভিড় কম দেখে গেলাম। একটা পুটলি ছুড়ে মারলো। ভাবছিলাম চাল আছে। এখন দেখি কাপড়।

প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ত্রাণ দিতে আসেন উখিয়া ও টেকনাফে থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। এই ত্রাণের বড় অংশ থাকে পুরনো কাপড়। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় এই কাপড়ের চেয়েও খাবার গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সচেতন মহল। তারা মনে করেন, রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের পোশাক পরিধানে পার্থক্য রয়েছে। রোহিঙ্গা নারীরা যেমন থামি আর জামা পড়তে অভ্যস্ত, ঠিক তেমনি পুরুষরা লুঙ্গি আর শার্ট পরতে অভ্যস্ত। এ কারণেও পোশাক-আশাকের প্রতি আগ্রহ কম। এখন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ হিসেবে প্রথমে দরকার খাবার।  একটি ত্রাণের ট্রাক আসতেই রোহিঙ্গাদের ভিড়।  ছবি: সোহেল সারোয়ার
বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে চার লাখ রোহিঙ্গা ঢুকেছে। এরমধ্যে ৬০ শতাংশই শিশু। স্থানীয়দের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে ৮ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন। পরিস্থিতির এখনই লাগাম না টানলে উখিয়া-টেকনাফে চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
ইউএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।