ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রানা প্লাজা ট্রাজেডি

মেয়ের পোড়া ছাই পেলেও শান্তি পেতাম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
মেয়ের পোড়া ছাই পেলেও শান্তি পেতাম মেয়ের পোড়া ছাই পেলেও শান্তি পেতাম

গাইবান্ধা: ২৪ এপ্রিল। দিনটি দেশবাসীর কাছে বেদনার। ২০১৩ সালের এ দিনে সাভারের ‘রানা প্লাজা’ ধসে প্রাণ যায় ১১ শতাধিক মানুষের। সেদিনের ঘটনা মনে হলে সবারই হৃদয় কেঁপে ওঠে।

স্বজন হারানোর যন্ত্রণা আর ক্ষতের আঘাতে এখনও কাতর দেশের বহু পরিবার।

ভবন ধসের ঘটনায় গাইবান্ধার সাত উপজেলায় নারীসহ নিহত হন ৪৯ জন।

এছাড়া এ জেলায় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ১১ জন। ওই দুর্ঘটনায় গাইবান্ধার শতাধিক নারী-পুরুষ আহত হন। যাদের অনেকেই কোনো না কোনো অঙ্গ হারিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।

ওই দুর্ঘটনায় নিখোঁজ অনেকের একজন গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের মধ্য ভাঙ্গামোড় গ্রামের বিথি খাতুন (১৮)। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম মেয়েকে হারিয়ে দিশেহারা তার স্বজনরা।

বিথির মা আঞ্জুয়ারা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, মেয়ে আমার বেঁচে আছে না মরে গেছে তাও জানতে পারিনি। ঘটনার দুই-তিন দিন আগেও বিথি ফোনে বলেছিল, মা চিন্তা করো না। আগামী সপ্তাহে বেতন পাবো। বেতন পেলেই বাড়িতে আসবো আর নতুন ঘর বানানোর কাজ শুরু করবো। কিন্তু ঘর তো দূরের কথা, মেয়েকে আজও খুঁজে পেলাম না।

এ ঘটনায় অনেকেই তাদের নিখোঁজ, আহত বা মৃত সন্তানকে খুঁজে পেয়েছে। কেউ কেউ হাত-পা হারিয়ে বাড়ি ফিরেছে। কিন্তু আমার বিথির খোঁজ আজও পেলাম না। মেয়ের লাশ না পাই, ওর যদি এক টুকরা পোড়া হাড়-হাড্ডির ছাইও পেতাম তবু শান্তি পেতাম, এভাবেই নিখোঁজ মেয়ের ছবি হাতে কেঁদে কেঁদে বলেন আঞ্জুয়ারা বেগম।

বিথির বাবা আব্দুল বারি বাংলানিউজকে বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমি কোনো কাজকর্ম করতে পারি না। স্ত্রী আর দুই মেয়ে-এক ছেলে নিয়ে আমাদের সংসার ছিল। ছোট মেয়ে ফাইমার বিয়ে হয়েছে। আর ছেলে আশিকুর রহমান স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। তাই বড় মেয়ে বিথিকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলাম গার্মেন্টসে কাজের জন্য। রানা প্লাজার তৃতীয় তলার একটি  ওয়াশিং এ কাজ নিয়েছিল সে। সে চাকরি করে বাড়িতে টাকা পাঠাতো। সেই টাকায় চলতো আমাদের সংসার। কিন্তু ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় নিখোঁজ হয় সে। এখন বিথি নেই। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।

বিগত চার বছরে বিথির কোনো সন্ধান না পেয়ে পরিবারটি আজও তার পথ চেয়ে আছে। একমাত্র কর্মক্ষম মেয়েকে হারিয়ে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে হতদরিদ্র এ পরিবারটির।

এদিকে, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় গাইবান্ধায় নিহতদের পরিবার ও আহতদের অনেকেই সরকারি-বেসরকারি অনুদান পেলেও বিথির পরিবারের ভাগ্যে জোটেনি কোনো সহায়তা।

সাদুল্যাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান হাবীব বাংলানিউজকে জানান, উপজেলায় নিহতদের পরিবার ও আহতদের সরকারিভাবে সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া নিখোঁজদের পরিবারগুলোকেও সরকারি ও বেসরকারিভাবে অনুদান দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।