ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

২ জঙ্গি নিহত, আছে আরও, অভিযান চলবে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৭
২ জঙ্গি নিহত, আছে আরও, অভিযান চলবে আতিয়া মহলে ‘অপারেশন টোয়ালাইটে’ সেনাবাহিনী। ছবি: আইএসপিআর

সিলেট থেকে: সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় ‘আতিয়া মহল’র জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন টোয়ালাইটে’ দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে। ভেতরে আরও এক বা একাধিক জঙ্গি আছে। জঙ্গিরা মহলের ভবনটির নিচ তলায় আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) পেতে রাখায় সেটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে, এ কারণে সেখানে সতর্কতার সঙ্গে অভিযান চালাতে হচ্ছে। তাই অভিযান কবে শেষ হবে বলা যাচ্ছে না, তবে জঙ্গিদের নিউট্রালাইজ (নিষ্ক্রিয়) করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।

অপারেশন টোয়ালাইট নিয়ে রোববার (২৬ মার্চ) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে অভিযানস্থলের পাশে কদমতলীর পাঠানপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনের ঈদগাহে ব্রিফিং করে এসব কথা জানান সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান।  
ব্রিফিং করছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান।                     <div class=

ছবি: আবু বকর-বাংলানিউজ" src="http://www.banglanews24.com/media/imgAll/2016October/bg/Sylhet-BG20170326220721.jpg" style="width:100%" />বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দিনগত রাত থেকে টানা ৩০ ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখার পর শনিবার (২৫ মার্চ) সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে শুরু হয় ‘অপারেশন টোয়ালাইট’। লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বে পুলিশ ও সোয়াট বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে টানা ৩৩ ঘণ্টা ধরে অভিযান চালাচ্ছেন সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোরা। শুক্রবার (২৫ মার্চ) ভোর থেকে অভিযানস্থল এবং এর আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। অভিযানস্থল পুরোপুরি কর্ডন করে রেখেছেন সেনাসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।  

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল, ভেতরে জিম্মি থাকা বাড়িটির বাসিন্দাদের উদ্ধার করে নিরাপদে বাইরে নিয়ে আসা। ৭৮ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে উদ্ধারের মাধ্যমে আমরা সেটি সফলভাবে করতে পেরেছি। এখন লক্ষ্য হচ্ছে, অভিযান পরিচালনাকারী নিজেদের সদস্যদের নিরাপদে রেখে জঙ্গি নির্মূল করা। ’

‘আমরা অ্যাজ আর্লি অ্যাজ পসিবল (যত দ্রুত সম্ভব) অপারেশন শেষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে, নিচ থেকে জায়গায় জায়গায় আইইডি লাগানো। নড়াচড়া করাও যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। এরমধ্যেও আমাদের কমান্ডোরা ঝুঁকি নিয়ে চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন অ্যাপ্রোচ (পদ্ধতি) প্রয়োগ করে জঙ্গিদের নিউট্রালাইজ (নিষ্ক্রিয়) করার চেষ্টা করছেন। ’ব্রি. জে. ফখরুল আহসান বলেন, ‘নিশ্চিত করে বলতে পারছি না এক্স্যাক্টলি (ঠিক) কখন অপারেশনটা শেষ হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। মহলের বাসিন্দাদের উদ্ধার করা ছিল প্রথম লক্ষ্য। সে কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে পেরেছি। এখন তাড়াহুড়ো নেই। সতর্কভাবে কাজ করছি। কমান্ডোরা বিভিন্ন টেকনিক ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছেন। ’আতিয়া মহলে সেনা অভিযানের একটি চিত্র।  ছবি: আইএসপিআরভেতরে জঙ্গি থাকার বিষয়ে সেনাবাহিনীর এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছি না, কতজন জঙ্গি ভেতরে আছে। তবে এক বা একাধিক ভেতরে আছে। দুই জঙ্গি দৌড়াদৌড়ি করার সময় আমাদের কমান্ডোরা তাদের গুলি করেছে। তারপর তাদের পড়ে থাকতে দেখা গেছে গ্রাউন্ড ফ্লোরে। এখন যারা আছে, তাদের মধ্যে কোনো নারী সদস্য আছে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নই। তবে থাকতে পারে। ’

জঙ্গিরা অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত জানিয়ে ব্রি. জে. ফখরুল আহসান বলেন, ‘তাদের কাছে স্মল আর্মস আছে, আইইডি আছে, তারা ওয়েল ইকুইপড (অস্ত্র-শস্ত্র সজ্জিত)। আমরা গ্রেনেড চার্জ করার পর তারা উল্টো আমাদের দিকে সেটা ছুড়েছে। সবার গায়ে সুইসাইডাল ভেস্ট আছে। আর স্মল আর্মস দিয়ে ফায়ার করছে। ’

তবে কমান্ডোরা সবাই নিরাপদে আছেন এবং কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানান সেনাবাহিনীর এ কর্মকর্তা। ৪-৫ জন জঙ্গিকে ঘিরে ‘আতিয়া মহলে’ অপারেশন হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে এ ব্রি. জে. ফখরুল আহসান বলেন, সেরকমই বলা যেতে পারে।

তবে অভিযানকালে বাইরে বিস্ফোরণ যারা ঘটিয়েছে তাদের সঙ্গে ভেতরের জঙ্গিদের যোগসূত্র আছে কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা যারা তদন্ত করছেন, তারা ভালো বলতে পারবেন। আম‍াদের এখানে টার্গেট দেওয়া হয়েছে, টার্গেট নিউট্রালাইজ (নিষ্ক্রিয়) করতে, আমরা তা করছি। সবাই নিরাপদে থেকে টার্গেট নিউট্রালাইজ করাই এখন উদ্দেশ্য। ’
আতিয়া মহল থেকে উদ্ধার লোকজন।  ছবি: আইএসপিআর
অভিযান শুরুর পর থেকে শনিবার দুপুর নাগাদ ওই বাড়িতে জিম্মি হয়ে থাকা ২৮ পরিবারের ৭৮ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় সেনাবাহিনী। তবে অভিযান চলাকালেই শনিবার রাতে অভিযানস্থলের বাইরে ৩০০ গজ উত্তরের রাস্তায় দু’দফা বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬ জন, আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন সাংবাদিক, পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যসহ ৩২ জন।

নিহতদের মধ্যে আছেন- জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম ও আদালত পুলিশের পরিদর্শক চৌধুরী মো. আবু কয়সার। তারা দু’জনই পুলিশের বোমা নিস্ক্রিয়কারী দলের সদস্য ছিলেন। অপর নিহতরা হলেন- দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগের উপ পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুল ফাহিম, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহিদুল ইসলাম অপু, নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ার বাসিন্দা ডেকোরেটর ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম ও খাদিম শাহ।

ওই বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিস্ফোরণস্থল ফিতা টানিয়ে সুরক্ষিত করে রেখেছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, ‘মর্জিনা’ নামে কোড ব্যবহার করে ওই বাড়িটিতে অবস্থান নিয়েছে জঙ্গিরা। ভেতরে নব্য জেএমবি নেতা মুছা থাকতে পারেন।

আর পড়ুন:
** রাতেও বিস্ফোরণ, গুলির শব্দ, উৎকণ্ঠায় শিববাড়ি এলাকা
** প্যারা-কমান্ডোদের ‘অপারেশন টোয়ালাইট’র খণ্ডচিত্র

** আতিয়া মহলে নিহত দুই জঙ্গি
** আতিয়া মহলে অভিযান চলবে
**সিলেটে অভিযানস্থলে থেমে থেমে সংঘর্ষ
**জঙ্গি আস্তানার কাছে বিস্ফোরণে ২ পুলিশসহ নিহত ৫, আহত ৩২
** অভিযানস্থলের কাছে বোমা বিস্ফোরণে নিহত ২, আহত ৩৫
** অভিযানস্থলের কাছে বোমা বিস্ফোরণে পুলিশসহ নিহত ২
** বোমা বিস্ফোরণে আহত যুবকের হাসপাতালে মৃত্যু
** জঙ্গি আস্তানায় প্যারা-কমান্ডো সদস্যরা
** বেসরকারি কোম্পানির নামে ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় জঙ্গিরা
** সিলেটে অভিযানে যাচ্ছে সোয়াট টিম
** সিলেটে পৌঁছেছে সোয়াট টিম
** জঙ্গি আস্তানার চার পাশে অবস্থান সোয়াট টিমের
** আত্মসমর্পণে সাড়া দিচ্ছে না জঙ্গিরা
** জঙ্গি আস্তানায় সোয়াট টিমের অভিযান
** জঙ্গি আস্তানার সামনে দুই অ্যাম্বুলেন্স
** হাতকড়া পরিহিত একজনকে বের করেছে সোয়াট
** অভিযানস্থলে ক্রেন-জেনারেটর, এসেছে ফায়ার সার্ভিস

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৭
এনইউ/আরআইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।