ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কলকাতার চায়না টাউন ও চাইনিজ খাবার

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৭
কলকাতার চায়না টাউন ও চাইনিজ খাবার কলকাতার চীনা খাবার; ছবি-বাংলানিউজ

কলকাতা: চীনের পণ্য যেমন প্রায় গোটা বিশ্বের বাজারে ছেয়ে গেছে তেমনই চীনের খাবারও পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই সমানভাবে জনপ্রিয় হয়েছে। কলকাতায় চীনা খাবার এতোটাই জনপ্রিয় যে এটা কলকাতাবাসীর রান্নাঘরে প্রবেশ করে নিজেদের স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। তবে কলকাতায় বসে শুদ্ধ চীনা খাবার খেতে চাইলে যেতে হবে একমাত্র চায়না টাউনে।

বলা যেতে পারে কলকাতার ভিতরে একটা মিনি বেজিং এই চায়না টাউন। কলকাতা পূর্ব অংশে ট্যাংরা এলাকায় অবস্থিত এই চীনা পাড়ায় চীনা খাবারের বেশ ছোটবড় কিছু রেস্তোরাঁ আছে।

বলা যায় বিশুদ্ধ চীনা খাবারের খনি কলকাতার চায়না টাউন। চীনা রীতি রেওয়াজ মেনে এমন কি চীনে যে ধরণের মশলা দিয়ে বিভিন্ন খাবার রান্না করা হয় সেই ধরণের মশলা ব্যবহার করে এই রেস্তোরাঁগুলোতে খাবার পরিবেশন করেন চীনা রাঁধুনিরা।

কলকাতার এই চীনা পাড়ার একটা অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য আছে। এখানে যেমন খুব ধুমধাম করে চীনা নববর্ষ পালন করা হয় ঠিক তেমন ভাবেই এই পাড়ায় গেলে দেখা যাবে চীনা তরুণদের মোবাইলে চলছে হিন্দি চলচ্চিত্রের গান। প্রায় সকলেই হিন্দি এবং বাঙলা বুঝতে পারেন , বলতেও পারেন।

এই এলাকার রেস্তোরাঁগুলোতে চাউমিন চিলি চিকেন সঙ্গে পাওয়া যায় পিকিং রোস্টেড ডাক, গ্যাং ব্যাং চিকেন, স্প্রিং রোল, ডামপ্লিংস-এর মতো চিনা খাবার। এই খাবারগুলি খেতে কলকাতা সহ কলকাতার আশেপাশের অঞ্চল থেকে চায়না টাউনে প্রতিদিন ভিড় জমান বহু মানুষ। কলকাতায় চীনাদের ইতিহাস নিয়ে চায়না টাউন ঘুরে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেল।

সম্রাট অশোকের রাজত্ব কালে ফা হিয়েন প্রথম চীনের নাগরিক যিনি ভারতে আসেন। তিনি যেখানে প্রথম পা রাখেন সেই জায়গার তৎকালীন নাম ছিল তাম্রলিপ্ত।   রূপনারায়ন নদীর তীরের তাম্রলিপ্ত বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক বলে পরিচিত।

কলকাতার চায়না টাউনে ঘুরতে ঘুরতে আরও একটি তথ্য উঠে এলো। ‘চিনি’ যা বাঙালির প্রায় প্রতিটি খাবারের অঙ্গ সেই ‘চিনি’ নিয়ে এসেছিলেন চীন থেকে কলকাতা তথা ভারতে আসা চীনের নাগরিকরাই।

এরপর পর্তুগিজদের হাত ধরে ভারতের বিভিন্ন বন্দরে শ্রমিক হিসেবে আসেন চীনের নাগরিকরা। ছড়িয়ে পরেন আসাম, পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। এই ভাবেই ভারতের সংস্কৃতির সঙ্গে মিলেমিশে যায় চিনা সংস্কৃতি থেকে শুরু করে রান্না।

কলকাতার ট্যাংরা এলাকার ট্যানারিগুলোর সঙ্গে এখনও অনেক চীনা মানুষ যুক্ত। বর্তমানে চায়না টাউনে প্রায় ২০০০ চীনা মানুষ বাস করেন। আগে এই সংখ্যাটা ছিল অনেক বেশি। জনসংখ্যা কমে গেলেও চাউমিন, চিলি চিকেন, সেজোয়ান চিকেন, মাঞ্চুরিয়ান, হুননান চিকেন কিংবা রাইস নুডুলসের আসল স্বাদ চেখে দেখার কথা উঠলেই প্রথমেই আসে চায়না টাউনের কথা। খাবারে স্বাদ শুধু  দারুণ নয় দামের দিক থেকেও এই অঞ্চলের রেস্তোরাঁগুলো যথেষ্টই পকেট বান্ধব।

শুধু রেস্তোরাঁই নয় ট্যাংরা, বউ বাজার অঞ্চলের ফুটপাতে বসা চিনা খাবারগুলো বিশুদ্ধ চীনা স্বাদ পরিবেশন করে। তবে ফুটপাতের চীনা খাবার পাওয়া যায় মূলত সকালে। নাস্তা হিসেবে কলকাতার অনেকেই  বউ বাজার, ট্যাংরা এলাকার ফুটপাতের চীনা খাবার পছন্দ করেন। একদিকে যেমন ভারতীয় খাবারে চিনা প্রভাব লক্ষ্য করা যায় অন্যদিকে কলকাতার চীনাদের হেঁসেলে ভারতীয় রন্ধন প্রণালীর ব্যবহার চোখে পড়ার মতো।

কলকাতার চীনা পাড়ার দৌলতেই একদিকে কলকাতার বাঙালির হেঁসেলে আকছার রান্না হচ্ছে চাউমিন ,মাঞ্চুরিয়ান থেকে সেজোয়ান চিকেন অন্যদিকে চীনা হেঁসেলে রান্না হচ্ছে মাছের ঝোল, কোপ্তা থেকে মালাইকারি। এই ভাবেই বহু বছর ধরে মিশে যাছে চীন এবং পশ্চিমবঙ্গের রন্ধন প্রণালী যার কেন্দ্রে রয়েছে শহর কলকাতা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা,২১ এপ্রিল, ২০১৭
ভি.এস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।