ঢাকা, শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

পর্যটন

১৫৪১৯ ফুট উচ্চতায় নীলাভ পানির ছোট্ট বিস্ময় লেক!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৭
 ১৫৪১৯ ফুট উচ্চতায় নীলাভ পানির ছোট্ট বিস্ময় লেক! লারকে পাসের পথে ১৫৪১৯ ফুট উচ্চতায় দেখা ছোট্ট নীল পানির লেক/ছবি: বাংলানিউজ

ধরমশালা থেকে আজ আমরা যাচ্ছি লারকে বেস ক্যাম্পের উদ্দেশে। সেই ভোর রাত থেকেই জেগে উঠেছে এ জায়গা। যারা লারকে পাস অতিক্রম করেন তারা ভোর রাতে উঠেই রওয়ানা দেন ধরমশালা থেকে। সকালে আমরা যখন ধরমশালা ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন এ জায়গা একেবারে সুনসান। প্রায় সাড়ে চার হাজার মিটার উঁচু ধরমশালার আজকের সকাল রোদ ঝলমল।

বিস্বাদ ম্যাকারনি আর ফ্রাইড রাইস খেতে না পেরে অনেকেই রেখে দিলেন। মাল্লা আগেই চলে গেলো বেস ক্যাম্প ঠিকঠাক করার জন্য।

তাশি আমাদের সঙ্গে যাবে। লারকে পাসের পথে দেখা চোখ ধাঁধানো পর্বতমালালারকে পাসের বিপরীতে ভীমতাং থেকে বেস ক্যাম্পে এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে লারকে অভিযানের আরেক শেরপা নিমা ও দুই পোর্টার। তারা অভিযানের তাঁবুসহ কিছু সরঞ্জাম এবং খাবার-দাবার নিয়ে আসবে।

আমরা সাতটার কিছু পরে রওয়ানা হয়ে গেলাম। উচ্চতা এখন সাড়ে চার হাজার মিটারের ওপরে। ফলে তাড়াহুড়ো না করে ধীরে সুস্থে এগোতে লাগলো পুরো দল। ছোট্ট নীল পানির লেকপথে আর কোনো ট্রেকিং টিম নেই। আজকের পথ গেছে পাথুরে মোরেইন এলাকার মাঝ দিয়ে। ঘাসেরও চিহ্ন নেই। পথে এক জায়গা থেকে মানাসলু নর্থ শৃঙ্গ দেখা যাচ্ছিলো। এক সময় হাতের বাম দিকে লারকে রেঞ্জ শুরু হলো। যদিও মূল লারকে চূড়া এখান থেকে দেখা যাচ্ছে না। ডান দিকে ধূসররঙা পাহাড় সারি মিশেছে তিব্বত সীমান্তে। তিব্বত এখান থেকে খুব কাছে। সবুজহীন নির্জন এ প্রান্তরের আকাশ ঘন নীল।

আজকের পথ সোজা প্রান্তর চিরে এক চড়াইয়ের গোঁড়ায় গিয়ে শেষ হয়েছে। তার কাছাকাছি গিয়েই বিস্ময়ের মুখোমুখি হলাম আমরা। নীল আকাশের প্রতিবিম্ব বুকে নিয়ে ছোট্ট এক লেক। হলফ করে বলতে পারি এতো নীল কখনো দেখিনি। জিপিএসের উচ্চতা দেখাচ্ছে চার হাজার সাতশো মিটার। পাহাড়ে চরে বেড়াচ্ছে ভেড়াএকপাশে সাদা আর পাশে ধূসরের মাঝে নীল টিপ হয়ে আছে লারকে গ্লেসিয়ার থেকে নেমে আসা এ হিম পানির ধারা।

পানিতে বরফের চাই ভাসছে। আমরা অবাক বিস্ময়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। ছবি তোলা হলো প্রচুর। তারচেয়েও বড় কথা মনের ক্যামেরায় গেঁথে রইলো সে ছবি আজীবনের জন্য। চড়াই উঠতে উঠতেও বারবার পেছনে ফিরে দেখছি সেই আগুনে নীলের প্রতিচ্ছবি। লারকে পাসের আশপাশেই হবে আমাদের বেসক্যাম্প। ধরমশালা থেকে পাসের মাঝখানে একটি চায়ের দোকান ছাড়া আর কোনো মনুষ্য চিহ্ন নেই। শুধু এপ্রিল-মে ও সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের ট্রেকিং মৌসুমেই চালু থাকে এ চায়ের দোকান। ভোররাতে রওয়ানা দিয়ে এখানে এসে চায়ের বিরতি দেন ট্রেকাররা। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় অবশ্য এ চায়ের মূল্য আগুন গরম। ফলে তিন কাপ চা ভাগ করে ছয় জনে পান করতে হলো। বেসক্যাম্পের আগের পাহাড়চায়ের দোকানের লোকেরাই জানালো এ বছর এখন পর্যন্ত কয়েকটি ছোট দল লারকে শিখর আরোহণের চেষ্টা করলেও একটি অভিযানও সফল হয়নি। আমরা মোরেইন বোল্ডারের মাঝখান দিয়ে সাবধানে চড়াই বেয়ে উঠতে লাগলাম। বেশ কিছু দূরপর পরই লোহার খণ্ড দিয়ে পথের সীমানা চিহ্নিত করা রয়েছে। চায়ের দোকান থেকেই বলে দেওয়া হয়েছিলো লারকে পাস দুই ঘণ্টার মতো লাগবে। লারকে পাস থেকে সোজা দক্ষিণে লারকে শৃঙ্গ। বোঝা গেলো আমরা পাসের খুব কাছাকাছি। যদিও দেখে বোঝার উপায় নেই। সামনে শুধু ঢেউ খেলানো পাথুরে ঢিবি। এমন এক ঢিবি পার হতেই ডান দিকে মাল্লাসহ পোর্টারদের বসে থাকতে দেখা গেলো।

পাশে পানির ছোট্ট একটা জলধারা আছে। মাল্লা জানালো গতবছর ঠিক রাস্তার অপর পাশে বেসক্যাম্প করা হয়েছিলো। কিন্তু এ বছর সেখানে পানি নেই বলে এ সিদ্ধান্ত। প্রথম বেসক্যাম্পজিপিএসে দেখা গেলো বেসক্যাম্পের উচ্চতা ৫ হাজার ৮৬ মিটার। ধরমশালা থেকে আমরা একটানা হেঁটে এখানে এসেছি। স্বাভাবিকভাবেই সবাই বেশ ক্লান্ত। খেজুর আর পানি খেয়ে কিছুটা বিশ্রাম নেওয়া হলো। এর মাঝে নিমা আমাদের সঙ্গে এসে যোগ দিয়েছে। শুরু হলো তাঁবু টাঙানোর কাছ। মোট চারটা তাবু পিচ করা হলো। তিনটা তাঁবুতে আমরা ছয় জন অপরটিতে ক্লাইম্বিং গাইড তিনজন।     

বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৭
এএ

আঁধার ঠেলে উঁকি দিলো আগুনরঙা মানাসলু

হাতের নাগালে বরফ পাহাড়, বীরেন্দ্র লেকে মুগ্ধতা

সুন্দরতম গ্রাম লোহ, সামনে চোখ ধাঁধানো মানাসলু

১১ ঘণ্টা চড়াই-উৎরাই বেয়ে ৮৬৫০ ফুট উচ্চতার নামরুংয়ে

বুড়িগন্ধাকীর সাসপেনশন ব্রিজ পেরিয়ে ফিলিম

পাহাড়ের গায়ে ঝোলা নেপালের একমাত্র ক্লিপ ব্রিজ

কখনও সরু ফিতা কখনও এবড়ো-থেবড়ো পথে যাত্রা

চারিদিকে বান্দরবান বান্দরবান গন্ধ, সামনে আরক্ষেত

ধুলোবালি গিলতে গিলতে ট্রেকিং শুরুর আরুঘাট (পর্ব-৩)

হিমালয়ের মানাসলু ট্রেকিংয়ের অদম্য নেশায় যাত্রা (পর্ব-১)

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।