ঢাকা, শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

বুড়িগন্ধাকীর সাসপেনশন ব্রিজ পেরিয়ে ফিলিম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
বুড়িগন্ধাকীর সাসপেনশন ব্রিজ পেরিয়ে ফিলিম বুড়িগন্ধাকীর সাসপেনশন ব্রিজ/ছবি: বাংলানিউজ

আমরা ধীরে ধীরে উচ্চতার এক স্তর থেকে আরেক স্তরে প্রবেশ করছি তা জগত থেকে বের হয়েই বোঝা গেলো। হিমালয়ান অঞ্চলে বিদ্যুৎ সমস্যা দূর করতে নদী ও ঝরনার জলধারা ব্যবহার করে অসংখ্য মাইক্রো পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। জগতে দেখা গেলো এ চিত্র। চারপাশে পাইন, ফার, বার্চ গাছের সমাহার। ন্যাড়া পাথরও চোখে পড়ছে প্রচুর। বুড়িগন্ধাকীর নদী খাত ঘেঁষে পাথর কেটে বানানো হয়েছে সরু রাস্তা। এ দিয়েই স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করছে মানুষ, মালবাহী পশুর দল।

 



 

 

 

 

আমরা সির্দ্ধিবাসে এসে চা বিরতি দিলাম। আজই প্রথম চোখে পড়লো তিব্বতি বংশোম্ভূত লোকজন।

এ অঞ্চলের নিচের দিকে নেপালি গুরুং জনগোষ্ঠীর বসবাস হলেও যতই উপরের দিকে উঠবো সেখানে আধিক্য তিব্বতি জনগোষ্ঠীর। পাঁচরঙা প্রার্থনা পতাকা চোখে পড়ছে গ্রামজুড়ে। গুরুঙ্গ ও তিব্বতিদের জীবনাচরণে বেশ পার্থক্য। তিব্বতিরা ইয়াক, খচ্চরের মতো পশু পালনের উপর নির্ভরশীল। গুরঙ্গরা কৃষিকাজ, হোটেল ব্যবসায় বেশি মনোযোগী। ফিলিমের পথে দেখা বিশাল পাহাড়শ্রেণীচা বিরতির পর আমরা ফিলিমের পথে যাত্রা করলাম। সির্দ্ধিবাস থেকেই দূরে পাহাড়ের কোলে ফিলিম জনপদ দেখা যায়। নিন্তু পাহাড়ের নিয়ম মেনে আমরা যতই এগোতে লাগলাম ফিলিম তত দূরে যেতে লাগলো। পথে বুড়িগন্ধাকীর উপরে নির্মিত এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সাসপেনশন ব্রিজ পার হলাম। তারপর বিশাল এক চড়াই শেষে ছবির মতো সুন্দর ফিলিম। ফিলিম সত্যিই সুন্দর। বিশাল পাহাড়ি ঢালের একপাশে ধাপ চাষ পদ্ধতিতে আলু উৎপন্ন হচ্ছে। হিমালয়ের এ অঞ্চলে ফসলের বৈচিত্র্য অতটা নেই। ভুট্টা, আলু, মটরই মূলত প্রধান ফসল। এখন ফসল কাটা প্রায় শেষের পথে।  ফিলিমবেলা শেষের রিক্ততা মাঠজুড়ে অদ্ভুত শূন্যতা তৈরি করেছে। ফিলিমেও অনেক হোটেল লজ রয়েছে। লাঞ্চে চিকেন পাওয়া গেছে আপাতত এটিই সবচেয়ে বড় আনন্দের। খাওয়া শেষে বেশি দেরি করলাম না। সামনে পড়ে আছে দীর্ঘপথ। পাহাড়ের গা ঘেঁষে একেবেঁকে গিয়েছে পথ। খুব বেশি চড়াই উৎরাই নেই। যতদূর চোখ যায় শুধু ঢেউ খেলানো ধূসর সবুজ। অনেক নীচে বয়ে চলেছে বুড়িগন্ধাকী। এতোই নিচে যে তার শব্দও আর পাওয়া যাচ্ছে না। নির্জন দুপুরে অচেনা পাখির গুঞ্জন সঙ্গী করে আমরা পাড়ি দিচ্ছি দূরের পথ। ঘণ্টাদেড়েক পর খানিকটা উৎরাই ধরে বুড়িগন্ধাকীর এ পারে চলে এলাম।

লাকোয়া নামের এই জায়গায় অন্য আরেকটি রাস্তা ডান দিকে চলে গেছে সুম ভ্যালির দিকে। মানাসলু অঞ্চলে সেটিও একটি দেখার মতো জায়গা। অনেক ট্রেকারকে তাদের গন্তব্যের কথা জিজ্ঞেস করে সুম ভ্যালির কথা জানতে পেরেছি। আমাদের আজ রাতের গন্তব্য হওয়ার কথা ছিল ড্যাং। বিকেল হয়ে আসছে। নিজেদের রাতের আবাসের ব্যাপারে আলোচনা সেরে নেওয়া হলো। ড্যাংয়ের ৪৫ মিনিট আগে পেওয়া বলে একটি জায়গা আছে। যেখানে লজে থাকা-খাওয়ার ভালো বন্দোবস্ত।  ট্রেকারদের ব্যাকপ্যাকআর খোঁজ নিয়ে জানা গেলো ড্যাংয়ে আজ ট্রেকারদের বেজায় ভিড়। সেখানে মাত্র দু’টি লজ আছে। ফলে পেওয়াতেই আজ রাতের ঠিকানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। বিশ্রাম শেষে আমরা পথে নামলাম। আবার চড়াই। সবচেয়ে মজার ব্যাপার এই পুরো পথজুড়ে আমরা একটা বিশাল গাঁজা গাছের বন পার হয়ে এলাম। গাঁজা এ অঞ্চলে সম্ভবত কৃষিপণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।

পাইনে ছাউয়া উপত্যাকা পার হয়ে আমরা ছোট ছোট চায়নিজ বাঁশবনের ভেতরে ঢুকে গেলাম। এর মাঝ দিয়ে পথ। মাল্লা আগেই জানিয়েছিলো এখানে বণ্যপ্রাণী দেখার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। হলোই তাই। সোনালি মুখ পোড়া হনুমানের এক দলের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো। অনেক দিনের স্বপ্ন রেড পাণ্ডা দেখার। এ বনে তাদের বিচরণ রয়েছে। পুরো রেইন ফরেস্টের মতো আবহ। বিকেলে শেষে আঁধার ঘনিয়ে আসার মুহূর্ত, আমরা এসে পৌঁছালাম পেওয়া। মাত্র একটিই লজ। অবশ্য রুম পাওয়া গেলো। বুড়িগন্ধাকীর গর্জনে কান পাতা দায়। লজের বারান্দায় চেয়ার পেতে বসেই এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়া যায়। ডাইনিং রুমে আবার সেই সান্ধ্যকালীন জমজমাট আড্ডা। রাত বাড়ছে। অপেক্ষা আগামীকালের। দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে।       

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
এএ

পাহাড়ের গায়ে ঝোলা নেপালের একমাত্র ক্লিপ ব্রিজ

কখনও সরু ফিতা কখনও এবড়ো-থেবড়ো পথে যাত্রা

চারিদিকে বান্দরবান বান্দরবান গন্ধ, সামনে আরক্ষেত

ধুলোবালি গিলতে গিলতে ট্রেকিং শুরুর আরুঘাট (পর্ব-৩)

হিমালয়ের মানাসলু ট্রেকিংয়ের অদম্য নেশায় যাত্রা (পর্ব-১)

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।