ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

খেলা

দিয়েগো: যার তুলনা হতো পূর্বসুরীদের সঙ্গে

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২০
দিয়েগো: যার তুলনা হতো পূর্বসুরীদের সঙ্গে ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: একটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তুলনা হয় সাধারণত নিজেদের ক্লাসের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। কিন্তু সেই ক্লাসেই যদি এমন একজন থাকেন যার তুলনা হয় সিনিয়রদের সঙ্গে; তাহলে কেমন হয়? আর্জেন্টিনার দিয়েগো ম্যারাডোনা ছিলেন ফুটবল মাঠের তেমনি এক শিক্ষার্থী।

আশির দশকের এই খেলোয়াড়ের তুলনা হয় পঞ্চাশের দশকের পেলের সঙ্গে।  

মানচিত্রের হিসেবে অনেকটা প্রতিবেশী দেশ হলেও ফুটবল মাঠে সবসময়ই চির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলে দিতো আরেক বিতর্ক - কে সেরা? ম্যারাডোনা নাকি পেলে? ৬০ বছর বয়সে পৃথিবী ছাড়ার সময় সেই বিতর্ককেও ম্যারাডোনা সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন কী না তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ ১৯৭৭ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হওয়া ম্যারাডোনাকে তুলনা করা হতো ঠিক দুই দশক আগে ১৯৫৭ সালে অভিষেক হওয়া ব্রাজিলের কিংবদন্তি পেলের সঙ্গে।  

স্টেডিয়ামের বাইরে পেলের খেলা বিশ্ববাসী দেখেছে সাদা কালো টিভির পর্দায়। অন্যদিকে ম্যারাডোনার খেলা দেখা গিয়েছে রঙিন পিকচার টিউবে। ১৯৭৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে যখন পেলে বিদায় নেন তখনও আর্জেন্টিনার সাদা-নীল স্ট্রাইপ জার্সিতে অভিষেক হয়নি ম্যারাডোনার।  

১৯৮০ সাল থেকে মোটামুটিভাবে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। স্বর্ণালী সময় বলতে যা বোঝায় সেটিও বেশিদিনের না। ১৯৯০ সালেই নিজের ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্তগুলোর শেষ দেখে ফেলেন ম্যারাডোনা। মাদক এবং অনিয়ন্ত্রিত ব্যক্তিগত জীবনব্যবস্থার কারণে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৭ সালে অবসরের আগ পর্যন্ত সময়টি হয়তো ম্যারাডোনা নিজেও মনে করতে চান না।  

সেই ম্যারাডোনার তুলনা হতো ১৯৫৭ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৭ বছর ধরে ফুটবলের মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো পেলের সঙ্গে, যেখানে সাধারণত সমসাময়িক খেলোয়াড়দের মাঝেই সেরার লড়াই চলে।  

যেমন ধরা যাক পেলে-ম্যারাডোনা পরবর্তী ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার কথা। নিজেদের সময়ে কে সেরা ছিল - ব্রাজিলের রোনাল্ডো, পর্তুগালের লুইস ফিগো নাকি ফ্রান্সের জিনেদিনে জিদান? আরেকটু এগিয়ে আসলে বর্তমান সময়ে কে সেরা - আর্জেন্টিনা এবং বার্সালোনার লিওনেল মেসি নাকি পর্তুগাল এবং জুভেন্টাসের ক্রিশ্চিয়ানও রোনালদো।  

তবে এমন সব নজিরকে ছাপিয়ে সবসময় যে তুলনাটি আলোচনায় ছিল সেটি হচ্ছে - সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে? পেলে নাকি ম্যারাডোনা।  

বিতর্কের অবসান হয়তো হবে না কিন্তু খুব সংক্ষেপে এই দুই কিংবদন্তির তুলনা করলে দেখা যায়, ব্রাজিলের হয়ে ৯২ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৭৭টি গোল করেছেন পেলে। অন্যদিকে ৯১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে আর্জেন্টিনার হয়ে ৩৪টি গোল করেছেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। শুধু গোলের সংখ্যা হিসেব করলে ম্যারাডোনাকে এই তুলনার যোগ্য মনে হবে না। তাহলে জানতে হবে আরেকটু গভীরে।  

পেলে ছিলেন তার সময়ের ব্রাজিল দলের ফরোয়ার্ড স্ট্রাইকার বা ফিনিশার। অন্যদিকে ম্যারাডোনা ছিলেন এটাকিং মিডফিল্ডার যার মূল দায়িত্ব ছিল পেলের মতোই নিজ দলের অন্য ফরোয়ার্ড স্ট্রাইকার বা ফিনিশারের জন্য আক্রমণের ছক তৈরি করে দেওয়া। অনেক সময়েই দলের প্রয়োজনে মধ্যম মাঠ থেকে নিজেদের অংশে খেলতে হতো ম্যারাডোনাকে।  

২০০০ সালে ফিফা শতাব্দী সেরা ফুটবলার হিসেবে পেলে ও ম্যারাডোনাকে যৌথভাবে সম্মানিত করে। হয়তো ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা খোদ ফিফার কাছেও এই জবাব নেই - কে সেরা? পেলে নাকি ম্যারাডোনা?

বাংলাদেশ সময়: ০১৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২০
এসএইচএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।