ঢাকা, সোমবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২০ রবিউস সানি ১৪৪৭

সারাদেশ

মেহেরপুরে দেড় কোটি টাকার সার নিয়ে ধুম্রজাল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:১৯, অক্টোবর ১৩, ২০২৫
মেহেরপুরে দেড় কোটি টাকার সার নিয়ে ধুম্রজাল

মেহেরপুর: প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের এসওপি সার জব্দ নিয়ে মেহেরপুরের গাংনীতে শুরু হয়েছে ধোঁয়াশা। স্থানীয়দের চাপের মুখে গাংনী উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতিতে তিন হাজার তিনশ’ ৬০ বস্তা সার জব্দ করে গাংনী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহিদুল ইসলামের জিম্মায় রেখেছে প্রশাসন।

এসময় গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন, উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন, গাংনী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল গাফ্ফার উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, শনিবার (১১ অক্টোবর) রাতে কয়েকটি ট্রাকে করে তিন হাজার তিনশ’ ৬০ বস্তা সার মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক সড়কের গাংনীর বসুন্ধরাপাড়ায় আর এ এন্টারপ্রাইজের গোডাউনে আনলোড করা হয়।

এই গোডাউনের মালিক গাংনী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম এবং পরিচালনায় বাপ্পি ও আব্দুল হালিম।  

রহস্যজনকভাবে একই গোডাউন থেকে রোববার (১২ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে আবারো ওই সার ট্রাকে লোড শুরু করেন কয়েকজন। এতে স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হলে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগসহ পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের খবর দেন।  

এক পর্যায়ে মেহেরপুর জেলা প্রশাসককেও খবরটি দেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন, কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এক পর্যায়ে সারগুলো নিয়ে সৃষ্টি হয় ধুম্রজাল।  

পরে গাংনী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহিদুল ইসলামসহ শ্রমিক ইউনিয়নের কয়েকজন এসে জানান, এসওপি সারগুলো ঝিনাইদহ জেলার জন্য একটি তামাক কোম্পানি নিয়ে এসেছে। ওখানে সমস্যার কারণে এই গোডাউনে রাখা হয়েছে।

সারগুলো চিটাগাঙের নাফকো কোম্পানি থেকে কিনেছে একটি টোবাকো কোম্পানি। তবে, টোবাকো কোম্পানির কোনো লোক সারগুলোর কাছে যাননি।
আর এ এন্টারপ্রাইজের একজন পরিচালক বাপ্পি বলেন, ‘এটা আমাদের রড সিমেন্টের দোকান। শ্রমিকলীগ নেতা মনিরুজ্জামান ফোন করে বলেছে সারগুলো নামবে, পরে এসে কোম্পানির লোকজন নিয়ে যাবে। তারা ভাড়া দেবে। আমার ঘর ফাঁকা ছিল। আমার ঘরে সার নামিয়েছি। আজকে তারা নিয়ে যাচ্ছে। ’

তবে, গাড়ির চালকরা জানান, সার বোঝায় থাকলে ট্রাকের চাকা নষ্ট হয়ে যাবে এজন্য তারা সারগুলো এখানে নামিয়ে রেখেছেন। এ ব্যাপারে থানায় জিডি করতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু থানার অফিসার না থাকায় জিডি করা হয়নি বলে বলে জানান চালকেরা।

শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ও ট্রান্সপোর্টের এজেন্ট আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘এই সার চুয়াডাঙ্গার জীবনগরে আনলোড হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কি কারণে সেখানে সার আনলোড করা হয়নি। আমাদের ফোন করে বললো গাংনীতে মাল আনলোড করে নেন। আমরা এখনো জানিনা কি কারণে মালগুলো এখানে আনলোড করেছে। ’

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন বলেন, ‘এই সারটা বৃটিশ আমেরিকান কোম্পানি এখানে নিয়ে এসেছে। আমাদের গাংনী থানার ওসি জানানোর পর ঘটনাস্থলে এসে সারটা আপাতত জব্দ করে এবং তাদের চালানের কাগজপত্র নিয়েছি। আগামীকাল সারের প্রকৃত মালিকদের আসতে বলেছি। তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসনে বলেন, বর্তমানে সার নিয়ে একটি সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সার যারা কিনেছেন তাদের সাথে কৃষি অফিসারের কথা হয়েছে। তারা আসার পর উপযুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হবে।

উল্লেখিত প্রতি বস্তা এসওপি সার বাজারে একশ’ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এ সারের প্রতি বস্তার (৫০ কেজি) সরকারি ডিলার মূল্য ছয় হাজার দুইশ টাকা। কিন্তু চোরাইপথে বিক্রি হয় ছয় হাজার আটশ টাকা।

এসএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।