চাঁদপুর: গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর উজ্জীবিত হয়েছে চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনের রাজনৈতিক অঙ্গন।
গত বছরের আগের টানা ১৭ বছর ভিন্নমতের রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি হলেই হামলা-মামলা চলেছে।
এ আসনের রাজনৈতিক ইতিহাস বেশ হিংসাত্মক। সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন ছিলেন বহু মামলায় জর্জরিত। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বাইরে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, তারা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সরে যাওয়ার পর এখন সমানতালে মাঠে আছেন বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
জেলার সীমান্ত উপজেলা কচুয়ার রাজনৈতিক অধিকাংশ নেতার অবস্থান রাজধানীতে। কেউ বিদেশ থেকেও ভোটের সময় এসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। সাধারণ মানুষের জন্য সংসদ সদস্যদের (এমপি) কাছে গিয়ে সমস্যার কথা বলা ছিল খুবই কঠিন। কারণ এ আসনে পতিত সরকারের সাবেক এমপি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও ড. সেলিম মাহমুদ নির্বাচনী এলাকায় দলকে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। তাদের অনুসারী কিছু নেতাই সব সিদ্ধান্তে এগিয়ে থাকতেন। যার ফলে নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজগুলো সঠিক বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
এ আসনে গেল বছর ৫ আগস্টের পরে নির্বাচনী এলাকায় দলীয় ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন ও তার স্ত্রী জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সহ-সভানেত্রী নাজমুন নাহার বেবী।
বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে, আ ন ম এহসানুল হক মিলন কচুয়া থেকে মনোনয়ন না পেলে ঢাকায় পেতে পারেন। তখন তার স্ত্রীকে এ আসনে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে কচুয়ায় তারেক রহমানের ৩১ দফা নিয়ে প্রচারণায় নেমেছেন প্রবাসী বিএনপি নেতা প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান। এছাড়া আছেন ২০১৮ সালে এ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মালয়েশিয়া বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন। তিনি এলাকায় না এলেও তার সমর্থকরা মাঠে রয়েছেন।
এককভাবে মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী মুহাদ্দিস আবু নছর আশরাফী। আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং এনসিপির কোনো প্রার্থী এখনও নির্ধারণ হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ নির্বাচনী এলাকায় ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির রফিকুল ইসলাম রনি, ১৯৮৮ সালে একই দলের এ কে এম শহীদুল ইসলাম, ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের মেজবাহ উদ্দিন খান, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৮ এর আগ পর্যন্ত ছিলেন বিএনপির আ ন ম এহসানুল হক মিলন। ২০০৮ সাল থেকে এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।
চাঁদপুর নির্বাচনী আসন-১ (কচুয়া) ২৬০। শুধুমাত্র কচুয়া উপজেলা নিয়ে এ আসনের সীমানা। চলতি বছরের সর্বশেষ ২০ জুন হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুযায়ী এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮১ হাজার ৮৬৮ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ৬২ জন। হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৩ জন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সেটি দল ঠিক করবে। কিন্তু অতীতে আমি নির্বাচিত হয়ে কচুয়াবাসীর উন্নয়নে কাজ করেছি। পতিত হাসিনা সরকারের সময়ে বহু মামলা হামলার শিকার হয়েও আমি এখন পর্যন্ত কচুয়ার জনগণের পাশে আছি এবং থাকব।
প্রবাসী বিএনপি নেতা প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বলেন, তারেক রহমান রাষ্ট্র মেরামতের যে ৩১ দফা দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সম্ভব একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সেই ৩১ দফা নিয়ে আমি কচুয়ার জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি, জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করছি; দেশ নিয়ে তারেক রহমানের ভাবনা। বিশেষত ২৭তম দফা ফারমার্স কার্ড, ২৫তম দফা শিক্ষা; জনগণের মধ্যে একটি সাড়া ফেলেছে।
তিনি বলেন, কচুয়ার ২৫২টি গ্রামের মধ্যে ১৬০টিরও বেশি গ্রামে আমি গিয়েছি। জনগণ চাইছে একজন সৎ, শিক্ষিত ও ক্লিন ইমেজের তরুণ রাজনীতিবিদ। আমাকে যদি দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়- আমি বিএনপির সব নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ করে; জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটি সমৃদ্ধ কচুয়া গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ।
জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মুহাদ্দিস আবু নছর আশরাফী নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, জামায়াতে ইসলামী ন্যায় ও ইনসাফ কায়েম করার জন্য কাজ করছে। কুরআনের আইন বাস্তবায়ন হলে সমাজে সু-শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে। মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাবে।
তিনি বলেন, সংগঠন থেকে আমাকে কচুয়া-১ আসনের প্রার্থী মনোনীত করেছে। আমি নির্বাচনী এলাকার জনগণের কাছে সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলছি। আমি শিক্ষকতার পাশাপাশি সব সময়ই মানুষকে কুরআনের পথে আহ্বান করছি। জনগণের রায়ে নির্বাচিত হলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব ইনশাআল্লাহ।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হেলাল আহমেদ বলেন, চাঁদপুরের পাঁচটি আসনের কোনো আসনেই আমাদের দলের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। জেলা থেকে কেন্দ্রীয় সংগঠনে তালিকা নেওয়া হয়েছে। চাঁদপুর-১ কচুয়া আসনেও তিনজনের নাম দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী চূড়ান্ত হলে নাম প্রকাশ করা হবে।
এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া বলেন, আমাদের এখনো প্রার্থী ঠিক হয়নি। তবে, দল গোছানোর কাজ চলছে পুরোদমে, অচিরেই ঠিক করা হবে। চাঁদপুরের কোনো আসনেই এখনো কেউ কাজ করছেন না।
এসআই