হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় শিশু সুমাইয়া আক্তারকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার রহস্য দিন দিন জটিল হচ্ছে।
মৃত্যুর আগে দেওয়া ভাইরাল ভিডিওতে নিজের আপন চাচার নাম বললেও, মামলায় আসামি করা হয়েছে তার ফুফাতো চাচা আশিক মিয়াকে।
পুলিশ জানায়, ১৬ জুন সন্ধ্যায় বাড়ির পাশের মাঠে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ফেলে রেখে যায় চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়াকে। গুরুতর আহত অবস্থায় মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু নরসিংদী পৌঁছার আগেই তার মৃত্যু হয়। রাতেই মরদেহ বাড়িতে আনা হয়।
নিহত সুমাইয়া এক্তিয়ারপুর গ্রামের বেনু মিয়ার মেয়ে এবং এক্তিয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। হত্যার ঘটনায় থানায় নিহতের বাবার দায়ের করা মামলায় তার ফুফাতো চাচা আশিক মিয়াসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। আশিক একই গ্রামের আবু মিয়ার ছেলে। গত ২১ জুন র্যাব তাকে আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করে।
তবে ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও। সেখানে মেয়েটিকে আহত অবস্থায় জিজ্ঞেস করা হয়, “তোকে কে মারছে?”— উত্তরে মেয়েটি বলে, “রেনু। ” তখন প্রশ্ন করা হয়, “রেনু তোর কী হয়?”—সে উত্তর দেয়, “আমার চাচা হয়। ” কেন মেরেছে প্রশ্নের জবাবে মেয়েটি বলে, “আমি জানি না, সে কয়েল চেয়েছিল, আমি কয়েল দিতে গেলে আমাকে মেরে রেখে চলে যায়। ”
এই ভিডিও প্রকাশের পর গ্রামজুড়ে শুরু হয় জোর আলোচনা—আপন চাচা রেনু মিয়া কেন এখনও গ্রেপ্তার হননি? এ ঘটনার প্রতিবাদে ১৯ জুন এক্তিয়ারপুর স্কুল মাঠে মানববন্ধন করেন নিহতের সহপাঠী ও গ্রামবাসী।
বক্তারা বলেন, প্রকৃত হত্যাকারীকে আড়াল করে নিরীহদের ফাঁসানো হয়েছে। দ্রুত রেনু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে তদন্তের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
এদিকে পুলিশ জানায়, জায়গা সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র প্রায় এক বছর আগে এক্তিয়ারপুর গ্রামে সংঘর্ষ হয়। সেই বিরোধে এক পক্ষে ছিলেন নিহত শিশুর বাবা বেনু মিয়া ও চাচা রেনু মিয়া, অন্য পক্ষে ছিলেন আশিক মিয়া। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে— তাহলে কি পূর্ব বিরোধের জের ধরেই আশিক মিয়াকে আসামি করা হয়েছে?
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছাতিয়াইন পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) আশীষ কুমার দে বলেন, গ্রেপ্তার আশিক মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভাইরাল ভিডিও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
এছাড়াও মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, হত্যার রহস্য উদঘাটনে কাজ চলছে। পুলিশ ক্লু’র কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। শিগগিরই মূল হত্যাকারীকে শনাক্ত করা হবে।
এদিকে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, শিশুটি মৃত্যুর আগে জবানবন্দিতে যার নাম বলেছে, সে কি আসলে দায়ী? নাকি কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিতে চায় তদন্ত? গ্রামবাসী নিহতের পরিবার ও সাধারণ মানুষ এখন চায় সত্য প্রকাশ হোক। একজন শিশুর নির্মম মৃত্যু ঘিরে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তার শেষ হোক প্রকৃত বিচারে।
শনিবার (২৯ জুন) বিকেলে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে নিহত শিশুর বাবা বেনু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, পূর্ব বিরোধের জেরে আশিক মিয়া আমাকে হত্যার হুমকি দিত। তাই সন্দেহ হওয়ায় আশিকদের হত্যা মামলায় আসামি দিয়েছি। এখন পুলিশ তদন্ত করে মূল ঘটনা উদঘাটন করবে।
আরএ