চাঁদপুর: চাঁদপুরের সবচেয়ে বড় পাইকারি চামড়ার আড়ত শহরের পালবাজারে। দুজন ব্যবসায়ী গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির পশুর চামড়া কিনে আসছেন।

তাদের সংগ্রহের পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার। এ বছর কোরবানির একেকটি গরুর চামড়া খুচরা বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা দরে। ঈদের দিন বেশি চামড়া সংগ্রহ করেছেন ব্যবসায়ীরা, এরপর সংগ্রহ কমে এসেছে। তবে গরুর চামড়া বিক্রি হলেও ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়নি।

ঈদের দ্বিতীয় দিন রোববার (৮ জুন) সন্ধ্যায় শহরের পালবাজারের দুটি আড়তে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়। ওই সময় আড়তগুলোতে চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণ দিয়ে প্রস্তুত করতে দেখা যায় শ্রমিকদের।

সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের লালপুর থেকে চামড়া নিয়ে এসেছেন জিয়াউদ্দিন। তিনি বলেন, আমাদের গতকাল কোরবানি হয়নি। আজ কোরবানি শেষে চামড়া নিয়ে এসেছি। মাঝারি সাইজের গরুর চামড়া বিক্রি করেছি ৩০০ টাকা করে। এ ধরনের চামড়া সাত-আট বছর আগে কমপক্ষে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।

শহরের বাসিন্দা সোহানুর রহমান ছাগলের চামড়া নিয়ে এসেছিলেন বিক্রি করতে। আড়তদার তাকে জানান, তারা ছাগলের চামড়া কেনেন না। প্রয়োজনে নদীতে ফেলে দিতে বলেন।

শহরের মাদরাসা রোড এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, গত কয়েক বছর কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করিনি। এতিমখানায় দিয়েছি। কারণ খুচরা ব্যবসায়ী ছিল না। এ বছর আমাদের এক লাখ ৪১ হাজার টাকায় কেনা গরুর চামড়া বিক্রি করেছি ৫০০ টাকায়। স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ী বাসায় এসে কিনে নিয়ে গেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের পালবাজারের সবচেয়ে বড় পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ী ছিলেন এমদাদ পাটওয়ারী। তিনি কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। তার চামড়ার ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে এ বাজারে চামড়ার ব্যবসা করেন  বাচ্চু সরদার এবং মো. মাসুদ গাজী। এছাড়া সদর উপজেলার ঢালীরঘাট এলাকার মিরাজ এবং বিপনীবাগ বাজার এলাকার মো. আনোয়ার এ বছর খুচরা চামড়া কিনেছেন।  

পালবাজারের চামড়া ব্যবসায়ী মাসুদ গাজী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে চামড়ার দাম ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা বলা হলেও ওই দামে কেনা সম্ভব হয়নি। সরকারিভাবে চামড়া কেনা হয় না। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রিমূল্য নির্ধারিত হয়। তবে এ বছর আমরা চামড়া আকার অনুসারে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে কিনেছি। এরপর সাত থেকে ১৫ দিন এসব চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করে রাখতে হবে।  

তিনি জানান, তার কেনা চামড়ার পরিমাণ প্রায় তিন হাজার।
একই বাজারের অপর ব্যবসায়ী বাচ্চু সরদার বাংলানিউজকে বলেন, আমি বিগত ৩০ বছর ধরে চামড়ার ব্যবসায় জড়িত। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে চামড়ার ব্যবসা নষ্ট হয়ে গেছে। সারাদেশে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে নানা ঘটনা সবাই জানে। বিক্রি করতে না পেরে অনেক চামড়া নদীতেও ফেলে দেওয়া হয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন আর ব্যবসায় আগ্রহী না। পুরো জেলাজুড়ে একই চিত্র। আমরাও একই দরে চামড়া কিনেছি।

তিনি আরও বলেন, এবার তিন হাজারের বেশি চামড়া কিনেছি। লবণ কিনেছি দেড় লাখ টাকার। শুধু ঈদের দিনেই শ্রমিকদের খরচ দিয়েছি এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। শহরের পুরানবাজার ও পালবাজারের একাধিক ঘরে আমার চামড়াগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে। এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে এসব চামড়া ঢাকায় বিক্রি করব। আশা করছি, সব খরচ শেষে কিছু হলেও লাভ হবে।

এসআই