মাদারীপুর: পিতৃ পরিচয়ের আশায় মায়ের সাথে আদালতপাড়ায় ঘুরছে সাড়ে তিন বছরের শিশু আফিয়া! জন্মের পর এ পর্যন্ত বাবা বলে কাউকে ডাকতে পারেনি শিশু আফিয়া। সে জানে না আদৌ পাবে কি না তার বাবার পরিচয়।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে সৎ মা কাজল বেগম বিউটিকে বিক্রি করে দেয় একটি যৌনপল্লিতে। সেখানে থাকার পর একপর্যায়ে বিউটি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। এরপর যৌনপল্লির লোকজন মেয়েটিকে ফেলে দিয়ে যায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর জেলার কলাবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে। ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি রাত ১২টার দিকে বিউটিকে উদ্ধার করে সদর মডেল থানা পুলিশ। পরদিন আদালতে হাজির করা হলে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ফরিদপুরের ‘সেইফজোনে’।
সেখানে সিজারিয়ান করানো হলে কোলজুড়ে আসে এক ফুটফুটে মেয়ে। নাম রাখা হয় আফিয়া। আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠে বিউটির মেয়ে আফিয়া। কিন্তু আজও মেলেনি আফিয়ার পিতৃপরিচয়। মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত মা। নিজেও চান স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে, চান একটি কর্মসংস্থানও।
এদিকে অসহায় মানুষ দুটির দায়িত্ব কেউ নিতে চাইলে আবেদনের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া কথা বলছে মাদারীপুর শিশু আদালত।
রোববার (১ জুন) বিকেলে শিশু আদালতের বিচারক শরীফ এএম রেজা জাকেরের সিদ্ধান্তে পুলিশি নিরাপত্তায় আফিয়া ও তার মাকে পৌঁছে দেওয়া হয় বরিশালের ‘সেইফজোনে’। সেখানে থেকে আপাতত প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন বিউটি আক্তার।
বিউটি আক্তার বলেন, ‘আমি ও আমার মেয়ের অন্যদের মতো বাঁচতে চাই। প্রয়োজনে কাজ করে খাবো। তবুও বন্দি জীবনে আর থাকতে চাই। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার সৎ মা আমাকে বিক্রি করে দেওয়ার পর আমার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। আদালতের মাধ্যমে এই অন্ধকার জীবনে আলো চাই। আমার মেয়েটির জন্য খুব চিন্তা। তাকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে চাই। ’
ফরিদপুর জেলা পুলিশের এএসআই মোহাম্মদ আব্দুর সবুর মিয়া বলেন, ‘ফরিদপুর ‘সেইফজোন’ থেকে মা ও মেয়েকে মাদারীপুর আদালতে নিয়ে আসা হয়। তাদের দেখে মায়া লাগে। যদিও বিষয়টি খুবই কঠিন, তারপরও শিশুর পিতাকে খুঁজতে কাজ করা হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। ’
মাদারীপুর শিশু আদালতের পেশকার জালাল মোল্লা বলেন, ‘মা ও মেয়ের জন্য আলাদা কিছু করার চিন্তা করেছেন আদালত। বিচারকের নির্দেশে মেয়েটিকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া মা ও মেয়ের দায়-দায়িত্ব কেউ নিতে চাইলে আদালতে আবেদন করতে হবে। আদালত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। ’
মাদারীপুর আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এই ঘটনায় ওই মেয়েটির মা ও বাবাকে আইনের আওতায় আনা উচিৎ। মেয়েটি তার জেলার নাম বলতে পারলেও পুরোপুরি ঠিকানা বলতে পারছে না। অল্পবয়সে মেয়েটিকে যৌনপল্লিতে তার মা বিক্রি করে দেয়। পরে মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এই ঘটনাটি খুবই হৃদয়বিদারক। ’
এএটি