ঢাকা, রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩২, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২ রবিউস সানি ১৪৪৭

সারাদেশ

সিলেটের যানজট নিরসনে ২৭ প্রস্তাব দিয়েছে এনসিপি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৪৫, অক্টোবর ৫, ২০২৫
সিলেটের যানজট নিরসনে ২৭ প্রস্তাব দিয়েছে এনসিপি

যানজট নিরসন ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে ২৭ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) সিলেট জেলা ও মহানগর শাখা।

শনিবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে নগরের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিলেট বিভাগীয় সম্পাদক এহতেশাম হক।

প্রস্তাবনায় যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের লাইসেন্স প্রদান, প্রশিক্ষণ, বৈধ ও অবৈধ গ্যারেজের তালিকা প্রস্তুত এবং নির্দিষ্ট পার্কিং স্ট্যান্ড নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।

পরিবহন শ্রমিকদের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রস্তাবনায় বলা হয়, তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে প্রত্যেক নাগরিকের সহমর্মিতা প্রকাশ করা উচিত। সেই সঙ্গে কোনো শ্রমিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হামলা বা নির্যাতন করা যাবে না। প্রস্তাবনায় সিলেটে ৬ হাজার অটোরিকশার অনুমোদন দেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশার কন্ট্রোল, গিয়ারবক্সসহ যন্ত্রাংশ বিএসটিআই কর্তৃক অনুমোদনের প্রস্তাবও করা হয়েছে। নগরের রাস্তাগুলোর ট্রাফিক লাইট ৩০ বছর আগে স্থাপিত হলেও কেনা মেরামত করা হচ্ছে না, সে প্রশ্নও তোলা হয়েছে।  

এহতেশাম হক বলেন, উপস্থাপিত প্রস্তাবনাটি একটি খসড়া। এটি কতটা কার্যকর বা বাস্তবসম্মত, তা জনগণই বিচার করবে। আমরা জনগণের স্বার্থেই কাজ করছি।

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে— সরকার ‘বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০১৫’ জারির আগে সকল স্টেকহোল্ডার ও নাগরিকের মতামত নেওয়ার মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক নীতি প্রণয়ন করতে হবে। জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে সিলেটবাসীর মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

গবেষণার মাধ্যমে অটোরিকশা-জনিত সমস্যাগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করে, দুর্ঘটনায় ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজি ও অন্যান্য যানবাহনের ভূমিকা পরিস্কারভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এই গবেষণায় তরুণ, নারী, পুরুষ ও প্রবীণসহ সব শ্রেণির মতামত অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

২০২২ সালে গঠিত যাত্রী ও পরিবহন পণ্য কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন একটি যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি গঠন করতে হবে, যা রুট নির্ধারণ ও যানবাহনের চাহিদা-যোগান নির্ধারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকবে।

প্রস্তাবনায় ব্যাটারিচালিত রিকশার মোটর, কন্ট্রোলার, গিয়ারবক্স, ব্রেক, ব্যাটারি ও চার্জারসহ সব যন্ত্রাংশ বিএসটিআই অনুমোদিত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

এ ছাড়া— ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা, চালকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা, প্রতিটি অটোরিকশায় দৃশ্যমান স্থানে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন করা, সব গ্যারেজের তালিকা প্রকাশ ও নিয়মিত পরিদর্শন করা, নির্দিষ্ট পার্কিং স্ট্যান্ড ও চার্জিং স্টেশন নির্ধারণ করা, সোলার প্যানেলের মাধ্যমে চার্জিং ব্যবস্থায় উৎসাহ প্রদান, রেকার ফি বৈষম্য দূরীকরণ— এসবও প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়।

বর্তমানে খুলনায় ৮০০ টাকা, ঢাকায় ১২০০ টাকা, অথচ সিলেটে ৩০০০ টাকা রেকার ফি নেওয়া হচ্ছে— এটি অন্যায্য উল্লেখ করে তা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানায় এনসিপি।

আরও বলা হয়, মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যাটারি ও যন্ত্রাংশ পরিবেশবান্ধব উপায়ে নিষ্পত্তি করতে হবে এবং চার্জিং ব্যবস্থা ‘বৈদ্যুতিক যান নির্দেশিকা ২০২২’ অনুসারে পরিচালিত হতে হবে।

নগরের সড়ক প্রশস্তকরণ, বড় প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক অফিসগুলো ধীরে ধীরে শহরের বাইরে স্থানান্তর, উঁচু ভবন নির্মাণে সীমাবদ্ধতা, হাসান মার্কেট সংস্কার ও হকার ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করা, অব্যবহৃত স্থাপনাগুলো পার্কিং স্পেস হিসেবে ব্যবহার— এসবও প্রস্তাবনায় স্থান পেয়েছে।

এছাড়া সড়ক নিরাপত্তা অবকাঠামো উন্নয়ন, যেমন— স্পিড ব্রেকার, জেব্রা ক্রসিং, ট্রাফিক সিগন্যাল, স্ট্রিট লাইট স্থাপন এবং দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে অকেজো থাকা ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম পুনরায় চালুর দাবি জানানো হয়।

প্রস্তাবনায় শহরের কেন্দ্র থেকে টার্মিনাল স্থানান্তর, হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারসংলগ্ন এলাকায় বাইরের জেলার বাস ও কোচের জন্য নির্দিষ্ট পার্কিং সময় ও স্থান নির্ধারণ এবং প্যাডেল ও ব্যাটারিচালিত যানবাহনের জন্য আলাদা লেন চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

গবেষণার মাধ্যমে সিলেট শহরের যানবাহন চাহিদা নিরূপণ করে সর্বোচ্চ ৬ হাজার অটোরিকশা পর্যন্ত পারমিট সীমা নির্ধারণের আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি অপ্রাপ্তবয়স্ক ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায় এনসিপি।

ট্রাফিক শিক্ষা ও সচেতনতা বাড়াতে চালক, যাত্রী ও সাধারণ নাগরিকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও ক্যাম্পেইন চালু করার পরামর্শও দেওয়া হয়।

পরিশেষে এনসিপি নেতারা বলেন, ২০২৪ সালের বিপ্লবে পরিবহন শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তাই তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সমাজের প্রতিটি নাগরিকের সংহতি প্রকাশ করা কর্তব্য। যে কোনো সংকট নিরসনে প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক সংগঠনকে সম্মিলিতভাবে সমাধানমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপি সিলেট মহানগরের প্রধান সমন্বয়ক আবু সাদেক মো. খয়রুল ইসলাম, জেলার যুগ্ম সমন্বয়ক আরিফ হোসেন, কিবরিয়া সায়েম ও ফয়ছল আহমদ।

এদিকে, সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে চলমান প্রশাসনিক অভিযানের সামনে অবৈধ ত্রি-চক্র যানগুলোকে বৈধতা দেওয়ার প্রস্তাব সাধারণ মানুষে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। জনগণ বলছেন, সড়কের বিষফোঁড়া দূর না করে সেগুলোকে আরও পরিসর দেওয়া হচ্ছে যা একেবারেই ঠিক নয়। তারা এনসিপিকে বিষয়টি আবারও ভেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।  

এনইউ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।