সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া দুই জেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে চলে গেছে এক সময়ের প্রবল প্রমত্তা ইছামতি নদী। কালের বিবর্তনে নদীটির প্রশস্ততা কমলেও এখনো রয়েছে গভীরতা।
এই গুরুত্বপূর্ণ ঘাটটিতে আজও নির্মাণ হয়নি সেতু। সুগভীর এই নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষকে। স্বাধীনতার পর থেকে এমপি মন্ত্রীরা এসে শুধু আশ্বাসই দিয়ে গেছেন, বার বার মাপজোক করেও সেতু হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তবে ৯৫ মিটার একটি ব্রিজের প্রস্তাবনা দেওয়া আছে বলে উল্লেখ করে এলজিইডি কর্মকর্তা জানিয়েছেন প্রকল্পটি পাস হলেই ব্রিজ নির্মাণ হবে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশের খুঁটি আর কাঠের পাটাতনে তৈরি সাঁকোটিতে সাইকেল উঠলেই নড়ে উঠছে। হেঁটে গেলেও লাফিয়ে ওঠে পাটাতন। নড়বড়ে এই সেতুটি দিয়ে অটোভ্যান চলাচল করলেও ভরা বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এখন বন্ধ রয়েছে। ফলে মানুষের যাতায়াত বিড়ম্বনা বেড়ে গেছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একডালা ঘাট দিয়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের একডালা, ফুলবয়ড়া, ভেন্নাবাড়ি, ক্ষুদ্র বয়রা, মহিষামুড়া, কুড়িপাড়া, কুড়ালিয়া, বাগবাটি ইউনিয়নের পিপুলবাড়িয়া, হরিণা, দত্তবাড়ি ও কাজিপুরের উপজেলার গান্ধাইল ইউনিয়নের কালিকাপুর, খুকশিয়া এবং বগুড়া জেলার ধনুট উপজেলার গোপালনগর ইউনিয়নের গজিয়াবাড়ি, দিশারদিয়ার, খাটিয়ামাড়ি, সেউলিয়াবাড়ি, দেউড়িয়া, আড়িয়ামোহন, কোনাগাঁতী ও মথুরাপুর ইউনিয়নের মথুরাপুর, পিরাহাটি ও কাশিয়াহাটাসহ মোট ৪৫/৫০টি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে। স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চলাচল করতে হয় এ ঘাট দিয়েই। বাগবাটি, রতনকান্দি, মহিষামুড়া, একডালা হাট, খাটিয়ামারি বাজার, মথুরাপুর হাটে কেনাবেচা করতে এ ঘাট পেরিয়েই যেতে হয়। গুরুত্বপূর্ণ এ ঘাটটিতে সেতু নির্মাণ না হওয়ায় যুগের পর যুগ ধরে লাখো মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বর্ষার সময় এই নদীতে নৌকায় চলাচল করতে হয়, আর পানি কিছুটা কমলে বাঁশের সাঁকোয় চলাচল করতে হয়। বছরখানেক আগে একটি শিশু স্কুলে যাওয়ার পথে বাঁশের সাঁকোর চার উল্টে নদীতে পড়ে মারা যায়। এছাড়াও প্রতিদিন ছোটবড় দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে পথচারীরা।
সাঁকো পার হতে হতে বৃদ্ধা রাহেলা খাতুন বলেন, এই ভাঙা ব্রিজে ছওয়ালপাল নিয়্যা চলাফেলা করা মুশকিল। চার ভাইঙ্যা মানুষ পইর্যা যায়, হুন্ডাওয়ালারা পইর্যা যায়। দুই বছর আগে একটা বাচ্চা চারের ওপর থিক্যা পইর্যা মইর্যা গেছে। আপনেরা ব্রিজটা দিয়্যা দেন।
বৃদ্ধ আমজাদ হোসেন বললেন, দেশ স্বাধীনের পর থাইক্যা দেহি মাপজোক করে। পানি মাপে জায়গা মাপে। কিন্তু ব্রিজ আর হয় না।
পথচারী চাঁন মিয়া বলেন, ৮/৯ বছর ধরে ব্রিজ দেওয়ার কথা বলে আশ্বাস দিছে। কিন্তু কেউ ব্রিজ করে দেয় নাই। আমরা খুব কষ্ট করে ব্রিজটা পার হই। গত সরকারের বেলায় যারা যারা আসছিল আশ্বাস দিয়েছে। ইঞ্জিনিয়াররাও এসে এসে দেখে গেছে। কিন্তু কি জন্য ব্রিজ দেয় না সেটা আমরা জানি না।
কলেজছাত্র সালমান বললেন, নৌকা মিস করলে স্কুল মিস হয়ে যায়। এখানে ভেন্নাবাড়ি হাইস্কুল, গান্ধাইল হাইস্কুল, একডালা মাদরাসা, কুড়িপাড়া কলেজ, খাটিয়ামারি হাইস্কুল, মথুরাপুর হাই স্কুলসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই সেতু দিয়ে চলাচল করে। আমাদের একটি ব্রিজটি খুব দরকার।
ধুনট থেকে আসা নার্সারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি এই নদী পার হয়ে বাগবাটি হাটে রেগুলার বিভিন্ন ধরনের গাছের চারা বিক্রি করি। এই চার দিয়্যা কি চলাচল করা যায়। আমি পঞ্চাশ বছর ধরেই এই অবস্থা দেখছি।
কথা হয় স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তারা বলেন, আমাদের সব জমিজমা নদীর পশ্চিমপাড়ে। জমি চাষ করি ফসলাদি যা হয় তা পারাপার করা অনেক কষ্ট। নৌকা দিয়ে পারাপারে খরচও বেশি হয়। নির্বাচন এলে আশ্বাস দিয়েছে, আমাদের ভোট দিয়েন বিভাগ করে দেব। কিন্তু নির্বাচন শেষে আর তারা আসে নাই।
সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রেজাউর রহমান বলেন, আমাদের এলজিইডি কর্তৃক অনুর্ধ্ব ১০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প চলমান আছে। এ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতায় একডালা দক্ষিণপাড়া আরএইচডি জিপিএস ও খাটিয়ামারি জিপিএস ৯৫ মিটার একটি ব্রিজ প্রস্তাবিত আছে। খুব শিগগিরই সেখানে আমরা ফিজিবিলিটি স্টাডি করবো। আমাদের টিম আসবে। তারপর পরবর্তী প্রসেস প্রজেক্টটা পাস হওয়ার পরে করা হবে। আপাতত আমাদের প্রজেক্ট প্রস্তুত প্রক্রিয়াধানী। এখানে ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকার প্রকল্প আসতে পারে।
আরএ