গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় থানায় দায়ের করা অভিযোগটি টালবাহানা করে এক মাস অতিবাহিত করার পর মামলা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। এমনকি মামলা নেওয়ার কথা বলে নেওয়া ঘুষের টাকাও ফেরত দেওয়ার অভিযোগ থানার এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুরে আদিতমারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান ঘুষের দুই হাজার ৯শ টাকা বাদীপক্ষকে ফেরত দিয়েছেন বলে অভিযোগ মিলেছে। যদিও এ ধরনের কোনো লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
অভিযোগে জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের মরিচবাড়ি গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (৩৫) প্রতিবেশী এক গৃহবধূকে (২৩) মোবাইল ফোনে কু প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। যা নিয়ে ওই গৃহবধূ বার বার নিষেধ করলেও আচরণ সংশোধন করেননি আশরাফুল। গত ৫ মে বাড়ির সদস্যরা সবাই বাইরে কাজে থাকায় বাড়িতে একা ছিলেন ওই গৃহবধূ। এই সুযোগে গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন আশরাফুল। একপর্যায়ে গৃহবধূ আশরাফুলকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার করতে করতে বাড়ির বাইরে চলে আসেন। পরে লম্পট আশরাফুল সটকে পড়েন।
পরিবারের লোকজন বাড়ি ফিরলে বিষয়টি তাদের জানান ওই গৃহবধূ। ওই গৃহবধূর আত্মসম্মানের কথা চিন্তা করে প্রথম দিকে লম্পট আশরাফুলের পরিবারকে বিষয়টি জানিয়ে বিচার দাবি করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আশরাফুল ও তার স্ত্রী ওই গৃহবধূ এবং তার পরিবারের ওপর হামলা করেন। অবশেষে নিরুপায় হয়ে ঘটনার বিচার চেয়ে আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই গৃহবধূ।
অভিযোগটি আমলে নিয়ে তাৎক্ষণিক তদন্তে যান আদিতমারী থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান। অভিযুক্ত আশরাফুলকে গ্রেপ্তার করে মামলা দ্রুত নথিভুক্ত করার আশ্বাসে দুই হাজার ৯শ টাকা নেন এসআই আতাউর। এভাবে আজকাল বলে এক মাস দেরি করেও আইনগত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অবশেষে মঙ্গলবার বাদীকে ওসি'র সামনে হাজির করেন এসআই। সেখানে গেলে ওসি সাফ জানিয়ে দেন এক মাস পরে এ মামলা নিলে তার চাকরি থাকবে না। মামলা নেওয়া যাবে না, প্রয়োজনে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এ খবর শুনে এসআই আতাউর রহমান মামলা নথিভুক্ত করার জন্য নেওয়া ঘুষের দুই হাজার ৯শ টাকা বাদীর শ্বশুরকে জোর করে ফেরত দেন।
বাদী ওই গৃহবধূ বলেন, ফোনে কু প্রস্তাব দেওয়ার একপর্যায়ে ৫ মে বাড়িতে একা পেয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন আশরাফুল। এটা কাউকে বললে স্বামীসহ আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন এবং এখনও দিচ্ছেন। আমরা থানায় অভিযোগ দিলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। তারা আজ কাল বলে দেরি করে এখন বলছে এত দেরিতে এ মামলা নিলে তাদের চাকরি থাকবে না। আমরা গরিব মানুষ টাকা দিয়েও বিচার পেলাম না। তাহলে আর কত টাকা দিলে মামলাটা নেবে পুলিশ?
বাদীর শ্বশুর বলেন, বাবা আমরা গরিব মানুষ। কষ্ট করে ২৯০০ টাকা আতাউর দারোগাকে দিয়েছি। আজ কাল বলে এক মাস পার করে এখন টাকা ফেরত দিয়ে বলছে, মামলা নিলে তাদের চাকরি থাকবে না। তাহলে তারা আগে কেন মামলাটা নিল না? কেনই বা আমাদর এক মাস ধরে শুধু ঘুরাইলো? এমন হলে গরিব মানুষ বিচার কীভাবে পাবে?
আদিতমারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান ঘুষ গ্রহণ ও ফেরত দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, মামলাটি নেওয়ার মতো কিন্তু ওসি স্যার এখন নিচ্ছেন না। আপনি একটু স্যারকে বলে মামলাটি নথিভুক্ত করে দেন ভাই। ওসি স্যারের সঙ্গে আপনি (প্রতিবেদক) বসলে মামলাটা নেবে হয়তো। আমি কোনো টাকা পয়সা নেইনি, তাই ফেরতও দেইনি।
দেরির বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় নেতাদের বলেছিলাম আপস করে দিতে কিন্তু তারা পারেনি, জন্য দেরি হয়েছে।
আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আকবর বলেন, বাদী আপসের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আজ এক মাস পরে এসে মামলা নথিভুক্ত করতে বলছে। এত দেরিতে এসব মামলা থানায় নেওয়া যায় না। আর আমার অফিসার কোনো ধরনের লেনদেন করে থাকলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরএ