ঢাকা, সোমবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

যে কারণে বগুড়ার সরকারি গুদামে ধান দিচ্ছেন না কৃষকরা 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:০০, মে ১৮, ২০২৫
যে কারণে বগুড়ার সরকারি গুদামে ধান দিচ্ছেন না কৃষকরা 

বগুড়া: জেলার হাট-বাজারে নতুন বোরো ধানের সরবরাহ রয়েছে পর্যাপ্ত। সরবরাহ বাড়তে থাকায় ধানের দামও কমছে।

হাটে ধানের দাম কম হলেও সরকারি খাদ্য গুদামে ধান কিনতে পারছে না খাদ্য বিভাগ।

বগুড়া জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার ১২টি উপজেলায় ৩৬ টাকা কেজি দরে অর্থাৎ ১৪৪০ টাকা মণ দরে ১২ হাজার ১৬৯ মেট্রিকটন ধান কিনবে খাদ্য বিভাগ। এজন্য কার্ডধারী কৃষক অ্যাপসের মাধ্যমে আবেদন করে ধান সরবরাহ করবেন। গত ২৪ এপ্রিল থেকে ধান সংগ্রহ শুরু করেছে খাদ্য বিভাগ। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে ধান সংগ্রহ।  

কিন্তু ১৮ মে পর্যন্ত খাদ্য বিভাগ ধান সংগ্রহ করেছে মাত্র ১৮৭ মেট্রিক টন।

বগুড়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ধান কাটা আর মাড়াই চলছে পুরোদমে। অধিকাংশ কৃষক ধান কেটে জমি থেকেই অথবা হাটে নিয়ে বিক্রি করছেন। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ধানের দাম মণ প্রতি কমেছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।

গত শনিবার বগুড়া সদরের ঘোড়াধাপ হাটে দেখা গেছে শুকানোর পর মোটা ধান বিআর-৩৩ বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা মণ দরে।  

শুক্রবার কাহালু উপজেলার বিবিরপুকুর হাটে চিকন ধান বিআর-২৮ বিক্রি হয়েছে ১১৫০ থেকে ১২০০ টাকা মণ দরে।

ঘোড়াধাপ হাটের ধান ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতি হাটেই ধানের সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। এ কারণে দামও কমছে। সরবরাহ বাড়ায় হাটে কাঁচা ধান কেনা হচ্ছে না।

ধান ব্যবসায়ীরা জানান, আগামী দুই সপ্তাহ ধানের দাম কম থাকলেও এরপর দাম বাড়তে থাকবে। কারণ হিসেবে তারা বলেন, কৃষক ধান কাটা আর মাড়াইয়ের শুরুতেই কিছু ধান বিক্রি করেন দেনা পরিশোধ করার জন্য। সার, কীটনাশক এবং সেচের টাকা বাকি থাকে অনেক কৃষকের। যার কারণে তারা দেনা পরিশোধের জন্য দাম কম হলেও ধান বিক্রি করেন।

এদিকে অ্যাপসের মাধ্যমে খাদ্য বিভাগ সরকারি গুদামে ধান কেনার কারণে কৃষক ধান সরবরাহ করতে আগ্রহী না। যার কারণে বাজারের চেয়ে সরকারি খাদ্য গুদামে ধানের দাম বেশি হলেও কৃষক সেখানে ধান বিক্রি করছেন না।  

কৃষকরা বলছেন, খাদ্য বিভাগে ধান সরবরাহ করতে অনেক ঝামেলা। অ্যাপসের মাধ্যমে আবেদন, এরপর কৃষি অফিসে কৃষি কার্ড নিয়ে যোগাযোগ করতে হয়। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে খাদ্যগুদামে ধান নিয়ে যেতে হয়। সেখানে ধান পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তারপর গুদামে ঢুকানো হয়। তারপরও ধান বিক্রির টাকা নগদ পাওয়া যায় না। খাদ্য বিভাগ থেকে ব্যাংকে কৃষকের হিসাব নম্বরে টাকা পাঠানো হয়। এসব প্রক্রিয়া করতে সময় লাগে। যার কারণে দাম কম হলেও হাটে নগদ টাকায় ধান বিক্রি করতে আগ্রহী কৃষক।

বগুড়া সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হারুন-উর-রশিদ বলেন, পুরোপুরি ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। বাজারে ধানের দাম অনেক কম, কিন্তু তারপরও কৃষকের মধ্যে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করার আগ্রহ নেই।  

তিনি বলেন, সদর উপজেলায় ছয় শতাধিক কৃষক অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধন করলেও তাদের মধ্যে ধান সরবরাহ করার আগ্রহ নেই। আগ্রহ বাড়ানোর জন্য গ্রামে গিয়ে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে সভা করলেও তা কাজে আসছে না।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সোহেল মো. সামছুদ্দিন ফিরোজ বলেন, এক লাখ ৮৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল কৃষি বিভাগের। কিন্তু ভুট্টার চাষ বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রায় দুই হাজার হেক্টর কম জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। তা সত্ত্বেও এবার বোরো ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। এবার বোরো চাল হয়েছে হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ১৩ মেট্রিক টন। এরই মধ্যে জেলার ৬২ ভাগ জমির ধান কাটা ও মাড়াই শেষ হয়েছে।

এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।