ঢাকা, সোমবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

পাকা ধানের ঘ্রাণে বিমোহিত ইরি-বোরো মাঠ, বৃষ্টি আতঙ্কে কৃষকরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭:৫৫, মে ১৮, ২০২৫
পাকা ধানের ঘ্রাণে বিমোহিত ইরি-বোরো মাঠ, বৃষ্টি আতঙ্কে কৃষকরা

রংপুর: দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে আগাম জাতের ইরি-বোরো পাকা ধান বাতাসে দুলছে, ছড়িয়ে দিচ্ছে সোনালি স্বপ্নের ঘ্রাণ। মাঠের পর মাঠ পাকা ধানে মৌ মৌ করছে।

উঁচু জমিতে আবাদ করা এসব আগাম ধান পুরোপুরি পেকে যাওয়ায় কৃষক-কৃষাণীরা ধান কাটার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

মহানগর ছাড়াও জেলার পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ, কাউনিয়া, সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় দেখা মিলছে একই চিত্র। পাশাপাশি রংপুর অঞ্চলের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলাতেও আগাম জাতের ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

চলতি মৌসুমে পোকামাকড়ের আক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম থাকায় ও আগাম ফলনের সুবিধায় অনেক কৃষক আগাম জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এছাড়া বিগত বছরের তুলনায় ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষকরাও সন্তুষ্ট। তবে গত দু-তিন দিন ধরে দিন-রাতের যেকোনো সময় বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে, বিশেষ করে নিচু জমির ক্ষেত্রে।

রংপুর কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার আট উপজেলায় হাইব্রিড ও উফশী জাতের ইরি-বোরো ধান বেশি আবাদ হয়। এর মধ্যে রয়েছে হিরা-১, হিরা-২, সোনার বাংলা, ব্রি ধান-২৮, ব্রি-২৯, ব্রি-৭৪, ব্রি-৮১, ব্রি-৮৯ সহ কিছু স্থানীয় জাত।

এ বছর রংপুরে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। কম খরচে, কম সময়ে ভালো ফলন পাওয়ায় আগাম জাতের ধানে সফলতা পাচ্ছেন কৃষকরা।

রংপুর অঞ্চলে ইরি-বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ ৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু তা ছাড়িয়ে ৫ লাখ ৯ হাজার ৫৬ হেক্টরে চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ৫ মেট্রিক টন চাল। যা থেকে প্রায় ২২ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ৩৫ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের আশা করা যাচ্ছে।

পীরগঞ্জ উপজেলার কুমেদপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান জানান, তার আগাম জাতের ধান ইতোমধ্যে কাটা হয়ে গেছে।

রংপুর সদরের মমিনপুর এলাকার কৃষক সেরাজুল ইসলাম ও মিঠু মিয়া জানান, ধান কাটা ও মাড়াই পুরোদমে চলছে। তবে লেবার সংকটের কারণে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

পীরগঞ্জ উপজেলার টুকুরিয়া ইউনিয়নের মোনাইল গ্রামের ছাত্তার মিয়া ও হরিণা গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, তারা প্রতিবছর আগাম জাতের ধান চাষ করেন। সেচ পাম্পে পানি দিয়ে ধান চাষে খরচ বেশি হলেও ভালো দামের কারণে লাভ হচ্ছে। তবে মাঝে মাঝে বৃষ্টির কারণে গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত খড় নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হচ্ছে।

কৃষকরা আরও জানান, নতুন ধানের চালের বাজারে চাহিদা বেশি। ফলে ধান কেটে দ্রুত অন্যান্য ফসলের চাষের সুযোগ পাচ্ছেন তারা। তবে আগাম জাতের ধানে পাখির উপদ্রব বেশি। বাবুইসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে ধান খেতে আসছে। সেগুলো তাড়াতে অতিরিক্ত শ্রম দিতে হচ্ছে। কেউ কেউ জমির ওপর জাল টেনে দিচ্ছেন বাড়তি খরচে।

পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার বলেন, ইরি-বোরো ধান উৎপাদন বাড়াতে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় ধারণা দেওয়া হয়েছে। রোগ-বালাই কম থাকায় কৃষকরা এবার ভালো ফলন পেয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, অনুকূল আবহাওয়ায় জেলার ধান আবাদ ও ফলন ভালো হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ শতাংশ ধান কৃষকরা ঘরে তুলেছেন। মাঠে কৃষকদের ধান কাটার ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে।

এসআরএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।