বগুড়া: বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় রামাইডাঙ্গা বিল অবৈধ দখলদারিত্ব থেকে উদ্ধার করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এলাকাবাসী৷
বৃহস্পতিবার (০১ মে) সন্ধ্যার দিকে উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের গোয়ালজানি এলাকায় রামাইডাঙ্গা বিলের পাড়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়৷
জানা গেছে, সুঘাট ইউনিয়নের রামাইডাঙ্গা বিলের আয়তন প্রায় ৩১.৮০ একর৷ যা খাস বা সরকারি সম্পত্তি৷ তবে বিগত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে কিছু অসাধু ব্যক্তি খাস এ জলাশয়ের গোয়ালজানি গ্রামের কোলঘেঁষা রামাইডাঙ্গা বিলের প্রায় ১৬ একর জলাশয় তাদের দখলে রাখেন৷ সেই সঙ্গে এ জলাধারটির আশেপাশের প্রায় ১০-১২ গ্রামের মানুষকে নানাভাবে জিম্মি করে রাখেন তারা৷ কেউ এর প্রতিবাদ করলে নানাভাবে পুলিশি হয়রানির শিকার হয়, মামলা-হামলার শিকার হন৷ গ্রামবাসীর প্রশ্ন- সরকারি জলাশয় কীভাবে ব্যক্তি মালিকানায় নেওয়া যায়?
এদিকে এক সময় বিলটি সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। তখন গবাদি পশুর গোসল, হাঁসের পালের জন্য বিচরণ, মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ, জমিতে পানি সেচ আর পাট ধোয়া-সব কাজের জন্য স্থানীয় লোকজন এ বিলের পানিই ব্যবহার করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্যে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জিহাদ বলেন, গোয়ালজানী মৌজার সিএস-২,৪,৬,৭ খতিয়ান ভূক্ত যথাক্রমে ৮৭৫, ৭৬৮, ৪৯৭, ৮৬৬ শতক মবলগে ৩১ একর ৮০ শতক জমি সাবেক প্রসন্ন নাথ চক্ৰতী দিং (২,৪,৬ নং- সিএস খতিয়ান) এবং হেমচন্দ্র স্যান্নাল (সিএস ৭ খতিয়ান) ভুক্ত সম্পত্তিগুলোর পত্তনি মূলে মালিক নিযুক্ত থাকলেও খতিয়ানগুলোর যথাক্রমে কুমুদ নাথ চৌধুরী, মধুসুধন সাহা চৌধুরী গং, শ্রী শচন্দ্র স্যান্নাল জমিদার ছিলেন। পত্তনি দখলকার প্রসন্ন নাথ গং, হেমচন্দ্র স্যান্নাল গংরা এলাকা থেকে চলে গেলে ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এম আর আর (এসএ) খতিয়ান করার সময় ওই সম্পত্তিসহ বিখ্যাত রামাইডাঙ্গা সরকারের ১ নং খাস খতিয়ান ভুক্তি, যা সবার ব্যবহার্য হিসেবে এসএ ১ নং খতিয়ান প্রকাশ হয়। সিএস খতিয়ান প্রস্তুতের (১৯১৭ থেকে ১৯৩০) আগেপরের ওই জোতও রামাইডাঙ্গা বিল সবার ব্যবহার্য্য ছিল। এলাকার সব শ্রেণির মানুষ তখন থেকে এ বিলে মাছ ধরতেন, পাট জাগ দিতেন, গরু-মহিষ গোসল করাতেন, বিলের পানি দিয়েই ফসলের জমিতে পানি সেচ দিতেন।
লিখিত বক্তব্য তিনি আরও বলেন,আফজাল হোসেন নামে এলাকার এক প্রভাবশালী ও আওয়ামী লীগের দোসর এলাকার আট-১০ জনকে নিয়ে সরকারি খাস এ জলাশয়ের ১৬ একর জমি নিজ নামের বলে দাবি করেন৷ তারা বিলটিতে বেড়া দিয়ে দেওয়া হয়। গত ১৫ বছর বেড়া দিয়ে বিলটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখেন তারা। ফলে বিপাকে পড়েন আশপাশের ১০-১২ গ্রামের মানুষ।
এলাকাবাসী আবার রামাইডাঙ্গা বিলে মাছ শিকার এবং গৃহস্থালী ও কৃষি কাজে বিলটি ব্যবহার করতে চান। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
এলাকাবাসী দাবি করেন, রামাইডাঙ্গা বিল জনসাধারণ যাতে ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক। গোয়ালজানী মৌজার সিএস ২,৪,৬,৭ খতিয়ানের ৩১.৮০ শতক জমি সরকারি খাসও সাধারণ জনগণের ব্যবহার্য্য হিসেব চিরস্থায়ীভাবে ঘোষণা করা হোক৷
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন, গোলাম রব্বানী বুলু, খলিলুর রহমান, রফিকুল ইসলাম, সোহরাব আলী, আজগর মিয়া, আসাদুজ্জামান, আব্দুল কাদের, আবু সাঈদ, মজদার হোসেন, ইয়াকুব আলী, সাবান আলী, আব্দুর রশিদসহ অনেকে৷
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে সাত শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন৷
কেইউএ/এসআই