মৌলভীবাজার: দিনে ২৩ কেজি পাতা তুললে মেলে মাত্র ১৭০ টাকা— এই করুণ বাস্তবতা বয়ে বেড়াচ্ছেন মৌলভীবাজারের হাজারো নারী চা শ্রমিক।
মৌলভীবাজার বিভাগীয় শ্রম দপ্তর জানায়, দেশের ১৬৩টি চা বাগানে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক কাজ করছেন।
প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নারী শ্রমিকেরা চা পাতা তোলেন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে। চা পাতা তোলার এত অল্প আয়ে সংসার চালানো কঠিন। নারী শ্রমিকদের অভিযোগ, পুরুষদের তুলনায় তারা কম মজুরি পান, কিন্তু পরিশ্রমে ছাড় নেই। আর স্বাস্থ্য, সেনিটেশনসহ নানা সুবিধার অপ্রাপ্তি তো আছেই।
নারী চা শ্রমিক শেফালি হাজরা বলেন, পেটের দায়ে যখন যে কাজ পাই সেটা করতে আমরা বাধ্য হই। সারাদিনে ২৩ কেজি চা পাতা তুলে দিতে পারলে ১৭০ টাকা দেওয়া হয়। এটা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। তবে আমাদের থেকে পুরুষরা বেশি মজুরি পেয়ে থাকে।
ভাড়াউড়া চা বাগানের মনি গোয়ালা এবং আলীনগর চা বাগানের রেবতি রিকিয়াশনসহ অন্য নারী শ্রমিকরা জানান, তারা ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা সেরে কাজে বের হন আর সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে রান্নাবান্না করেন। এটি চা বাগানের বেকার নারীদের প্রতিদিনের চিত্র।
তারা জানান, চা বাগানে পুরুষদের তুলনায় নারীদের কাছ থেকে সস্তায় শ্রম পাওয়া যায়। অথচ তাদের সমান পরিশ্রমই করতে হয়। কারো চিন্তা নেই চা বাগানের নারী শ্রমিকদের নিয়ে। তারা আজও ‘অবহেলিত’।
বাংলাদেশীয় চা সংসদের (বিটিএ) সিলেট শাখার চেয়ারম্যান এবং সিনিয়র টি-প্ল্যান্টার গোলাম মোহাম্মদ শিবলি বলেন, ‘অবহেলিত’- এই শব্দটা মনে হয় ঠিক নয়। কারণ আমাদের চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি কিছুটা কম হলেও অন্যান্য সুযোগ বেশি। যেমন- তাদের থাকার ব্যবস্থা, চিকিৎসা, রেশন ইত্যাদি।
তিনি বলেন, সব সুযোগ-সুবিধা হিসাব করলে তাদের মাসিক মজুরি প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা হবে, যা গার্মেন্টস বা অন্যান্য শ্রমিকদের তুলনায় বেশি।
গোলাম মোহাম্মদ শিবলির যুক্তি, সব কিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু সেই অর্থে চায়ের দাম বাড়েনি। অধিকাংশ বাগান মালিক লোকসানে রয়েছেন। অনেক বাগান মালিক চা শ্রমিকের মজুরি দিতে পারছেন না।
বিবিবি/আরএইচ