দীর্ঘদিন ধরে দলীয় সংকটের সময় মাঠে থাকা ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীরা যখন পদবঞ্চিত, তখন সদ্য ঘোষিত রমনা থানা বিএনপির কমিটিতে স্থান পেয়েছেন দলের দুঃসময়ে নিষ্ক্রিয় থাকা এবং এমনকি পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিরাও। এ নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন রমনা থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহরাব আলী। তিনি দ্রুত এ কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন এবং এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মাঠের কর্মীরা বঞ্চিত, সুবিধাবাদীরা পুরস্কৃত এমন অভিযোগ করে লিখিত বক্তব্যে সোহরাব আলী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বহু মামলার শিকার ও কারাবরণকারী ত্যাগী নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করে এমন একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেখানে আদর্শ ও নৈতিকতার কোনো মূল্য দেওয়া হয়নি। নেতাদের অবদানকে অবমূল্যায়ন করে ব্যক্তিগত পছন্দের লোকদের পদ দেওয়া হয়েছে। এর জন্য তিনি সরাসরি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ককে দায়ী করেন।
তিনি আরও বলেন, নতুন কমিটির অনেকেই দলের কঠিন সময়ে প্রবাসে কাটিয়েছেন অথবা রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু এখন সুবিধাজনক সময়ে ফিরে এসে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সোহরাব আলী সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তাদের পদপ্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, নতুন কমিটির আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম ২০১৮ সালে দলের প্রতি ক্ষোভ ও অভিমানে পদত্যাগ করেছিলেন। কেন এমন একজন ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ আহ্বায়ক পদে ফিরিয়ে আনা হলো?
সোহরাব আলী বলেন, সাইদুজ্জামান শামীম হোসেনকে কমিটির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। তিনি পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত এবং কোন যোগ্যতায় তাকে এত বড় পদ দেওয়া হলো।
সোহরাব আলী আরও বলেন, সৌখিন হাওলাদার ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর তিনি ইতালিতে চলে যান এবং সেখানেই ব্যবসা করতেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর তিনি দেশে ফিরে এসে যুগ্ম আহ্বায়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন।
তিনি বলেন, চান মিয়া চান, ফরিদ আহমেদ ও সায়েম শিকদার শাহিন এ তিনজনকে সরাসরি যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে, অথচ এর আগে তারা বিএনপির কোনো পর্যায়ে কোনো পদে ছিলেন না।
সোহরাব আলী বলেন, গত ১৭ বছর ধরে যারা দলের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাদের বাদ দিয়ে যাদের কোনো অবদান নেই, তাদের পদ দেওয়া এক ধরনের অবিচার এবং দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
সংবাদ সম্মেলনে বঞ্চিত নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি এ পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান না হয় এবং অনৈতিক কমিটি বিলুপ্ত করা না হয়, তাহলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবেন। তারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি অবিলম্বে এ পক্ষপাতদুষ্ট কমিটি ভেঙে দিয়ে ত্যাগী ও পরীক্ষিত কর্মীদের দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের আহ্বান জানান।
এদিকে আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পদত্যাগের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, দলের প্রতি ক্ষোভ ও অভিমান থেকে আমি পদত্যাগ করেছিলাম, কিন্তু আমার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি, তাই তা কার্যকরও হয়নি। '
ইএসএস/আরআইএস