ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মুক্তমত

করোনাকালে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন

ডা. সুদেশ রক্ষিত | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২১
করোনাকালে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন

পক্ষকালব্যাপী জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন কার্যক্রমের প্রথম রাউন্ড শেষ হয়েছে গত ১৯ জুন। ৫ জুন এ ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছিল।

চলমান মহামারির উর্ধ্বগতির মধ্যে শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় এ কর্মসূচি এক দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন ধরে চালানো হয়েছে, যাতে স্বাস্হ্যবিধি মেনে চলা যায় এবং সেবাদান কেন্দ্রে ভিড় এড়ানো যায়।  

আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশের বিশেষত শিশু কিশোরদের খাবারে ভিটামিন-এ স্বল্পতা রয়েছে। অধিকন্তু এ অবস্থায় সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে দেহে ভিটামিন 'এ' র ঘাটতি প্রকটভাবে দেখা দেয়, ফলশ্রুতিতে শিশু কিশোর ও গর্ভবতী মায়েরা বিভিন্ন জটিলতায় ভোগেন, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। ছোট মাছ মলা, ঢেলা, মাংস, ডিমের হলুদ অংশ, দুধ ও দুধে তৈরি খাদ্যে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ থাকে, উদ্ভিজ উত্স যেমন- গাজর, সবুজ শাকসবজি রঙিন ফলমূলে প্রোভিটামিন 'এ'  উল্লেখযোগ্য পরিমাণে থাকে। অন্ধত্ব নিবারণ ছাড়াও ভিটামিন এ দৈহিক বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা বর্তমান করোনা অতিমারিসহ অন্যান্য ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সহায়ক হতে পারে।  
 
ভিটামিন এ একদিকে যেমন শ্বাসনালীর আবরণী টিস্যুসহ সকল আবরণী টিস্যু ও মিউকাসের দৃঢ়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে, অপরদিকে রক্তের যোদ্ধাপ্রোটিন (এন্টিবডি) তৈরিতেও ভিটামিন এর প্রয়োজন অপরিহার্য। ভিটামিন এর অভাবে আবরণী টিস্যুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়, অধিকন্তু নির্দিষ্ট কিছু জীবাণু বিরোধী রক্তকণিকার কার্যক্ষমতা ও লোপ পায়। এ জন্য ভিটামিন ‘এ’ কে প্রদাহ বিরোধী (এন্টি ইনফ্লেমেটরি) ভিটামিনও বলা হয়।

ভিটামিন এর অভাবজনিত অন্ধত্ব ও মৃত্যু ঝুঁকি থেকে পরিত্রাণের উপায়: 

১। জন্মের ১ (এক) ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ শালদুধ খাওয়াতে হবে।
২। ৬ (ছয়) মাস শেষে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়িতে তৈরি পরিপূরক খাবার যেমন সবজি খিচুড়ি, লাল শাক, পালং শাক, গাজর, রঙিন ফল যেমন পেঁপে, কাঁঠাল ইত্যাদি অল্প করে দিতে হবে।
৩। ছোট মাছ মলা, ঢেলা বা লাল মাংশ দিয়ে নরম খিচুড়ি খাওয়াতে হবে।
৪। হাম হলে- ২ ডোজ ভিটামিন-এ ক্যাসুল ডে-১ ও ডে-২, দিতে হবে।
৫। মারাত্মক অপুষ্টি ও দীর্ঘ মেয়াদি ডায়ারিয়ায়- ১ ডোজ ভিটামিন-এ ক্যাপসুলই যথেষ্ঠ।
৬। ক্যাম্পেইন চলাকালীন ভিটামিন-এ, সাপ্লিমেন্ট- ৬ (ছয়) মাস বয়স থেকে ৫৯ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের প্রতি ৬ মাস অন্তর ১ ডোজ ভিটামিন- এ, < ১ বছর, ১ লাখ আইইউ (১টি সবুজ ক্যাপসুল) ও >১ বছর, ২ লাখ আইইউ (১টি লাল ক্যাপসুল) নিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।  
৭। ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবারের উৎস সম্পর্কে নিয়মিত পাঠদান আবশ্যক।

করোনাকালেও ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো কর্মসূচির প্রথম রাউন্ড সফলভাবে শেষ হয়েছে। আসুন একইভাবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারের এ কর্মসূচির দ্বিতীয় রাউন্ড (তারিখ এখনো ধার্য হয়নি) সফল করে তুলি ও ছোট্ট সোনামণিদের অপুষ্টি থেকে রক্ষা করি।

লেখক: অধ্যাপক (অব.) পিডিয়াট্রিক্স, শিশু বিশেষজ্ঞ, সালাহউদ্দিন স্পেশালাইড হাসপাতাল, হাটখোলা রোড, ঢাক।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।