ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ ভাদ্র ১৪৩২, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

মুক্তমত

ক্যালিফোর্নিয়ার চিঠি

ট্রাম্পের স্বাস্থ্য গুজব, শুল্কযুদ্ধ ও আমেরিকার রাজনৈতিক স্বাস্থ্য রিপোর্ট

মাহবুব আহমেদ |
আপডেট: ১৭:২৬, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫
ট্রাম্পের স্বাস্থ্য গুজব, শুল্কযুদ্ধ ও আমেরিকার রাজনৈতিক স্বাস্থ্য রিপোর্ট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বানানো প্রতীকী ছবি

আজকের লেখাটি শুরু করতে আমাকে অনেক মানসিক শক্তি সংগ্রহ করতে হয়েছে। কারণ আমাদের মহামান্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাস্থ্য বিভ্রান্তি ও ও সিভিআই গুজব সংক্রান্ত বিষয়ে লিখছি।

তাই তথ্যের ব‍্যাপারে অনেক সতর্ক হতে হয়েছে। সেই সব বিষয়ে হালচাল নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা।

আসলে কী ঘটেছিল জুলাইয়ে? আকস্মিক হোয়াইট হাউস ঘোষণা করে যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিশিয়েন্সি বা সিভিআই নামের এক ধরনের শিরার সমস্যায় আক্রান্ত। এতে রক্ত সহজে পায়ের শিরা থেকে হৃদপিণ্ডে ফেরত আসতে পারে না। ফলে ফোলা, নীলচে দাগ, এমনকি অবহেলায় গুরুতর জটিলতা হতে পারে। চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেছেন, এটি ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস বা হৃদরোগ নয়। প্রেসিডেন্টের হাতে দেখা দেওয়া দাগ এসেছে অতিরিক্ত হাত মেলানো ও নিয়মিত অ্যাসপিরিন সেবনের কারণে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি চিকিৎসা না হয় তবে চামড়ায় ক্ষত বা চরম অবস্থায় অঙ্গচ্ছেদ পর্যন্ত হতে পারে। তবে নিয়মিত চিকিৎসা ও যত্নে এটি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য।

আগস্টের শেষ দিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যাশট্যাগ দাপট #WhereIsTrump, #TrumpIsDead। গুজব ছড়ায় তিনি আর বেঁচে নেই। উত্তরে ট্রাম্প ঝড় তুললেন নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায়, আবার নাতি-নাতনিদের নিয়ে গলফ খেলতে বেরিয়ে প্রমাণ দিলেন তিনি এখনো সচল এবং ‘খুব ভালো স্বাস্থ্যে’ আছেন।

সংক্ষেপে যে তথ্য জানা যায়, সিভিআই সত্য, নথিভুক্ত রোগ। ট্রাম্পের হাতের দাগ তেমন গুরুতর কিছু নয়, কিন্তু মিম তৈরির উপাদান অবশ্যই। মৃত্যু কিংবা অচেতন হয়ে পড়ার গুজব একেবারেই মিথ্যা।

শুল্কের ঝড়ের হালচাল নিয়ে যা জানা যায়
ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম: মার্চে ২৫% শুল্ক, জুনে দ্বিগুণ হয়ে ৫০%। এরপর শুল্কের তালিকায় ঢুকে যায় গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, নির্মাণসামগ্রী ইত্যাদি। তামা: আগস্ট ১ থেকে অর্ধসমাপ্ত তামাজাত পণ্যে ৫০% শুল্ক কার্যকর। গাড়ি ও যন্ত্রাংশ: মার্চে ২৫% শুল্ক, এপ্রিল–মে থেকে কার্যকর, যদিও ইউএসএমসিএ-সঙ্গত আমদানি পণ্য বাদ।

রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ: এপ্রিল ৫ থেকে সব আমদানিতে ১০% শুল্ক, আগস্ট নাগাদ দেশভেদে ১১–৫০% পর্যন্ত বৃদ্ধি। চীন, কানাডা, মেক্সিকো, ইসরায়েলসহ বহু দেশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি শুল্ক যুদ্ধ চলছে।

বড় আইনি ধাক্কা: আগস্ট ৩০ তারিখে মার্কিন আপিল কোর্ট রায় দিয়েছে, এই শুল্কগুলোর অনেকগুলোই আইন-বিরুদ্ধ। তবে আপিল চলায় অক্টোবর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

এত সব কঠিন আলোচনার মধ্যে একটু রসিকতা করা যাক কী বলেন? ভাবুন শুল্কনীতি একেবারে WWE রিংয়ের মতো: ট্রাম্প এক ঘুষি (শুল্ক) মারেন স্টিলকে, চীন পাল্টা মারল ট্যারিফ ঘুষি, এরপর রেফারি (আদালত) এসে বলে—এইসব খেলা আইনসঙ্গত নয়। দর্শকরা পপকর্ন হাতে মজা দেখছে।

এখন একটু গম্ভীর বিশ্লেষণ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্বাস্থ্য বাস্তবতা বনাম ডিজিটাল গুজব নিয়ে কিছু বিশ্লেষণ না হলে লেখাটি পড়তে মজা লাগবে না।

সিভিআই রোগ কী, কতটা বিপজ্জনক, আর কীভাবে তা প্রচারণায় বদলায় বাণিজ্য নীতির খুঁটিনাটি, ধাপে ধাপে শুল্ক আরোপ, আইনি চ্যালেঞ্জ, অর্থনীতিতে প্রভাব। শারীরিক দুর্বলতাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার শুল্ককে ঘরোয়া উৎপাদন বাঁচানোর ঢাল হিসেবে তুলে ধরা।

ভবিষ্যৎ ইঙ্গিত ২০২৬ নির্বাচনের দিকে এই স্বাস্থ্য ও শুল্কনীতি কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। একটু রসিকতা করে বলা যায়, “ট্রাম্প, শুল্ক আর শিরার ঝামেলা: এক ব্যঙ্গাত্মক ডায়াগনসিস”। প্রারম্ভিক দৃশ্য: হোয়াইট হাউস প্রেস অফিস যেন ডাক্তারখানা। ডাক্তার বলছে: “মিস্টার আমেরিকা, আপনার রোগ ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিশিয়েন্সি বা সিভিআই... আর রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। গুজব বনাম সত্য: ডাক্তার বলল অ্যাসপিরিনে হাত কালো, নেট বলল টুইটারে মৃত্যু নিশ্চিত।

শুল্ক পার্টি: “প্রথমে ইস্পাত এলো ২৫% শুল্ক নিয়ে, পরে ফ্রিজ-টেলিভিশন ঢুকল, এরপর তামা এলো... কিন্তু আদালত এসে অর্ধেককে বাইরে বের করে দিল।

এই লেখাটির সর্বশেষে টুইস্ট: “সংক্ষেপে, ট্রাম্প এখনো বেঁচে; শুল্ক কোনো হাস্যকর বিষয় নয়—কিন্তু একসাথে হলে পুরো নাটকটা এক রাজনৈতিক সিটকম (সিচুয়েশন কমেডি) হয়ে যায়। ”

এই আলোচনা যদি আরও জোরালো করা যায় তাহলে বলা যায়, শুল্কনীতি: অর্থনীতির WWE ম্যাচ ট্রাম্পের শুল্ক ম্যারাথন মার্চে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে ২৫%, জুনে দ্বিগুণ হয়ে ৫০% । আগস্টে তালিকায় ঢুকল ফ্রিজ, আসবাবপত্র, নির্মাণসামগ্রী। তামা: আগস্ট ১ থেকে ৫০% । গাড়ি ও যন্ত্রাংশ: ২৫% শুল্ক, তবে ইউএসএমসিএ-সঙ্গত দেশগুলো বাদ। রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ: এপ্রিল থেকে ১০% সর্বজনীন শুল্ক, আগস্টে বাড়ল ৫০% পর্যন্ত। চীন, কানাডা, মেক্সিকো—সবাই পাল্টা শুল্ক বসিয়ে দিল। কিন্তু নাটকের টুইস্ট এলো ৩০ আগস্টে। মার্কিন আপিল কোর্ট ঘোষণা দিল, এই শুল্কগুলোর অনেকগুলো আইনবিরুদ্ধ। অর্থাৎ, প্রেসিডেন্টের ঘোষিত শুল্কগুলো এক ধরনের অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র হয়ে গেল। তবে আপিল চলতে থাকায় অক্টোবর পর্যন্ত এগুলো কার্যকর থাকবে।

টুইটার-সুলভ মন্তব্য “ইস্পাতের দাম এত বেড়েছে যে, এখনকার ফ্রিজ কেনার চেয়ে পুরনো ফ্রিজে বরফ জমিয়ে রাখা সস্তা’। ট্রাম্পের ট্যারিফ—Buy American or Cry American।

স্বাস্থ্য আর শুল্ক—দুটো একই সিনেমার দুই দৃশ্য। এখানে আসল কাহিনি হলো, একদিকে প্রেসিডেন্টের শিরার সমস্যা অন্যদিকে তার শুল্ক ঝড়; দুটোই মানুষের মাথা ঘুরিয়ে দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট বলছেন: আমার স্বাস্থ্য চমৎকার আর আমাদের অর্থনীতি হবে আরও শক্তিশালী। কিন্তু ভোটারদের অবস্থা: গরুর মাংসের দাম বেড়েছে, গাড়ির যন্ত্রাংশ দ্বিগুণ। অন্যদিকে প্রেসিডেন্টের হাতে আবার নতুন দাগ। অর্থাৎ, শরীর আর অর্থনীতি—দুটোই এখন ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সির মতো, রক্ত আটকে যাচ্ছে মাঝপথে।

এবার আগাম নির্বাচনের পূর্বাভাস
২০২৬ নির্বাচনের জন্য স্বাস্থ্য নিয়ে: যতক্ষণ প্রেসিডেন্ট নিজে মাঠে গলফ খেলতে পারেন, ততক্ষণ গুজবের উত্তর পাওয়া যাবে সরাসরি ক্যামেরায়। শুল্ক: আদালতের রায় চূড়ান্ত হলে ট্রাম্পকে নতুন অর্থনৈতিক স্ট্র্যাটেজি আনতে হবে। ভোটার: জনগণ চাইবে দাম কম, চাকরি বেশি, প্রেসিডেন্ট সুস্থ।

“ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট এখনো বেঁচে আছেন, তবে ইস্পাত, তামা আর ফ্রিজের দামে সাধারণ মানুষ প্রায় মরেই যাচ্ছে। ” এবার সারমর্ম সিভিআই রোগ রাজনীতিকে মিমে ভরিয়ে দিয়েছে। শুল্কযুদ্ধ বাজারকে রিংয়ের ম্যাচে পরিণত করেছে। আর আমেরিকান জনগণ? তারা এখন নেটফ্লিক্সের পরিবর্তে হোয়াইট হাউস লাইভ স্ট্রিমেই বিনোদন খুঁজে পাচ্ছে।

একটু অন্যমাত্রায় লেখাটাকে উপস্থাপনের চেষ্টা করলাম। এবারের গরমে আমরা ক্যালিফোর্নিয়ান মানুষেরা পুড়ছি। সাথে রাজনৈতিক চাপে শুল্কের রাজনৈতিক প্রভাবে অনেকেরই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে। চার পাশে অনেক গুজবের মধ্যে প্রতি মুহূর্তে নতুন কিছু গুজব শোনার অপেক্ষায় প্রতিটি প্রহর। নতুন কিছু হলে সামনের দিনগুলোতে লিখব আশা করছি। একজন গর্বিত আমেরিকান হিসেবে এতটুকুই বলতে পারি, তবু আমেরিকার জয় হোক। আমেরিকার নীতি আদর্শ হোক সকল গুজব ছাপিয়ে আসন্ন সমৃদ্ধ বিশ্বের অপার সম্ভাবনার বার্তা।

সূত্র:
1.    UC Davis Health, “President Trump diagnosed with CVI” (2025/07)।
2.    The Guardian, US tariffs live updates (2025/08/29)।
3.    NYMag, Trump health & bruises (2025)।
4.    Wikipedia, Tariffs in the Second Trump Administration (2025)।
5.    WSJ, Trump CVI diagnosis (2025)।
6.    The Daily Beast, Trump social media spree (2025)।
7.    US Appeals Court ruling, August 30, 2025 (Guardian Live)।

মাহবুব আহমেদ: লেখক, উদ্যোক্তা ও মানবাধিকার কর্মী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।