ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ আশ্বিন ১৪৩২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৭

মুক্তমত

দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ

এম হুমায়ুন কবির। সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:০০, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫
দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ এম হুমায়ুন কবির

সাম্প্রতিক কালে দক্ষিণ এশিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক কিছু পরিবর্তনের ধারা সূচিত হচ্ছে বলে আমার ধারণা। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় আমরা দেখেছি প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং গোষ্ঠীস্বার্থ সংরক্ষণের মতো অভিযোগ নিয়ে একটি জনবিদ্রোহ সংগঠিত হয়েছে এবং তার মধ্য দিয়ে তৎকালীন রাজাপক্ষে গোষ্ঠী ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়েছে।

এবং তারা বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় এসেছে। পরবর্তী সময়ে তাদের নেতৃত্বের ম্যাচিউরিটির কারণে শ্রীলঙ্কা একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক অবস্থাটাকে পুনর্গঠন করে মোটামুটি একটি স্থিতিশীল জায়গায় এসেছে।

আমাদের বাংলাদেশেও গত বছর এমন ঘটনা ঘটল। বাংলাদেশের ঘটনাটা একটু গভীর। বাংলাদেশেও যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন তাঁদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অদক্ষতা ছিল। কিন্তু তার থেকেও যে বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে এসেছিল সেটা হচ্ছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং মানবাধিকারের ব্যাপক লঙ্ঘন হওয়ার ফলে জনগণের মধ্যে একটি বিক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল।

যেটা আমাদের তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে শেষ পর্যন্ত একটি গণ-অভ্যুত্থানে রূপ লাভ করে। বাংলাদেশে তৎকালীন সরকার দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা নিয়ে বিরোধী দল, মিডিয়া, নাগরিক সমাজের যেকোনো প্রতিরোধকে অগ্রাহ্য করে তাদের এই শাসনব্যবস্থা চালিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানে শুধু পতনই ঘটল না, তাদের পালিয়ে যাওয়া লাগল। পার্থক্য হচ্ছে—তৎকালীন সরকারের দীর্ঘমেয়াদি শাসন ও গণ-অভ্যুত্থানের মুখে সরকারপ্রধানের পালিয়ে যাওয়ার ফলে আমাদের সরকারি ব্যবস্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যেটা শ্রীলঙ্কায় হয়নি।

ফলে যেটা হয়েছে, বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার  দায়িত্ব নিলেও এখনো পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর্মক্ষম বা সক্ষমভাবে ব্যবহার করতে পারেনি। এ ছাড়া বিগত সরকারের বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেও বিষয়টা একটু দীর্ঘমেয়াদি। ফলে এ নিয়েও মানুষের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি আছে যে শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে বিচার সম্পূর্ণ হবে কি না। অন্যদিকে সরকার নানা রকম সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো এখনো চলমান। এর মধ্যেই ২০২৬ সালের নির্বাচন-পরবর্তী অবস্থা নিয়েও একরকম অনিশ্চয়তা আছে।

এখনো বাংলাদেশ একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব অবস্থানেই আছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই সপ্তাহ দুয়েক আগে নেপালের গণ-অভ্যুত্থান দেখলাম আমরা। নেপালে গণ-অভ্যুত্থানের প্রধান নিয়ামকগুলোর মধ্যে ছিল—বেকারত্ব, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, গোষ্ঠীচক্র। এখানে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সেখানে মাওবাদী আন্দোলন হয়েছিল। একটি সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। আমার ধারণা, সেই পরিবর্তনের এক ধরনের ধারাবাহিকতাই গত মাসে আমরা লক্ষ করলাম। যেহেতু নেপালে মাওবাদী আন্দোলনের ফলে বড় ধরনের সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটি কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল সেই কারণে তরুণ প্রজন্মের বিক্ষোভের পরও আমার ধারণা সেই কাঠামোটা টিকে গেছে। এরই মধ্যে তাদের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী ছয় মাসের মধ্যেই নির্বাচন হয়ে যাবে বলে সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। নেপালের প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু এখনো দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে ট্রানজেকশনটা হয়তো অপেক্ষাকৃত সহজে হতে পারে। যদিও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের অবস্থান নিয়ে এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে।

এবার আসি, কেন এই ঘটনাগুলো ঘটছে এবং তার ভূ-রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কি রকম হতে পারে। এই তিন দেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে সুশাসনের ঘাটতি আছে। দক্ষিণ এশিয়ার কোনো সরকারই বলতে পারবে না যে তারা জনগণের প্রত্যাশার ওপর ভিত্তি করে বৈধতা লাভ করে। শুধু নির্বাচন না, নির্বাচনের পরও মানুষের প্রত্যাশা কিন্তু থাকে। দুই নির্বাচনের মাঝামাঝি সময়ে এই অঞ্চলের কোনো সরকারই জনপ্রত্যাশার আলোকে শাসনকাঠামো পরিচালনা করছে বলে মনে হয় না। সে কারণে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের সরকারের সঙ্গে জনগণের এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা আছে। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপালের ঘটনাগুলো সরকার ও জনগণের মধ্যকার বিচ্ছিন্নতা যে আসলে কত বড় সেটার একটা সাক্ষাৎ প্রমাণ দিয়ে গেল।

বাংলাদেশে এক বছর আগেও আমরা শুনেছি কর্মসংস্থান ৬-৭ শতাংশ; কিন্তু ১০ বছর ধরে কর্মসংস্থান তেমনভাবে বাড়ছে না। ভারত চার ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি দেশ হয়ে যাচ্ছে; কিন্তু সেখানেও গভীরভাবে কর্মসংস্থানের ঘাটতি আছে। নেপাল, শ্রীলঙ্কার অবস্থাও একই। এই দেশগুলোতে তরুণ প্রজন্ম তাদের কর্মসংস্থান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে সামনের দিকে কিছু দেখতে পারছে না। কিন্তু দেখতে পারছে যে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে একটা গোষ্ঠী বৈভব নিয়ে শুধু টিকেই আছে না, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বও তারাই দিচ্ছে। বাংলাদেশ বলেন, নেপাল বলেন, শ্রীলঙ্কা বলেন—সব দেশেই কিন্তু এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্ম ও সাধারণ জনগণ দাঁড়িয়েছে, গোষ্ঠীতন্ত্রের বিরুদ্ধেও দাঁড়িয়েছে তারা।

এখানে দুর্নীতির বিষয়টা খেয়াল করতে হবে। এই দুর্নীতি শুধু সরকার নয়, দেশগুলোর সব রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে আছে। বিভিন্ন দলে, নানা নামে তারা সবাই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখানে আমলারা সম্পৃক্ত হয়েছে, ব্যবসায়ীরা হয়েছে। কাজেই এই জায়গাটা অর্থাৎ দুর্নীতিও মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তুলছে। সমাজে যখন বৈষম্য থাকে, মানুষ যখন দেখতে পারছে যে তার ভবিষ্যৎ নেই, কর্মসংস্থান নেই, সুযোগ নেই; কিন্তু অন্যেরা সমাজের বেআইনি বা ভিন্ন পথে বিত্তবৈভব অর্জন করে সমাজে কর্তৃত্ব বা নেতৃত্ব দিচ্ছে, তখনই বিক্ষোভটা তৈরি হয়। নেপালেও সেটা হয়েছে বলে আমরা দেখেছি। ‘নেপো কিড’ বলে একটি শব্দ আমরা সেখানে শুনেছি, অর্থাৎ ধনী ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সন্তান-সন্ততি; যারা উৎকটভাবে তাদের সম্পদ ও ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। এর বিরুদ্ধে কিন্তু মানুষ রাস্তায় নেমেছে এবং এই আন্দোলনটা তৈরি হয়েছিল। কাজেই এটাও খেয়াল করতে হবে এখানে শুধু সরকার নয়, রাজনৈতিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও কিন্তু মানুষ দাঁড়াচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে ভারতের দিকে যদি তাকাই, তাহলে প্রশ্ন আসে যে বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি ভারতে হবে কি না! সেখানেও বৈষম্য আছে, ভিন্নমতের ওপর চাপ আছে; কিন্তু দুর্নীতির যে কথাটা বলা হচ্ছে সেটা ততটা জোড়ালো নয়। ভারতের শাসনকাঠামোতে দুর্নীতির অভিযোগটা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। যদিও আদানির কথা আসছে, কিন্তু ভারত সরকার বা তার আশপাশের লোকজন দুর্নীতিগ্রস্ত—এ অভিযোগ খুব একটা শুনি না।

শ্রীলঙ্কা বলেন, বাংলাদেশ বলেন বা নেপাল বলেন—এই দেশগুলো ছোট। কাজেই এখানে রাজধানীতে পৌঁছে যাওয়া খুব সহজ হয় সেটা কলম্বো বলেন, ঢাকা বলেন আর কাঠমাণ্ডু বলেন। কিন্তু ভারতের মতো একটা দেশে এ রকম একটা জায়গায় মানুষ গিয়ে তার ক্ষোভ ঢালবে, সেটা সহজ নয়। সেই কারণে আমার ধারণা ভারতে সাধারণ মানুষ নানা রকম বিক্ষোভে থাকলেও এ ধরনের বিস্ফোরণের সম্ভাবনা দেখছি না। তবে ভবিষ্যতের কথা তো আর বলা যাবে না।

তবে ভূ-রাজনীতির বিষয়টি ভারতের জন্য আশঙ্কার কারণ বলাবাহুল্য। একদিকে ভারতের চারদিকে অস্থিরতা। পাকিস্তানের সঙ্গে সে যুদ্ধ করছে, অন্যদিকে প্রতিবেশী নেপালে পরিবর্তন হচ্ছে, বাংলাদেশ একটু নতুন ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কায় পরিবর্তন হয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের অস্থিরতা ভারতের জন্য একটা চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। একেক দেশের জন্য একেক রকম রেসপন্স তারা দিচ্ছে। যেমন ধরুন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তারা টানটান, বাংলাদেশের এই সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের সহযোগিতায় যেতে আগ্রহী না, আগামী দিনের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কথা বলবে। এগুলো প্রকাশ্যেই বলছে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার দেখেছি কয়েক মাস আগেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারত টানটান অবস্থায় রয়েছে, নেপালের ক্ষেত্রে তারা একটু নরম সুর দিচ্ছে দু-এক দিন ধরে, শ্রীলঙ্কার ব্যাপারে তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকলেও এখন আবার সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী।

অন্যদিকে, আমার ধারণা, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যে সম্পর্ক ছিল চীন সেটা শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের পরও বজায় রেখেছে। কিন্তু পরিবর্তিত বিশ্ব ভূ-রাজনীতির কারণে আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও চীন এক ধরনের সমন্বয় করে কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। যে কারণে আমার ধারণা, শ্রীলঙ্কায় ভারত-চীনের সহাবস্থানের একটা জায়গা তৈরি হয়ে আছে। আগে যেটা চীনের পক্ষে ছিল সেটা এখন মোটামুটি ভারত-চীনের সমমাত্রায়। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের যে স্বাভাবিক সম্পর্ক সেই সম্পর্কই আছে। চীনারা তাদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখছে। নেপালের ক্ষেত্রে আমার ধারণা, আন্দোলনের আগের যে সরকার সেটা চীনের কাছাকাছি ছিল, যা ভারতের জন্য খানিকটা অস্বস্তির বিষয় ছিল। এখন আশা করছি, নেপালের সঙ্গে তাদের সম্পর্কটা আবার স্বাভাবিক জায়গায় আসছে। কিন্তু আমি যেটুকু ওখানকার পত্রপত্রিকা দেখছি তাতে মনে হয়, তরুণ প্রজন্ম কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খুব কাছাকাছি আনার ব্যাপারে আগ্রহী। তার কারণ হলো, আন্দোলনটা যখন চলছিল তখন ভারতীয় মিডিয়া বা যাঁরা বিশেষজ্ঞ আছেন তাঁরা এই আন্দোলনকে রাজাকে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করার একটি উদ্যোগ বলে প্রচার করেন। ফলে নেপালি জনগণের মধ্যে একটা বড় অসন্তোষ তৈরি হয়েছে এবং সেই অসন্তোষটা ভারতের জন্য সুবিধাজনক নয়। এখন নেপালে নতুন সরকার এলে তারা চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে কি না সেটা দেখার বিষয়।

এটা বলে রাখা দরকার, নেপালের সঙ্গে ভারত-চীন সম্পর্ক দেখা গেলেও ওখানে মার্কিনিদের কিন্তু বড় উপস্থিতি আছে। এখানে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে বলে আমার ধারণা। একটা হচ্ছে সেখানে ভারত তার ট্র্যাডিশনাল আগ্রহ দেখিয়ে আসছে, চীন সাম্প্রতিককালে বেশ ভালোভাবেই নেপালের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিয়ে এগিয়েছে। আগামী নির্বাচনের পরে বোঝা যাবে যে এই ত্রিমুখী লড়াইয়ে নেপাল কি অবস্থান নেয়।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পশ্চিমাজগৎ, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বাভাবিকভাবেই অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়াকে সমর্থন দিচ্ছে, অর্থনৈতিকভাবে তারা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তারা আগামী নির্বাচনের ব্যাপারেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সামগ্রিক বিচারে সামরিক ক্ষেত্রেও আমরা দেখতে পাচ্ছি তাদের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ছে। কাজেই বাংলাদেশের সঙ্গে এখন ভারতের অনুপস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন—উভয় পক্ষের সঙ্গেই বাংলাদেশের সম্পর্কটা একটু গভীরতা লাভ করেছে। তবে বাংলাদেশ এমন একটা দেশ, যার ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ভাবনা এবং আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির বিষয়টি মনে রাখলে আমার ধারণা চীন-ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপানসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। এখানে কোনো এক পক্ষকে বাদ দিয়ে, অন্য পক্ষে ঢুকে পড়াটা আমাদের ভালো নীতিগত অবস্থান হবে না বলে মনে হয়। সবার সঙ্গেই কাজ করতে হবে এবং সেখানে পেশাগত কূটনৈতিক ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব খুব বেশি। একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরেও আমাদের বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মোটাদাগে সহমত প্রয়োজন। কারণ আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহমত না থাকার ফলে তারাই বিভিন্ন বিদেশি শক্তিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দাওয়াত দিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে আনে এবং সেটাই আমাদের অভ্যন্তরীণ জটিলতার কারণ হিসেবে দেখা দেয়, যা সাম্প্রতিককালে আমরা ভালো করেই দেখেছি।

আসলে এশিয়া অঞ্চলটাই হবে আগামী দিনের বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু। এখানে চীন ১ নম্বর অর্থনীতি, ২ নম্বরে ভারত, জাপান ও কোরিয়া আছে। আগামী অর্ধশতক ধরে এই অঞ্চলটা অর্থনৈতিক আকর্ষণের জায়গা হিসেবে থাকবে। খুব সংগত কারণেই এই আকর্ষণের জন্য এখানকার দেশগুলো যেমন একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, বাইরের শক্তিগুলোও সেখানেও আসবে। আমাদের মতো দেশে যারা আছি, আমাদের কাজ হবে এই অঞ্চলের যে প্রবৃদ্ধি সেটার ফসল ঘরে তোলার জন্য অভ্যন্তরীণভাবে তৈরি হওয়া এবং সবার সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে আমাদের জাতীয় স্বার্থের নিরিখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।  

(অনুলিখন)

 লেখক : কূটনীতিক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।