ঢাকা, রবিবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩২, ২২ জুন ২০২৫, ২৫ জিলহজ ১৪৪৬

মুক্তমত

স্থিতিশীলতা নিশ্চিত না হলে অর্থপাচার বন্ধ হবে না

ড. ফাহমিদা খাতুন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:৪৬, জুন ২১, ২০২৫
স্থিতিশীলতা নিশ্চিত না হলে অর্থপাচার বন্ধ হবে না ড. ফাহমিদা খাতুন

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রিপোর্টগুলো দেখে বোঝা যায় যে, বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের প্রবণতা বাড়ছে। এর পেছনে প্রধানত দুটি কারণ রয়েছে।

প্রথমত, দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থপাচারের প্রবণতা। যারা অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করে, তারা সেটি দেশের ভেতরে রাখলে জবাবদিহির ভয় থাকে এবং অর্থনৈতিক গোয়েন্দা সংস্থা, দুদক বা গণমাধ্যমের নজরে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

অথচ বিদেশে, বিশেষ করে কিছু নির্দিষ্ট দেশে, ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গোপনীয়তা এতটাই বেশি যে তারা সেই টাকা সহজে সেখানে পাঠিয়ে নিরাপদে রাখে এবং ভোগ করে। সেখানে আয়ের উৎস সম্পর্কে বিশেষ প্রশ্ন না থাকায় তারা জবাবদিহির বাইরে থেকে যায়।

দ্বিতীয়ত, অনেক নাগরিক বৈধভাবে অর্থ উপার্জন করলেও দেশে নিরাপদ বোধ করেন না। রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্বল আইনের শাসন, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা এবং নীতিনির্ধারকদের প্রতি আস্থার অভাব এসব মিলিয়ে একটি অনিরাপদ পরিবেশ তৈরি করে। ফলে মানুষ বিদেশে সম্পদ স্থানান্তর করে নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে চায়।

২০২৪ সালে সুইস ব্যাংকে অর্থপাচার বাড়ার কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতার অন্যতম বড় কারণ হতে পারে। ২০২৪ সালের একতরফা নির্বাচনের আগে ও পরে তৎকালীন সরকারের এবং দলের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেকে হয়তো দেশ থেকে অর্থ সরিয়ে নিয়েছে।

বিশেষ করে ২০২৪ সালের একতরফা নির্বাচন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দমন-পীড়ন এবং পরবর্তী সময়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কা অনেকের মধ্যে অর্থ দেশ থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রবণতা হয়তো বাড়িয়ে দিয়েছে।

অর্থপাচার দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্রথমত, যেহেতু এই টাকার অনেকটাই দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত, তা দেশের উন্নয়ন প্রকল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা অবকাঠামোর মতো খাতে ব্যয় না হয়ে ব্যক্তিগত ভোগে চলে যায়। ফলে রাষ্ট্রের উৎপাদনশীল বিনিয়োগ কমে যায় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হয়।

দ্বিতীয়ত, এটি সামাজিক ও নৈতিক ক্ষয় ঘটায়। একজন ব্যক্তির অর্থ পাচার করে পার পাওয়া দেখে অন্যরাও একই পথ অনুসরণে উৎসাহিত হয়।

ফলে আইনের শাসনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা কমে যায়। এই সমস্যা মোকাবিলায় সরকারের সদিচ্ছাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কেবল বক্তৃতায় সদিচ্ছা প্রকাশ করলেই হবে না। এর সঙ্গে থাকতে হবে কঠোর, নিরপেক্ষ আইন প্রয়োগ। দুর্নীতিতে জড়িত রাজনীতিবিদ, আমলা বা ব্যবসায়ী যেই হোক, তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বেছে বেছে কাউকে রেহাই দিয়ে কাউকে দোষী করার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।

তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত না করা পর্যন্ত অর্থপাচার পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। নিরাপত্তা, আস্থা ও ন্যায়বিচার ফিরলেই মানুষ দেশের ভেতরেই অর্থ রাখতে উৎসাহিত হবে।

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)।

সৌজন্যে কালের কণ্ঠ

এনডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।