ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

টিলা ধসে ৪ নারীর মৃত্যু: চা বাগানের অব্যবস্থাপনাকে দোষারোপ ক্ষতিগ্রস্তদের

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২২
টিলা ধসে  ৪ নারীর মৃত্যু: চা বাগানের অব্যবস্থাপনাকে দোষারোপ ক্ষতিগ্রস্তদের টিলা ধসে এখানেই প্রাণ হারিয়েছেন ৪ নারী চা শ্রমিক। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: শ্রীমঙ্গলের লাখাইছড়া চা বাগানে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই টিলা ধসে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসীরা। জন্মাষ্টামী উপলক্ষে চা বাগানে ঘর লেপার জন্য টিলার মাটি কাটতে গিয়ে শুক্রবার (১৯ আগস্ট) দুপুর মাটিচাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তারা।

দুর্ঘটনার একদিন পরও শনিবার (২০ আগস্ট) পুরো চা বাগানজুড়ে রয়েছে শোকের মাতম। মরদেহগুলো যার যার বাড়ি এবং আঙ্গিনায় রাখা হয়েছে শেষকৃত্য সম্পন্নের জন্য।

লাখাইছড়ার দুর্গম টিলা উঠে যতই সামনের দিকে আগানো হচ্ছিল, ততই স্বজনদের কান্নার শব্দ ভেসে আসছিল। প্রথমে পথে পড়ে রিনা ভূমিজের ঘর। তিনি তৃষাণ নামে ১১ মাসের একটি ছেলে রেখে মারা গেছেন। তার বাড়ির আঙ্গিনা জুড়ে চলছিল শোকের মাতম।

রিনা ভূমিজের মা শেফালি, বয়েসের ভারে কাবু। তার মেয়ে হারানোর কান্না যেন আজ (২০ আগস্ট) আর কিছুতেই থামছে না। তিনি আর্তনাদ করে বলছিলেন, আমার রিনারে, তুই কই গেলি মা। ফিরে আয় তাড়াতাড়ি। বাচ্চাটা তোরে খুঁজতেছে।

নিহত রিনা ভূমিজের মা শেফালির আহাজারি, পাশে ১১ মাসের সন্তান তৃষাণ- বাংলানিউজ

একই দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া অঞ্জনা ভূমিজ বাংলানিউজকে বলেন, তখন পৌঁনে ১২টার মতো বাজে, আমরা মোট ৭ জন নারী ছিলাম। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে ঘর লেপার জন্য মাটি সংগ্রহ করতে উড়িয়া টিলায় যাই। আমি সবার শেষে ছিলাম। আমি যখন গিয়ে পৌঁছি তখন আমাদের লাইনের দুই নারী বাচ্চা কাঁদছিল বলে মাটি না নিয়েই ফিরে যান।

তিনি আরও বলেন, ‘আমিসহ অন্য চারজন টিলার একটি গর্তে ঢুকে মাটি সংগ্রহ করছিলাম। এক পর্যায়ে পুরো টিলা আমাদের ওপর পড়ে যায়। আমি কিছুটা বাইরে থাকায় কোমর পর্যন্ত মাটি চাপা পড়ে। আমি তখন চিৎকার করতে থাকি। ’  

স্থানীয় নরেশ কুর্মী বলেন, যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেই জায়গার নাম উড়িয়া টিলা। ২০১৩ সালেও ওই টিলা ধসে ৫ জন মারা গিয়েছিল। ঘর লেপার জন্য ওই টিলার মাটি খুবই উন্নত, তাই অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে সেখান থেকে মাটি সংগ্রহ করেন। বাগান কর্তৃপক্ষ যদি টিলাটির আশপাশে শক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে মানুষ মাটি আনতে গিয়ে এভাবে প্রাণ হারাতো না।

তার কথায় সম্মতি জানিয়ে ক্ষোভের সঙ্গে পরেশ ভূমিজ বলেন, ‘আমাদের জীবনের কি কোনো দাম আছে? আমরা তো চা শ্রমিক!

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল সাত্তার বাংলানিউজকে বলেন, ওই এলাকাটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। চা শ্রমিকরা গরিব, তাদের পাকা বসতঘর নেই। ফলে মাটির ঘরে থাকেন। মাটির ঘর মাঝে মাঝে লেপন করতে ওই টিলার মাটি তারা বেশ ঝুঁকির নিয়ে সংগ্রহ করেন।  

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে লাখাইছড়া চা বাগানের সহকারি ব্যবস্থাপক সাদেকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সব সময়ই শ্রমিকদের ‘উড়িয়া টিলা’ থেকে মাটি না কাটার জন্য বলে আসছি। কিন্তু তারা শোনে না। কাঁটাতারের বেড়া দিলে তারা নিচ দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ভূমিকা নেওয়া হবে।

>>> আরও পড়ুন: শ্রীমঙ্গলে চা বাগানের টিলা ধসে ৪ নারী শ্রমিকের মৃত্যু

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৭ ঘণ্টা, ২০ আগস্ট, ২০২২
বিবিবি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।