ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

৫০ বছর পরে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪২ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২২
৫০ বছর পরে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা! সাদা পাঞ্জাবি, লুঙ্গি আর মাথায় পাগড়ি পড়ে কনের বাড়ি যাচ্ছেন নুরুল ইসলাম

কুষ্টিয়া: “ঢাক-ঢোল-বাঁশি বাঁজিয়ে ব্যান্ড পার্টি নিয়ে বিয়ের আয়োজন। তাও আবার দীর্ঘ ৫০ বছর সংসার করার পর।

এ বিয়েতে দাওয়াত খেতে এসেছে মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনিরা, বেয়াই-বেয়ান সবাই। আত্মীয়-স্বজনদের পাশাপাশি এলাকার প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষও দাওয়াত পেয়েছেন বিয়েতে।  

সকাল থেকেই গ্রামবাসী এমন আয়োজন দেখতে বিয়ে বাড়িতে ভিড় করেন। বর সেজে বিয়ে করতে যাচ্ছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের কুন্টিয়ারচর এলাকার মৃত হোসেন মণ্ডলের ছেলে ৭৫ বছর বয়সী নুরুল ইসলাম। কনে পার্শ্ববর্তী মহিষাদাড়ি এলাকার মোবারক হোসেনের মেয়ে জুলেহার খাতুন। তার বয়স এখন ৬৯। ভ্যানে করে বরযাত্রী যায় কনের বাড়িতে।   

পাঁচ সন্তানের জনক-জননীর এমন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা আনন্দ দিয়েছে দুই পরিবারের লোকজন ও গ্রামবাসীকে। সাধারণ বিয়ের তুলনায় গ্রামবাসী নেচে গেয়ে বেশ আনন্দ করেছেন।

বর নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ১৯৭১ সালে তড়িঘড়ি করে জুলেহার খাতুন ও আমার বিয়ে হয়। আমি যখন অনেক ছোট, তখন আমার মা বলেছিলেন যে আমার ছেলেকে ঢোল পিটিয়ে, বাঁশি বাজিয়ে ১০০ বরযাত্রীসহ বিয়ে করাব। কিন্তু যুদ্ধের সময় এবং আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে সেটা করা সম্ভব হয়নি তখন।  

তিনি বলেন, ২০০২ সালে আমার মা মারা যান। তবে মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখি বিয়ের। মায়ের শখ পূরণের জন্য বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা করলাম। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা করার বিষয়টি আমার ছেলে-মেয়েদের বললে তারাও সাগ্রহে এতে সায় দেয়। ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিরা এ আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করেছে।  

নুরুল ইসলামের বড় বোন সুফিয়া খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতেই এ বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। এত বছর পরে ভাইয়ের বিয়ে খেলাম। অনেক খুশি আমরা সবাই।

সকাল থেকে আত্মিয়-স্বজনরা জড় হন বিয়ের বরযাত্রীতে যাওয়ার জন্য। গায়ে হলুদ, বিয়ের নাচ গান, বর সেজে ব্যান্ড পার্টি নিয়ে দুপুরে কনের বাড়িতে যায় ১০০ জনের বরযাত্রী।

নুরুল ইসলাম ও জুলেহার খাতুন দম্পতির তিন ছেলে ও দুই মেয়ের রয়েছে। রয়েছে নাতি-নাতনি, নাতজামাইও। তারাও এসেছিলেন বিয়েতে।

নুরুল ইসলামের নাতনি রুমি খাতুন ও নাতি রুহুল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অনেক খুশি। দাদা-দাদির বিয়ে খেলাম। অনেক মজা পেয়েছি। এ বয়সের বর-কনে দেখলাম। সবাই অনেক আনন্দ করেছে।

নুরুল ইসলামের দুই ছেলের শাশুড়িও ছিল বরযাত্রীতে। তারা জানান, বেয়াই-বেয়াইনের বিয়ে খেতে এসেছিলাম। আমরা অনেক আনন্দ করে গোসল করিয়ে বর সাজিয়ে দিয়েছি। বরযাত্রীতেও গিয়েছিলাম।

নুরুল ইসলামের ছেলে তারাচাঁদ মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, দাদির ইচ্ছা পূরণ করতে বাবা-মায়ের বিয়ের এ আনুষ্ঠানিকতা করেছি আমরা।  

নুরুল ইসলামের পুত্রবধূ আফরোজা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতাই আমরা সবাই মিলে আনন্দ করে শেষ করেছি।  

নুরুল ইসলামের জামাই জিয়ারুল ইসলাম জানান, শ্বশুর-শাশুড়ির বিয়ের দাওয়াত খেলাম। এটা বিরল ঘটনা। বিয়ের এতদিন পরে আনুষ্ঠানিকতা হলো, এলাকার অধিকাংশ মানুষ এখানে এসেছিল।

বিয়ের বাড়ির লোকজনের মতো খুশি এলাকাবাসীও। এ বয়সে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা দেখে অবাক অনেকেই।

জুলেহার খাতুন বাংলানিউজকে জানান, শাশুড়ির মান্নতের কারণে এত বছর পরে এ বিয়ের আয়োজন করেছে ছেলেরা। এতে আমরা সবাই খুশি।

বরের বাড়িতে সকালে খাসির মাংস সঙ্গে ভাত আর ডাল ছিল। কনের বাড়িতে ছিল গরুর মাংস, ভাত, সবজি আর দই।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২২
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।