ঢাকা: রাজধানীকে ১০টি জোনে ভাগ করে এলাকাভিত্তিক ও গ্রাহকভিত্তিকভাবে পানির নতুন দাম নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে ঢাকা ওয়াসা। প্রস্তাবে নিম্নবিত্তের জন্যে দাম কমছে ২.৫ টাকা, অন্যদিকে উচ্চবিত্তের বাড়ছে ২২ টাকা।
রোববার (১৭ জুলাই) রাজধানীর প্যান প্যসিফিক সোনারগাও হোটেলে এলাকা ভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণ বিষয়ক টেকনিক্যাল স্টাডির (কারিগরি গবেষণা) ফলাফল শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসা জানায়, বর্তমানে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ঢাকা ওয়াসার প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। আর বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য ৪২ টাকা। ওয়াসার বর্তমানে এক হাজার লিটার পানি উৎপাদনে ব্যয় হয় ২৫ থেকে ২৬ টাকা।
প্রস্তাবিত দামের বিষয়ে গ্রাহক পর্যায়ে আরও আলোচনা করার পরে দাম পুনর্নিধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা ওয়াসা।
প্রস্তাবনা অনুযায়ী, উচ্চবিত্তের আবাসিক প্রাহকদের জন্য প্রতি এক হাজার লিটার পানির জন্য দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি হাজার লিটারে উচ্চবিত্তদের জন্য দাম বাড়ছে ২২ টাকা ৩২ টাকা। ওয়াসার তথ্যমতে নগরে ওয়াসার উচ্চবিত্ত গ্রাহক শূণ্য দশমিক ৮০ শতাংশ।
উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ টাকা ২৫ পয়সা।
উৎপাদন মূল্যে পানি পাবে রাজধানীর মধ্যবিত্ত মানুষ। দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ টাকা। যা আগের দামের চাইতে ৯ টাকা ৮২ পয়সা বেশি। আর নগরে ওয়াসার মধ্যবিত্ত গ্রাহক ৪ শতাংশ।
নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য দাম বাড়ছে ৩ টাকা ৫৭ পয়সা। প্রস্তাবিত দাম ১৮ টাকা ৭৫ পয়সা। আর রাজধানীতে ওয়াসার নিম্নমধ্যবিত্ত গ্রাহকই সর্বোচ্চ। যা শতকরা ৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ।
নিম্নআয়ের মানুষ একই পরিমাণ পানির জন্য বিল দেবেন ১২ টাকা ৫০ পয়সা। ফলে তাদের প্রতি হাজার লিটারে পানির দাম কমছে ২ টাকা ৬৮ পয়সা।
ওয়াসার সাড়ে ১১ শতাংশ বাণিজ্যিক গ্রাহকরা বর্তমানে প্রতি হাজার লিটার পানির জন্য ৪২ টাকা পরিশোধ করছেন। প্রস্তাবিত প্রক্রিয়া অনুযায়ী সেই বিল বাড়বে ৮ টাকা। ৪২ টাকা দাড়াচ্ছে ৫০ টাকা।
তবে উৎপাদন মূল্যের সমান, অর্থাৎ ২৫ টাকা হারে বিল পরিশোধ করবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
ঢাকায় কত ধরনের গ্রাহক রয়েছে, বিশ্বে কোন কোন পদ্ধতি চালু আছে তা নিরীক্ষা করে পানির দাম নির্ধারণের একটি প্রস্তাবনা তৈরী করেছে ঢাকা ওয়াসা। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ঠ আইনও আমলে নিয়েছে ওয়াসা কতৃপক্ষ।
এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণে ঢাকাকে ১০টি জোনে ভাগ করা হয়েছে৷ এক্ষেত্রে একেক জোনে একেক ধরণের দাম হতে পারে।
ওয়াসা চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা বলেন, ঢাকা ওয়াসা বাণিজ্যিকভাবে চলবে। বর্তমানে উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রয় মূল্য কম। এ মূল্য বাড়াতে হবে। ঢাকা ওয়াসাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে ভূর্তুকি বাদ দিয়ে দাম সমন্বয় করতে হবে।
ঢাকা ওয়াসা বিএনপির সময় অন্ধকার যুগে ছিল উল্লেখ করে ওয়াসা চেয়ারম্যান বলেন, একজন এমপিকে দৌঁড়ানি দিতে দেখেছি জনগণকে। সেসময় ওয়াসার পানির পাম্প রক্ষা করতে সেনাবাহিনী নিয়োগ দিতে হয়েছিল। এমনকি আওয়ামী লীগ যখন ২০০৯ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসে তখনও সেনাবাহিনী নিয়োগ দিতে হয়েছে।
আগে ঢাকা ওয়াসার এমডি ওয়াসা এ্যাক্ট অনুযায়ী নিয়োগ হতো না উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, তাসনীম এ খান ২০০৯ সালে প্রথম নিয়োগ পেয়েছেন। তারপর ‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা কর্মসূচি’ নেওয়া হয়। ঢাকা ওয়াসাকে ডিজিটাল ওয়াসা করা হয়েছে যেন মিটার রিডাররা উল্টাপাল্টা বিল করতে না পারে।
ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বলেন, আন্ডার ওয়াটার বাদ দিতে ওয়াসা কাজ করছে। এখনও পারিনি এটা প্রক্রিয়াধীন আছে।
তিনি আরও বলেন, ৫০ কোটি লিটার পানি অপচয় হয় ঢাকা ওয়াসার। ২০ লাখ মানুষকে পানি দিতে পারতাম, পানির দামও কম হতো। অপচয় কিভাবে কমানো যায় সেটা নিয়ে কাজ করবে ওয়াসা।
এসময় ওয়াসা এমডি পানি নিয়ে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ওয়াসা লোকসান দেয়। সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে এজন্য। অথচ যাদের সক্ষমতা আছে তারাই ঢাকা থাকে। এজন্য কৃষকদের ভুর্তকি দেওয়া হলেও যাদের সক্ষমতা আছে তাদের দেওয়া যাবে না।
পানির দাম ১ হাজার লিটারে ৫ টাকা বাড়ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ৫ জনের পরিবারে ৫০ টাকার চেয়ে বাড়ে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০, জুলাই ১৭, ২০২২
এনবি/এসএ
