ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

কোরবানির সরঞ্জাম প্রস্তুতে ব্যস্ত কামারশালা

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০২ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২২
কোরবানির সরঞ্জাম প্রস্তুতে ব্যস্ত কামারশালা

বগুড়া: ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কিছুটা ব্যস্ত শহর ও গ্রামাঞ্চলের কামারশালাগুলো। তবে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কামারশিল্প প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছে।

সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। তবুও বছরের এ সময়টায় শানের ঘষায় ও টুং টাং শব্দে মুখরিত থাকে কামারশালা।

বুধবার (০৬ জুলাই) বগুড়া শহরের বনানী, কারবালা, কলোনি বেজোড়া ব্রিজ, গন্ডগ্রাম, মাদলাসহ কয়েকটি এলাকার কামারশালা ঘুরে কামার শিল্পীদের কর্মযজ্ঞতার এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাতাস বা হাওয়া উৎপাদনের যন্ত্রটা (ভাঁতি) পাশেই রাখা। সঙ্গে বাঁশের লাঠির সামনে মাথার সঙ্গে লোহার শিকল বাঁধা। শিকলে বাঁধা বাঁশের লাঠিটা টানাটানি করা হয়। সঙ্গে ভাঁতি (হাওয়ার ঢোপ) ফুসফাস করতে থাকে। ভাঁতির মুখে লাগানো পাইপ দিয়ে বাতাস বা হাওয়া বেরিয়ে আসে। পাইপের মুখের ওপর স্তুপ আকারে কয়লা রাখা থাকে। লোহার টুকরো কয়লায় ঢেকে দেওয়া হয়। অবিরাম বাতাস নির্গমনে কয়লায় সৃষ্টি হয় গণগণে আগুন। একটা সময় লোহার টুকরোগুলো লাল টক টকে বর্ণ ধারণ করে। তখন কয়লা সরিয়ে লোহার টুকরোগুলো বাইরে আনা হয়। এরপর শুরু হয় কামার শিল্পীদের নিপুণ হাতের কারিগরি কৌশল। সময়ের ব্যবধানে আস্ত লোহার টুকরোগুলো ব্যবহার উপযোগী একেকটি আকর্ষণীয় অস্ত্রে পরিণত হয়।

প্রতি বছর ঈদুল আজহা আসার আগের এক থেকে দেড় মাস কামারশালায় ব্যস্ততা দেখা যায়। এবারো তার ব্যতিক্রম না। আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে কামারপাড়ার কামারশালারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। বছরের ১১ মাস কামারশালায় তেমন একটা কাজ থাকে না বললেই চলে। এ কারণে জীবিকার তাগিদে অনেকেই এ পেশা বদলাতে বাধ্য হয়েছেন বা হচ্ছেন। আবার অন্য কোনো পেশার কাজ জানা না থাকায় বেকার হয়ে পড়ছে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই।

এদিকে কোরবানির পশু জবাইয়ের কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে হবে। অর্ডারের কাজ ছাড়া বাকি জিনিসগুলো আগে বানানোর কাজ শেষ করতে না পারলে পুরোটা বিক্রি করা যাবে না। এতে তৈরি করা জিনিসপত্র আটকে যাওয়ার ভয় থাকে। আর এমনটা হলেই মন্দার যুগে তাদের লোকসান গুনতে হবে।

সময় যতই ঘনিয়ে আসছে দম ফেলার ফুসরত নেই কামার শিল্পীদের। শানের ঘসায় শানিত কামারশালার অস্ত্র, কোরবানির পশু জবাই চামড়া ছাড়ানো, মাংস-হাঁড় কাটাকাটির ছোট-বড় ছুরি, দা, বটিসহ নানা ধরনের অস্ত্র তৈরিতে শেষ মুহূর্তটা পার করছেন এ পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এভাবেই যে কোনো জিনিস তৈরির প্রক্রিয়া পুরোপুরি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কাজ চলে কামারশালায়। পরে কাক্ষিত জিনিসটি তৈরি হওয়ার পর তা ধার দেওয়া হয়। শানের ঘষায় শানিত হয় সেই কাক্ষিত জিনিসটি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখন প্রত্যেকটি কামারশালায় টুং টাং শব্দে মুখরিত।

নরোত্তম, বিশ্বজিৎ, রমেস, আনন্দসহ একাধিক কামারশিল্পী বাংলানিউজকে জানান, ঈদুল আজহা আসন্ন। হাতেও সময় সীমিত। এরমধ্যেই ক্রেতাদের চাহিদামতো পশু কাটার অস্ত্র তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে হবে। তবে যুগের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় তাদের কাজের পরিধি কমে এসেছে। এ কারণে হাতে শুধু সামান্য কাজ জুটেছে।

তারা বলেন, মানুষ এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পরেছে। এ কারণে তাদের তৈরি পণ্যের ওপর মানুষের চাহিদা অনেক কমে গেছে। বছরের বেশির ভাগ সময়ই তাদের পণ্য খুব কম কেনাবেচা হয়। তবে প্রত্যেক ঈদুল আজহায় বেচাবিক্রি ভালো হয় বলে যোগ করেন কোনো কোনো কামার শিল্পী।

তারা আরও বলেন, ঈদের আগের দিন দুুপুরের মধ্যে কোরবানির পশু জবাইয়ের কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে হবে এবং সেগুলোর ডেলিভারি দিতে হবে৷

যত দিন যাচ্ছে আস্তে আস্তে এ শিল্প থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন পেশা বেছে নিচ্ছেন কামার শিল্পীরা। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কামারশিল্প প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছে। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। গত পাঁচ বছর আগেও কামার শিল্পীরা ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে যে কাজগুলো বা ওর্ডার পেতেন এ বছর তার ২০ ভাগও নেই বলেও সংশ্লিষ্ট অনেকেই মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০২ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০২২
কেইউএ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।